বিবাহিত নর-নারীর জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে সন্তান লাভ। সন্তান হচ্ছে মা-বাবার বড় সম্পদ। যে দম্পতির কোনো সন্তান নেই দুনিয়ায় তারা অতীব অসহায়। পবিত্র কোরআনে সন্তান সম্পর্কে বলা হয়েছে– ‘ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য।’ (সূরা আল কাহাফ : ৪৬)মানুষ ধনসম্পদ ও সন্তান লাভের আশায় কোনো পদ্ধতিই বাদ রাখে না। তাই কেউ কেউ মাঝেমধ্যে ভুল পথে হাঁটেন। হালাল উপায় বাদ দিয়ে ধরেন হারাম পথ। সন্তান লাভের আশায় মাজার, ফকির-দরবেশ, তাবিজ, বদতদবিরবাজের কাছে গিয়ে আকুতি মিনতি করে ও টাকাকড়ি নষ্ট করে। আমাদের সমাজের সন্তানবিহীন পিতামাতারা হজরত ইবরাহিমের (আ.) সন্তান লাভের কাহিনী থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
সন্তান লাভের জন্য ইবরাহিমের (আ.) দোয়া শতবছরের কাছাকাছি বয়সী বৃদ্ধ ইবরাহিম (আ.), কিন্তু আজও কোনো সন্তান নেই। তাঁর দাওয়াতি কাজ কে আঞ্জাম দেবে এ প্রশ্ন যখন বার বার মনের মধ্যে দোল খাচ্ছে, তখন ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন : ‘হে আল্লাহ আমাকে একজন সুসন্তান দান কর।’ (সূরা আস-সফ্ফাত : ১০০) ইবরাহিম (আ.) শুধু সন্তানই কামনা করেননি। তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছেন : হে রব আমাকে নেক, উত্তম ও সত্ সন্তান দান কর। নবীরা সবাই আল্লাহর কাছে সুসন্তান কামনা করেছেন। কোরআনের কোনো আয়াতে এমন দেখা যায় না যে, তারা শুধু সন্তান কামনা করেছেন। হজরত জাকারিয়া (আ.) বৃদ্ধ বয়সে সুসন্তানের জন্য দোয়া করেছেন। হজরত যাকারিয়া (আ.) যখন মরিয়মকে (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসের বিশেষ একটি কামরায় লালন-পালন করার জন্য রেখে আসতেন, খাবার দিয়ে আসতেন এবং মাঝে মাঝে মরিয়মকে দেখতে যেতেন, সেখানে তিনি অনেক অমৌসুমী ফল দেখতে পেতেন। তিনি অবাক কণ্ঠে মরিয়মকে প্রশ্ন করতেন : হে মরিয়ম! বেমৌসুমী এই ফল তুমি কোথায় পেলে? মরিয়ম জওয়াব দিলেন :
এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে। ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অগণিত রিজিক দান করেন।’ একথা শুনে জাকারিয়ার (আ.) মনে এই ভাবনা উদয় হলো, যে আল্লাহ এক মৌসুমের ফল অন্য মৌসুমে দিতে পারেন সেই আল্লাহ আমাকে এই বার্ধক্য বয়সেও সন্তান দিতে পারেন। আমার এখন বাচ্চা হওয়ার মৌসুম নেই। কিন্তু আল্লাহ চাইলে তো আমাকে যখন তখন বাচ্চা দিতে পারেন। তখন তিনি মরিয়মের কক্ষে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করলেন :
‘হে আমার প্রভু, আমাকে সুসন্তান দান কর।’ (সূরা আল-ইমরান : ৩৮) উক্ত আয়াতে জাকারিয়া (আ.) নেক সন্তানের প্রার্থনা করেছেন। তিনি দুনিয়ার অন্য কিছুর কাছে সন্তান প্রার্থনা করেননি। সন্তান প্রার্থনা করেছেন একমাত্র বিশ্বজাহানের রব আল্লাহর কাছে। নবীদের সন্তান চাওয়ার ক্ষেত্র যেরকম ছিল সঠিক; তেমনি সন্তান চাওয়ার উদ্দেশ্যও ছিল সত্। তারা বদকার সন্তান কামনা করেননি; যারা দুনিয়ায় খুন-খারাবি করবে, হত্যা লুণ্ঠনে ব্যস্ত থাকবে; বরং তারা চেয়েছেন সুসন্তান, যারা দুনিয়ায় আল্লাহর বাণী প্রচার করবে। মানুষদের সত্ কাজের আদেশ দেবে, অসত্ কাজে বারণ করবে। আর তাই আল্লাহতায়ালাও তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রার্থনা কবুল করলেন। ইবরাহিমকে (আ.) খবর দিলেন, তুমি যেভাবে সুসন্তান চেয়েছ, আমিও তোমাকে সেভাবে উত্তম সন্তান দান করলাম : ‘আমি ইবরাহিমকে সুসংবাদ দিলাম, অত্যন্ত ধৈর্যশীল, ভদ্র, গম্ভীর ও মর্যাদাবান সন্তানের।’ ইবরাহিম (আ.) বার্ধক্য বয়সে সুসন্তান পেয়ে আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আল্লাহর পরীক্ষায় স্বীয় প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর ওয়াস্তে কোরবানি করে বিজয়ী হলেন।
আমাদের করণীয়
* আমাদের যাদের সন্তান নেই, তাদের সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহ চাইলে যেকোনো বয়সে সন্তান দিতে পারেন।
* শুধু সন্তান চাইলেই হবে না, আল্লাহর কাছে নেকসন্তান কামনা করতে হবে।
* সন্তান পাওয়ার আশায় কোনো মাজার, কবর, ফকির-দরবেশ, তাবিজ গ্রহণ কিংবা বদকারের কাছে যাওয়া যাবে না এবং অবৈধ উপায় গ্রহণ করা যাবে না।
* আল্লাহ সন্তান দান করলে শোকরিয়া আদায় করে সুন্দর নাম রাখতে হবে।
* সন্তানকে দ্বীন-ইসলাম শিক্ষা দিতে হবে।
* সন্তানকে তাবলিগে দ্বীনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
* মানবতা ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে সন্তানকে নিয়োজিত করতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবন, কর্ম ও দাম্পত্যের প্রতিটি বাঁকে সঠিক পথ দান করুন।
Like this:
Like লোড হচ্ছে...