কুরআন মজিদ ও মানুষের মগজ


ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা মানুষের মগজ সম্পর্কে লেখে যে, এই মগজের এমন বেশি সম্ভাবনা রয়েছে, যা একজন মানুষ তার জীবনভর যা ব্যবহার করতে পারবে তারও বেশি। (খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা- ৯৯৮)। বলা হয়ে থাকে যে মানুষের মগজ জ্ঞান ও স্মৃতির যেকোনো ভার বহন করতে সক্ষম এবং তা এখন যা ব্যবহার করছে তারও বিলিয়ন গুণ বেশি! বিবর্তনের মাধ্যমেই যদি মানুষের মগজের এই অবস্থা হতো, তাহলে এই বাড়তি শক্তি আসত না; যা প্রয়োজন, যতটুকু প্রয়োজন বিবর্তনের মাধ্যমে শুধু ততটুকুই আসত। একজন গবেষক লেখেন, ‘আসলে এটা হলো একমাত্র এমন একটি অংশ যা মানুষ জানে না কিভাবে সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে হয়, এটাকে আমরা কিভাবে বিবর্তনবাদের সেই মতবাদের সাথে খাপ খাওয়াব, যাতে বলা হয়েছে যে, প্রাকৃতিক নির্বাচন ছোট ছোট ধাপে অগ্রসর হয়, যা এর বহনকারীকে প্রদান করা হয় কম কম করে; তবে প্রয়োজনীয় সুবিধাসহ মানুষের মগজের গঠন এখনো বিবর্তনের সবচেয়ে বড় অজ্ঞেয় বিষয়।’ (দ্য ব্রেনঃ দ্য লাস্ট ফ্রন্টিয়ার, পৃষ্ঠা-৫৯, ৬৯)। বিবর্তন পদ্ধতি কোনো সময়ই মানুষের মগজের বাড়তি ক্ষমতা তৈরি করবে না ও বংশপরম্পরায় সামনে নিয়ে যাবে না।

বৈজ্ঞানিক কার্ল সাগান আশ্চর্য হয়ে বলেছেন, মানুষের মগজে বিশ মিলিয়ন (দুই কোটি) গ্রন্থের তথ্য ভর্তি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘মগজ হলো ছোট স্থানে বিরাট এলাকা।’ (কসমস, পৃষ্ঠা ২৭৮)। আর এই ছোট্ট স্থানে কী যে হয় তা আশ্চর্য ব্যাপার। ধরুন, একজন যোগ্য কারি কুরআন মজিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তেলাওয়াত করছেন মাহফিলে। ধরুন, তা হলো সূরা আর রাহমান। এ সময় তার মগজে কুরআনের শব্দ, সঠিক উচ্চারণ, সুর, ধ্বনি, অর্থ সব তার মনে এসে ভিড় করছে। তার গলার ওঠানামার জন্য শ্রুতিমধুর হয়ে পড়ছে কেরাআত। কারির মন-মগজকে সব দিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে। তার মগজের ভেতরে নানারকম অ্যাকশনচলছে। যদি কোনো শব্দ উচ্চারণে সামান্যতম অশুদ্ধ হচ্ছে, মগজ তাকে হুঁশিয়ারি সঙ্কেত প্রদান করছে। কোথায় স্বর উঁচু, স্বর নিচু করতে হবে, কোথায় বিরতি হবে তা মগজ তাকে অলক্ষে জানিয়ে দিচ্ছে। এই যে কারিয়ানা কৃতিত্ব, তা কারির বহু বছরের চেষ্টায় তার মগজে কম্পিউটারের প্রোগ্রামের মতো আবদ্ধ হয়ে গেছে। আর এসব এই জন্য সম্ভব ছিল যে, তাকে আল্লাহ যে মগজ দিয়েছেন, অর্থাৎ মানুষকে যে মগজ তিনি দিয়েছেন তার যোগ্যতা রয়েছে কুরআন মজিদের আয়াতগুলোকে কারিয়ানা স্টাইলে সুললিত কণ্ঠে উচ্চারণ করার। মানুষের মগজের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই এটি সম্ভব হয়েছে। এই কাজ কি বানরের মগজ, শিম্পাঞ্জির মগজ বা গাধার মগজ দ্বারা সম্পন্ন করা সম্ভব? হঁ্যা, তবে যে মানুষ তার মগজের এই সুপ্ত প্রতিভাকে ব্যবহার করে না, সে গাধা না হলেও গাধার মতো। কুরআন বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট জীব বধির ও মূক যারা কিছুই বোঝে না।’ (৮ সূরা আনফালঃ ২২ আয়াত)।

তাদের (পাপীদের) হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শুনে না এরা পশুর মতো, বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট।’ (৭ সূরা আরাফঃ ১৭৯ আয়াত)।

মানুষ ছাড়া অন্যান্য জীবের মগজে মানুষের মগজের মতো দক্ষতা নেই। বিবর্তনবাদীদের কাছে এই পার্থক্যের কোনো সুব্যাখ্যা নেই। কোনো কোনো প্রাণী বেশ কিছু আশ্চর্যজনক কাজ করতে পারে, তবে সেই পর্যন্ত। মানুষের মগজের অপরিমিত সম্ভাবনা রয়েছে, পশুর তা নেই। মানুষ তার মগজের দ্বারা অর্জিত জ্ঞানরাশিকে সঞ্চিত করে একে পিরামিডের মতো উঁচু করতে সক্ষম। অন্য জন্তুতে এটি নেই। জন্তুর জীবনে তার সব যোগ্যতা, প্রবৃত্তি, কর্মদক্ষতা আল্লাহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট। মানুষের রয়েছে কিছু পরিমাণ সুনির্দিষ্ট গুণাবলি, তবে তার সাথে আল্লাহ অপরিমিত সম্ভাবনা যোগ করে দিয়ে মানুষকে মহাবিশ্বে তার প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। ফেরেশতারাও আল্লাহর প্রতিনিধি নন, শুধু কর্মচারী, দাস মাত্র। মানুষ দাস ও প্রতিনিধি দুই-ই।

মানুষের ভেতর রয়েছে স্বার্থহীন কর্মের প্রবৃত্তি- অন্যের জন্য মঙ্গল চিন্তা। একজন বিবর্তনবাদী বলেন, যা প্রাকৃতিক নির্বাচন (ন্যাচারাল সিলেকশন) দ্বারা এসেছে তা হবে স্বার্থপর। তিনি আরো বলেন, ‘তবু মানুষের একটি বৈশিষ্ট্য যে তার রয়েছে প্রকৃত, স্বার্থহীন পরোপকারী গুণ।’ (ঞভপ ঝপলফমঢ়ভ এপষপ দী জমধভথড়দ উথারমষঢ়, ১৯৭৬, চ-৪, ২১৫). আর একজন বৈজ্ঞানিক বলেন, ‘মানুষের ভেতর রয়েছে নিঃস্বার্থ পরোপকারী গুণ (থলয়ড়ৎমঢ়শ)… (কসমস, পৃষ্ঠা-৩৩০)। মানুষের ভেতর স্বার্থপর গুণও রয়েছে, তবে স্বার্থহীনতাও রয়েছে। নিজের ক্ষতি জেনেও বহু মানুষ নিঃস্বার্থ কর্ম করে। ইমাম হোসেন (রাঃ) জানতেন তিনি স্বল্পসংখ্যক সাথী নিয়ে জালেম শাহীর বিরুদ্ধে জয়ী হবেন না। তবুও দৃষ্টান্ত স্থাপনে তিনি নিঃস্বার্থতার প্রমাণ দিলেন­ জীবন বিসর্জন দিলেন। মানুষ ও পশুতে কি কোনো পার্থক্য নেই?

মানুষ অনন্তকাল সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে। সে ভাবে সে কোথায়, কোথায় তার গন্তব্য। সে বুঝতে চেষ্টা করে সব কিছু্‌। অন্য জীব-জানোয়ারের তো এমন ভাবনা নেই। থাকলে তার চিহ্ন পাওয়া যেত, সে সব জানোয়ারের সভ্যতার, উন্নতির, প্রত্নতাত্ত্বিক, আধুনিক চিহ্নগুলো আমাদের সামনে থাকত। মানুষ জানতে আগ্রহী কেন, কোথায়, কিভাবে, কখন? এসব কিছু। এই জন্য মানুষের আল্লাহ্‌ এমন মগজ, এমন যোগ্যতা দিয়েছেন যা অন্য সৃষ্টিকে স্রষ্টা প্রদান করেননি। আল্লাহ্‌ যখন আদমকে সৃষ্টি করেন তখনই তিনি এই ক্ষমতা আদমের মগজে প্রোগ্রামকরে দেন। কুরআন বলে যে আল্লাহ্‌ মানুষকে শিক্ষা দিয়েছিলেন, আর আল্লাহর শিক্ষা তো ছাত্র যেভাবে শিক্ষকের কাছে বসে শিখে সেভাবে নয়। আল্লাহ মানুষের মন-মগজে সে শিক্ষা প্রদান করে দেন। কুরআন বলে, ‘আর তিনি (আল্লাহ) আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন। তারপর তিনি সেগুলো পেশ করলেন ফেরেশতাদের সামনে এবং বললেন, যদি তোমাদের ধারণা সঠিক হয় (অর্থাৎ কোনো প্রতিনিধি পৃথিবীতে নিযুক্ত করলে ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হবে) তাহলে একটু বলো তো দেখি এই জিনিসগুলোর নাম? তারা বললঃ ত্রুটিমুক্ত তো একমাত্র আপনারই সত্তা, আমরা তো মাত্র ততটুকুন জ্ঞান রাখি, যতটুকু আপনি আমাদের দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে আপনি ছাড়া আর এমন কোনো সত্তা নেই, যিনি সব কিছু জানেন ও সব কিছু বোঝেন।তখন আল্লাহ আদমকে বললেন, ‘তুমি ওদেরকে এই জিনিসগুলোর নাম বলে দাও।তখন সে তাদের সেসবের নাম জানিয়ে দিলো। তখন আল্লাহ বললেন, ‘আমি না তোমাদের বলেছিলাম, আমি আকাশ ও পৃথিবীর এমন সমস্ত নিগূঢ় তত্ত্ব জানি যা তোমাদের অগোচরে রয়ে গেছে? যা কিছু তোমরা প্রকাশ করে থাকো তা আমি জানি এবং যা কিছু তোমরা গোপন করো তাও আমি জানি।’ (২ সূরা বাকারাহঃ ৩১-৩৩ আয়াত)।

আল্লাহ মানুষের মগজের ভেতর এমন কিছু দিয়েছেন, যা অন্য সৃষ্টি এমনকি ফেরেশতার মধ্যেও নেই। এই মগজের সম্ভাবনা অপার। এদিকে মানুষ চিন্তাশক্তির দ্বারা অনুশীলন গবেষণা করতে সক্ষম, ভালোমন্দ বুঝতে সক্ষম, ন্যায়-অন্যায় অনুধাবনে সক্ষম। হজরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর জীবনে এটির বাস্তব নমুনা আমরা লক্ষ করি। কিভাবে তিনি নিজের স্বাভাবিক মগজ শক্তি দ্বারা প্রকৃত প্রভুর সন্ধান পাচ্ছেন, তার চমৎকার উদাহরণ কুরআনে রয়েছে। কুরআন তাঁর সম্পর্কে বলেন, অতঃপর যখন রাত আচ্ছন্ন করল তখন একটি নক্ষত্র দেখে সে বললঃ এ আমার রব, কিন্তু যখন তা ডুবে গেল, সে বললঃ যারা ডুবে যায় আমি তো তাদের ভক্ত নই। তারপর যখন চাঁদকে আলো বিকীরণ করতে দেখল, বললঃ এ আমার রব। কিন্তু যখন তাও ডুবে গেল তখন বলল, আমার রব যদি আমাকে পথ না দেখাতেন তাহলে আমি পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। এরপর যখন সূর্যকে দীপ্তিমান দেখল তখন বললঃ এ আমার রব, এটি সবচেয়ে বড়। কিন্তু তাও যখন ডুবে গেল তখন ইব্রাহিম চিৎকার করে বলে উঠলঃ হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা যাদের আল্লাহর সাথে শরিক করো তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তো একনিষ্ঠভাবে নিজের মুখ সেই সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি, যিনি জমিন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।

উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মওলানা মওদূদী লেখেন, ‘নবুওয়াতের দায়িত্বে সমাসীন হওয়ার আগে হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম যে প্রাথমিক চিন্তাধারার সাহায্যে মহাসত্যে পৌঁছে গিয়েছিলেন এখানে তার অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে সুস্থ মস্তিষ্ক, নির্ভুল চিন্তা ও স্বচ্ছ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী এক ব্যক্তি যখন এমন এক পরিবেশে চোখ মেললেন, যেখানে চার দিকে শিরকের ছড়াছড়ি, কোথাও থেকে তাওহিদের শিক্ষা লাভ করার মতো অবস্থা তার নেই, তখন তিনি কিভাবে বিশ্ব প্রকৃতির নিদর্শনগুলো পর্যবেক্ষণ এবং সেগুলোর মধ্যে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে তা থেকে সঠিক ও নির্ভুল যুক্তি-প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যে উপনীত হতে সক্ষম হলেন।

১৯১২ সালে এক ঘটনা ঘটল। ইংল্যান্ডে প্রাপ্ত প্রাচীন মাথার খুলি হাজির করা হলো। একে বলা হলো পিল্ট ডাউন ম্যান। এই খুলি নাকি আকারে বড়, এর মগজও বেশি ছিল। ফলে তত্ত্ব দাঁড় করানো হলো ব্রিটিশদের মাথা ও মগজ বড়, বুদ্ধি বেশি। তাই সর্বত্র ব্রিটিশ শ্রেষ্ঠত্ব। ইংরেজি ভাষাও তাই বিশ্বব্যাপী।

১৯৫৩ সালে সব গোমর ফাঁক হলো। দেখা গেল, এই তথাকথিত বড় খুলি একটি জালিয়াতি। আধুনিক টেকনিক দ্বারা ধরা পড়ল যে, মানুষ ও বানরের হাড় এক করে কৃত্রিমভাবে এর বয়স নির্ধারণ করা হয়। মানুষের খুলির সাথে ওরাংওটাং বানরের চোয়াল যুক্ত করে এই জালিয়াতি প্রায় চল্লিশ বছর চালিয়ে ব্রিটিশ মগজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করা হয়। এই জালিয়াতি স্কাল ডজারি’ (খুলি জালিয়াতি) নামে পরিচিত। প্রাচীন খুলি নিয়ে যা কিছু করা হচ্ছে তা হয় জালিয়াতি, না হয় ভুল ব্যাখ্যা প্রদান। পিল্ট ডাউন ম্যানহলো এর জ্বলন্ত প্রমাণ। তথাকথিত পিল্ট ডাউন ম্যানমতবাদ ব্রিটিশদের বিগার ম্যানবলে দেখানো মতবাদ। আর এতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী নীতি পেল উৎসাহ।

জার্মানির এডলফ হিটলার তার নাজি মতবাদের প্রেরণা পান ডারউইনের বিবর্তনবাদে। হিটলার ছিলেন উচ্চাভিলাষী ও উগ্রপন্থী। তিনি জার্মান তথা আর্য রক্তের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করতেন। তিনি এই দর্শনের ভিত্তিতে এমন একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করতে চান, যা হাজার বছর চালু থাকবে। জার্মানির রেসিস্ট ইতিহাসবেত্তাগণ হিটলারকে তাত্ত্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। তারা সবাই ডারউইনের স্ট্রাগল’ (সঙ্ঘাত)-কে নিজেদের মতবাদে ঢুকালেন। হিটলারের লেখা মেন কেম্ফ’ (আমার স্ট্রাগল) ডারউইনের আর এক স্ট্রাগলের ছবি। ডারউইন প্রকৃতিতে যে স্ট্রাগলদেখেছেন, হিটলার তাই জাতিতে জাতিতে দেখেন।

জার্মানিতে এ সময় ইউজেনিকসমতবাদও সহায়ক মতবাদ হিসেবে এলো। এরা বলল যে, মানুষের জাতিকে দুর্বলদের সরিয়ে শক্তিশালী করা উচিত। হেকেল নামের এক জার্মান পণ্ডিত আর এক জালিয়াতির আশ্রয় নিলেন। তিনি জালিয়াতি করে দেখালেন যে, জীব-জানোয়ার মানুষ সবার এমব্রায়ো’ (ভ্রূণ) একই প্রকারের। তিনি তার দেখানো ছবিগুলোর কিছু কিছু পরিবর্তন করে সবার ভ্রূণকে একই রকম দেখালেন এটা প্রমাণ করতে যে সবই এক। মানুষ যে পশু থেকে আলাদা নয়, তাই বলা হলো। তাহলে পশু যেমনি প্রজননের মাধ্যমে উন্নত জাতে পরিণত করা সম্ভব, মানুষেরও তাই সম্ভব। তাই এ ধরনের মতবাদের পরিণতিতে জার্মানির নাজি সমাজতত্ত্ববিদরা দুর্বল, অসুস্থ, বিকলাঙ্গ ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের হত্যা করার পক্ষপাতী। এটা না করলে নাকি উন্নত মানুষের আগমন শ্লথ হয়ে পড়বে।

হেকেলের মতো হিটলারও ইউজেনিকসনীতি গ্রহণ করেন। ফলে জার্মানিতে অমানবিক ্লটার হাউজগড়ে ওঠে গোপনে। দুর্বল ও অসুস্থদের প্যারাসাইট’ (পরজীবী) গণ্য করে এসব কেন্দ্রে তাদের নিশ্চিহ্ন করা হতো। এসব পরজীবীকে উন্নত জার্মান রেসের শত্রু মনে করা হতো।

এর সাথে এলো সুঠাম দেহের যুবক-যুবতীদের যৌন সম্পর্ক স্থাপনের উৎসাহ প্রদান। বিয়ে হোক বা না হোক উন্নত মানব প্রজনন অর্থাৎ জার্মান প্রজনন উৎসাহিত হলো। যৌনকার্যে উৎসাহ প্রদান করা হলো প্রজননে। এ কতকটা উন্নত জাতের গবাদিপশু প্রজননের মতো। উন্নত জার্মান, উন্নত আর্য তৈরি করার ্লোগান এসে গেল। জার্মান রেস উন্নত, এটা প্রমাণ করতে জার্মান নাগরিকদের শরীরের মাপজোক নেয়া হতে লাগল। জার্মান মানুষের সব কিছু উন্নত, চোখ, মাথা, দেহ সবই। এ ধরনের একটি ব্যাধি ইংল্যান্ডেও তথাকথিত পিল্ট ডাউন ম্যান’-এর জালিয়াতির সময় পেয়ে বসেছিল। তবে জার্মানিতে এ ব্যাধি প্রকট আকার নেয়। ডারউইনের বিবর্তনবাদ মানুষকে জন্তুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবল না। ডারউইনের ভাবশিষ্য হিটলার খ্রিষ্টধর্মকেও এড়িয়ে গেলেন। তিনি প্রাচীন প্যাগানমূর্তি পূজা ধর্মের স্বস্তিকার চিহ্নকে জাতীয় প্রতীক বানালেন। স্বস্তিকা একটি প্যাগান কালচার। আসলে ডারউইনের মতবাদ প্যাগানিজম ও নাৎসি মতবাদ একই সূত্রে গাঁথা।

২৫ জুন ২০০১ ইন্ডাস ভিশন টিভি চ্যানেল বলে যে, কোনো কোনো জীবের শরীরের বিভিন্ন অংশ সম্মিলিতভাবে কাজ করে। কাজেই বিবর্তনের মাধ্যমে বহু বছর পরে সেই প্রজাতির নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শরীরে যোগ হয়েছে, তা ঠিক নয়। এইসব জীব কমপ্লিটজীবন হিসেবেই এসেছে, অসম্পূর্ণ জীব হিসেবে নয়। পূর্ণভাবে সৃষ্ট না হলে এইসব জীবন কার্যক্ষমই নয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রিচার্ড ডকিন বলেন, একটি ঘড়ির জন্ম হঠাৎ বিভিন্ন অংশের মিলনের ফল নয়।

২২ জুলাই ২০০১ ডিসকভারি টিভি চ্যানেলে এক প্রোগ্রামে বলা হয়, আইনস্টাইন স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, তার কসমোলজিক্যাল কনসট্যান্ট’ (মহাজাগতিক ধ্রুবক) তত্ত্ব সঠিক নয়, হাবল যখন প্রমাণ করলেন যে, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। এদিকে ব্ল্যাকহোল’ (কৃষ্ণগহ্বর) তত্ত্বও প্রতিষ্ঠিত হলো তখন স্টিডি স্টেট থিওরি’ (স্থিরাবস্থাতত্ত্ব) পরিত্যক্ত হলো। এমনিভাবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের পরিবর্তন হচ্ছে ।

Leave a comment