হাদীসে কুদ্সী কি?
ইসলামী শরীয়তের চার উৎস মূলের অন্যতম হচ্ছে, ‘আল হাদীস’ পবিত্র আল কুরআনের পরেই যার স্খান। হাদীস হচ্ছে – প্রিয় নবী হযরত মোহামôাদ মোস্তফা (সা:)- এর মুখনি:সৃত নিজস্ব বাণী ও কর্ম এবং রাসূল (সা:) কর্তৃক সাহাবায়ে কেরাম(রা:) গনের বক্তব্য ও কর্মের অনুমোদন।
রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর কথা, কাজ ও অনুমোদনের বিপরিত নয়, সাহাবায়ে কেরামের এমন সব কথা, কাজ ও অনুমোদন হাদীসের মধ্যে গণ্য।
হাদীসসমূহের মধ্যে এমন কতগুলো হাদীস রয়েছে যেগুলো আল্লাহর নবী (সা:) নিজ জবানে বর্ণনা করলেও তা মহান আল্লাহ তায়া’লার নামে বিবৃত হয়েছে। যেমন – ‘আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন’ কিংবা ‘মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন’ এভাবে উল্লেখ হয়েছে। হাদীস শাস্ত্র বিশারদ – মুহাদ্দিসদের কাছে এগুলো ‘হাদীসে কুদসী’ নামে পরিচিত।
কুদ্স শব্দের অর্থ হচ্ছে – পবিত্র (দোষ-ক্রটি থেকে)। যা আল্লাহ তায়া’লার গুনবাচক নামসমূহের একটি নাম। যেহেতু এ হাদীসগুলো সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত তাই এগুলোকে ‘হাদীসে কুদ্সী’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন এ হাদীসগুলো ব্যক্ত করতেন, তখন তা সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা করতেন। যেমন – আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন বা বলেন, আবার কখনও বা বলতেন, ‘জিবরাঈ’লকে আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, কিংবা ‘জিবরাঈ’ল (আ:) আমাকে বলেছেন।
মোট কথা যেসব হাদীসের মর্ম রাসূলুল্লাহ (সা:) আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘ইলহাম’ কিংবা জিবরাঈ’ল (আ:) এর মাধ্যমে জ্ঞাত হয়ে নিজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন, তাই ‘হাদীসে কুদ্সী’ হিসেবে সুপরিচিত।
প্রাথমিক যুগের মুহাদ্দিসগণের মতে – ‘হাদীসে কুদসী’র সংখ্যা একশ‘য়ের কিছু বেশি। কিন্তু পরবর্তী কালের মুহাদ্দিসগণ প্রায় সহসন্স হাদীসকে ‘হাদীসে কুদসী’ হিসাবে গণ্য করেছেন।
উপমহাদেশের অন্যতম শেন্সষ্ঠ মুহাদ্দিস হযরতুল আ’ল্লামা মুহামôদ মাদানী (রহ:)- এর বিখ্যাত ‘হাদীসে কুদসী’ সংকলন গ্রন্থ ‘আল ইতফা-ফা-তুস্ সুন্নিয়্যাতু ফিল আহা-দীসিল কুদসিয়্যাহ’ থেকে সুনির্বাচিত প্রায় তিনশত ‘হাদীসে কুদসী’ এর বঙ্গানুবাদসহ বিষয় ভিত্তিক রূপে উপস্খাপন করা হল।
আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে:
১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই) আমার দুর্গ। তাতে যে প্রবেশ করেছে, সে আমার শাস্তি থেকে নিরাপদ হয়েছে।”
এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা:) থেকে ইবনু নাজাজ সংগ্রহ করেছেন।
২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন – সুমহান আল্লাহ্ হযরত মূসা ইবনে ইমরানের প্রতি প্রত্যাদেশ নাযিল করলেন যে, “তাঁর উমôতের মধ্যে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে, তারা উঁচু নিচু স্খানে উঠা নামার সময় ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই)’ সাক্ষ্য দিতে থাকবেন, তাদের জন্য আম্বিয়ায়ে কেরামের অনুরূপ পুরস্কার রয়েছে।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজে যা কিছু লিখেছেন তা হচ্ছে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম – পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি, নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। আমার কোন শরীক নেই, যে আমার বিচার-মীমাংসার প্রতি আত্নসমর্পণ করেছে। আমার কঠিন পরীক্ষার সময় সবর এখতিয়ার করেছে এবং আমার শাসনে সন্তুষ্ঠ রয়েছে, তাকে আমি সত্যবাদীরূপে লিখেছি; এবং কিয়ামতের দিন তাকে সত্যবাদীদের সাথে পুনরুন্থিত করব।”
ইবনুন নাজ্জার এ হাদীসটি হযরত আলী (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেন, “আমি আল্লাহ্, আমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, এ আমার উক্তি; এটা যে স্বীকার করে তাকে আমি আমার বেহেশতে প্রবেশ করাই, আর আমি যাকে আমার বেহেশতে প্রবেশ করাই, নিশ্চয়ই সে আমার শাস্তি থেকে নিরাপদ হয়। কুরআন আমার বাণী, আর আমার কাছ থেকে তা নাযিল হয়েছে।”
খাতীব এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
ভয় ও উপাসনা একমাত্র আল্লাহর জন্য:
৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি এবং জিন ও মানব জাতি এক মহাপরিস্খিতিতে অবস্খান করছি। তাদেরকে আমি সৃষ্টি করি, আর তারা অন্যের উপাসনা করে, তাদেরকে আমি জিবিকা দেই, আর তারা অন্যের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে।”
এ হাদীসটি হযরত আবুদ দারদ (রা) থেকে হাকেম ও তিরমিযী সংগ্রহ করেছেন।
৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমাদের প্রভূ বলেছেন, “সকলে আমাকেই ভয় করবে। কারণ, আমিই এর যোগ্য; এতএব আমার সাথে আর কাউকেও যেন উপাস্য স্খির করা না হয়। অনন্তর যে আমার সাথে আর কাউকেও উপাস্য স্খির করবে না, তাকে আমি ক্ষমা করে দেয়া কর্তব্য মনে করি।”
আহমদ ও তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, “আমার বান্দারা যদি পুরোপুরি আমার অনুগত হত, তবে নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে রাতে বৃষ্টিদান করতাম, তাদের জন্য দিনে রোদ উঠাতা এবং তাদেরকে বজন্স ধ্বনি শুনাতাম না।”
আহমদ ও হাকেম এ হাদীসটি হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহের মহিমা:
৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর সম্প্রদায়কে আমার আরশের ছায়া তলে স্খান দাও। কারণ, নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে ভালবাসি।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কোন মুসলমান বান্দা যখন ‘লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহু‘ (আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই) বলে, তখন তা আকাশসমূহ ছেদন করে যায়, এমনকি তা আল্লাহর সমôুখে গিয়ে পৌছে। আল্লাহ্ তখন বলেন, “স্খির হও”, তখন এটা বলে, “আমি কিরূপে স্খির হব- আমি যার দ্বারা উচ্চারিত হয়েছি এখনও তাকে মাফ করা হয়নি”। আল্লাহ তখন বলেন, আমি তোমাকে সে লোকের জিহµা দ্বারা পরিচালিত করিনি যাকে তার আগ মুহুর্তে মাফ করে দেইনি।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
র্শিক সম্পর্কে
র্শিক ও তার পরিণতি:
১০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “মহান আল্লাহ আমার প্রতি এমন কতগুলো প্রত্যাদেশ করেছেন যা আমার কানে প্রবেশ করেছে এবং আমার হৃদয়ে বসে গেছে। আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেন তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করি যে লোক মুশরিক অবস্খায় প্রাণ ত্যাগ করেছে। আর যে লোক তার অবশিষ্ট সম্পদ অপরকে বিলিয়ে দেয়, তা তার জন্য কল্যানকর। আর যে তা আকড়িয়ে রাখে, তার জন্য তা অনিষ্টকর। আর জীবিকার সমপরিমাণ সম্পদ সঞ্চিত রাখার জন্য আল্লাহ্ কাউকেও অভিসম্পাত করেন না।”
ইবনে জারীর এ হাদিসটি হযরত কাতাদা (রা:) থেকে মুরসাল হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
১১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই তোমার উমôতগণ সর্বদা (তর্কচ্ছলে) বলতে থাকবে-এটা কিভাবে হল? এটা কিভাবে হল? এমনকি ‘পরিশেষে বলবে, “এ সৃষ্টিকুলকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন; কিন্তু আল্লাহকে সৃষ্টি করেছে কে? ”
ইমাম মুসলিম ও আবূ আওয়ানা এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “যাদেরকে আমার অংশী সাব্যস্ত করা হয় আমার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। যে লোক আমার সাথে (কোন কিছু বা কাউকে) অংশী সাব্যস্ত করে কোন আমল করে, তাকে আমি পরিত্যাগ করি এবং আমার সাথে সে যা শরীক করে আমি তা প্রত্যাান করি।”
মুসলিম ও ইবনে মাজা এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমাদের প্রভূ বলেছেন, “যে লোক আমার সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি করেছে তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে আছে! সামর্থ্য থাকলে তাকে একটি মশা, কিংবা একটি কণা সৃষ্টি করতে বল।”
ইবনুন নাজ্জার এ হাদিসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন জাহান্নামিদের কোন একজনকে জিজ্ঞেস করা হবে, “তুমি কি মনে কর তোমার কাছে যদি পার্থিব কোন বস্তু থাকত তবে তুমি মুক্তির বিনিময়ে তা দান করতে?” তখন সে বলবে “হ্যাঁ”। অনন্তর আল্লাহ্ বলবেন, “তোমার কাছে আমি এর চেয়েও নগণ্য বস্তু চেয়েছিলাম। আদমের পিঠে থাকাকালে তোমার কাছে চেয়েছিলাম, তুমি আমার সাথে কোন কিছু অংশী সাব্যস্ত করবে না। তখন তুমি অংশী স্খির না করার অংগীকার করেছিলে।”
আহমদ ও শায়খাইন, আবূ আওয়ানা ও ইবনে হাব্বান হযরত আব্বাস (রা:) থেকে এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন।
১৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেন, “হে আদম সন্তান! একটি তোমার জন্য, আরেকটি আমার জন্য এবং আরেকটি আমার ও তোমার জন্য। অনন্তর আমার জন্য যা রয়েছে তা এই যে, তুমি আমার উপাসনা করবে, আমার সাথে কোন কিছু অংশী স্খির করবে না। আর যা তোমার জন্য তা এই যে, তুমি কিছু বা কোন আমল করলে তোমাকে তার পূরো প্রতিদান দেব। আর যা কিছু আমার ও তোমার জন্য তা এই যে, তুমি প্রার্থনা করবে আর আমি তা মঞ্জুর করবে।”
নাসায়ী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। তবে তিনি একে দূর্বল হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন।
শিরক না করার পুরস্কার:
১৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! যতক্ষন পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকতে থাক এবং আমার আশা পোষণ করতে থাক সে পর্যন্ত আমি তোমাকে মার্জনা করতে থাকি, তোমার যত পাপই হোক না কেন। আর আমি কোন ভয় করি না। হে আদম সন্তান! যদি তোমার পাপরাশি আসমান পর্যন্তও পৌছে, তারপর তুমি আমার কাছে মাফ চাও, আমি তোমাকে মাফ করে দিই এবং আমি কাউকে গ্রাহ্য করি না।”
“হে আদম সন্তান! যদি তুমি আমার কাছে পৃথিবী পরিমাণ পাপ নিয়ে আস আর আমার কোন অংশী স্খির না করে আমার সাথে সাক্ষাত কর, নিশ্চয়ই আমি সে পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।”
তিরমিযী, তিবরানী ও বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আবূ যর (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান মর্যাদাশালী আল্লাহ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! যে পর্যন্ত তুমি আমার উপাসনা কর এবং আমার কাছে কামনা কর, আর আমার সাথে কোন শরীক না কর, সে পর্যন্ত আমি তোমার সকল পাপ মার্জনা করে দেই। আর তুমি যদি আকাশসমূহ ভরা অপরাধ ও পাপ নিয়ে আমার দিকে এগুতে থাক, আমিও অনুরূপ ক্ষমা নিয়ে তোমার দিকে এগিয়ে আসি এবং তোমাকে ক্ষমা করে দেই। আর আমি সকল পরিণামের ঊর্দ্ধে।”
শীরাযী এ হাদীসটি হযরত আবুদ্ দারদা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, “যে লোক কোন ভাল কাজ করে তার জন্য ওর দশগুন এবং তার চেয়েও বেশি পুরস্কার রয়েছে। আর যে লোক কোন খারাপ কাজ করে, এর প্রতিদান ওর সমপরিমান কিংবা আমি তা ক্ষমা করে দেই। আর যে লোক আমার সাথে কোন কিছু শরীক না করে পৃথিবী সমান পাপ করে তারপর আমার সাথে সাক্ষাত করে, আমি তাকে ওর সমপরিমাণ মার্জনা করে থাকি। আর আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দু’হাত অগ্রসর হই। যে লোক আমার দিকে ঁেহটে অগ্রসর হয়, আমি দন্সুত পায়ে তার দিকে অগ্রসর হই।”
আহমদ, মুসলিম, ইবনে মাজা ও আবূ আওয়ানা এ হাদীসটি হযরত আবূ যর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান মর্যাদাশীল আল্লাহ্ বলেছেন, “যে লোক জানে যে, আমি যাঁবতীয় গুনাহ মাফের অধিকারী, তাকে আমি মাফ করে দেই। আর আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক না করা পর্যন্ত আমি কারো কোন দোষ ধরি না।”
তিবরানী ও হাকেম এ হাদিসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
সময় ও কালকে গালি দেয়াও শিরক:
২০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান মর্যাদাশীল আল্লাহ ্ বলেছেন, “আদম সন্তান কালকে গালি দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়, অথচ আমিই কাল, কর্তৃত্ব আমারই হাতে, আমিই রাত-দিনের পরিবর্তন করি।”
আহমদ, আবূ দাউদ ও শায়খাইন এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সময়কে গালি দিও না; মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমিই সময়। দিন ও রাতকে আমি নতুন রূপ দান করি, আর আমিই শাসকদের উপর আরেক শাসকদেরকে চাপিয়ে থাকি।”
বাহয়াকী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেন, “আমি আমার বান্দার কাছে ঋণ চেয়েছিলাম, কিন্তু সে আমাকে ঋণ দেয়নি। আর আমার বান্দা আমাকে গালি দিয়েছে, অথচ সে তা জানে না। সে বলে, হায়রে সময়! হায়রে সময়! মূলত আমিই সময়।”
রিয়া বা ছোট র্শিক সম্পর্কে
আমলের উদ্দেশ্য ও বাসনা:
২৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ বলেন, “আমি তো কোন বিচক্ষণ ব্যক্তির কথাই কবূল করি না; বরং আমি তার উদ্দেশ্য ও বাসনাই কবুল করে থাকি। অত:পর তার ইচ্ছা ও প্রত্যাশা যদি আল্লাহ যা ভালবাসেন ও পছন্দ করেন তাই হয়; তবে তার উদ্দেশ্যকে আমি আমার প্রশংসা ও মর্যাদায় পরিবর্তিত করে দেই, যদিও সে কথা সে নাও বলে থাকে।”
হামযাহা সাহমী এ হাদীসটি হযরত মুহাজির ইবনে হাবীব (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
লোক দেখানো আমলের পরিণতি:
২৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন কিছু লোককে বেহেশতের দিকে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। তারা যখন বেহেশতের কাছাকাছি হবে তখন তারা ওর সুঘ্রাণ পাবে এবং বেহেশতের প্রাসাদগুলো এবং আল্লাহ্ তাতে তার অধিবাসীদের জন্য যা কিছু তৈরী করেছেন, তার দিকে তাকাবে। তখন ডেকে বলা হবে, “তাদেরকে ফিরিয়ে আন, ওতে ওদের কোন অংশ নেই।” তখন তারা হতাশ হয়ে ফিরে আসবে যেমনটি পূর্ববর্তীগণ কখনো ফিরে আসেনি। তারপর তারা বলবে-“হে আমাদের রব, যদি তুমি আমাদেরকে তোমার প্রতিদানের বেহেশতে এবং তাতে তোমার বন্ধুদের জন্য যা তৈরি করে রেখেছ তা দেখানোর আগেই দোযখে প্রবেশ করাতে, তবে আমাদের জন্য সহজ হত।” আল্লাহ বলবেন, “ওরে পাপিষ্টরা, তোদের (শাস্তির) জন্য আমি এই মনস্খ করেছি। তোমরা যখন নিরালায় থাকতে তখন বড় বড় পাপ করে আমার মুকাবিলা করতে, আর যখন লোকদের মধ্যে আসতে তখন তাদের সাথে বিনয়ের সাথে দেখা করতে। মনে মনে তোমরা আমাকে যেরূপ বড় মনে করতে, মানুষদেরকে তার উল্টা দেখাতে। তোমরা মানুষকে ভয় করতে কিন্তু আমাকে আমাকে করতে না, মানুষকে বড় মনে করতে, কিন্তু আমাকে করতে না তোমরা মানুষের জন্য নিজেকে পবিত্র সাজাতে, কিন্তু আমার জন্য সাজাতে না এ জন্য আমি যে আজ তোমাদেরকে বেহেশতে থেকে বঞ্চিত করেছি (তার উদ্দেশ্য ) তা দিয়ে তোমাদেরকে শাস্তি দিব।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আদী ইবনে হাতিম (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ তাঁর কোন এক কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন এবং তাঁর কোন এক নবীর প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছেন, ঐ সকল লোকদেরকে বল, যারা দীন-ধর্ম ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে শিক্ষা গ্রহণ করে এবং আমলের উদ্দেশ্য ছাড়া জ্ঞান অর্জন করে এবং পরকালীন আমলের বিনিময়ে পৃথিবী অìেðষণ করে, আর ভেড়ার চামড়ার লেবাস পরিধান করে, আর তাদের হন্সদয় নেকড়ের অন্তরের ন্যায় এবং তাদের ভাষা মধুর চেয়েও মিষ্টি এবং ধার্মিকের বেশে দুনিয়া অর্জনে আত্ন নিয়োগ কারী এ ভন্ড প্রবঞ্চকদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ্ কঠোর সর্তকবানী করেছেন। আল্লাহ তাদের সামনে এমন কঠিন পরীক্ষা উপস্খিত করবেন বলে কসম করেছেন যে, তা অতি চালাক লোককেও স্তম্ভিত করে তুলবে। তাদের হৃদয় মুসাব্বর গাছের চেয়েও বেশি তিতা। আর কি আমাকেই প্রবঞ্চিত করছে, না আমার প্রতি উপহাস করছে? এতএব আমি নিজের নামে কসম করলাম, তাদের জন্য আমি এরূপ বিশৃঙ্খলা নাযিল করব, যাতে তাদের মধ্যেকার অতিশয় দৃঢ়মনা জ্ঞানী ব্যক্তিও স্তম্ভিত হয়ে পড়বে।”
আবূ সাঈদ সুক্কাশ ও ইবনু ন্নাজ্জার এ হাদীসটি হযরত আবুদ্ দারদা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও মর্যাদাশালী আল্লাহ্ বলেছেন, আমার এরূপ কিছু সংখ্যক বান্দা আছে, যারা মানুষকে দেখানোর জন্য ভেড়ার চামড়া পরিধান করে। তাদের হৃদয় মুসাব্বরের কাঠের চেয়েও বেশি তিতা আর তাদের কথা মধুর চেয়েও মিষ্টি। তারা মানুষের কাছে নিজের দীন-ধর্ম নিয়ে অহঙ্কার করে। তরা কি আমার দেয়া আবকাশ দ্বারা প্রবঞ্চিত হয়েছে? না আমার সাথে সমকক্ষতার দু:সাহস লাভ করতে চলেছে? কিন্তু আমি আমার সত্তার কসম করে বলছি, তাদের প্রতি আমি এমন বিপর্যয় আনয়ন করব যে, তাতে অত্যন্ত ধৈর্য্যশীলগণও হয়রান হয়ে পড়বে।”
ইবনু আসাকির এ হাদিসটি হয়রত আয়েশা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর যিকির বা সôরণ সম্পর্কে:
২৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- বান্দা যখন বলে, “হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক!” আল্লাহ তখন বলেন, “হে আমার বান্দা! আমি উপস্খিত আছি। তুমি চাও, তুমি যা চাইবে তোমাকে তাই দেয়া হবে।”
ইবনে আবিদ্- দুনইয়া ও বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আয়েশা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলবেন, “যে লোক কোন একদিন আমাকে সôরণ করেছে বা কোন এক স্খানে আমাকে ভয় করেছে, তাকে দোযখের অগ্নি থেকে বের কর।”
তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার বান্দা যখন আমাকে নিভৃতে স্বরণ করে, আমিও তাকে নিভৃতে সôরণ করি। আর সে যখন আমাকে কোন মজলিসের মধ্যে সôরণ করে, আমিও তাকে এমন এক মজলিশের মধ্যে সôরণ করি, যা তার সেই মজলিশের চেয়েও উত্তম- যাতে সে আমাকে সôরণ করেছিল।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- এমন কোন জাতি নেই যারা আল্লাহর যিকিরের জন্য মজলিসে বসেছে অথচ জনৈক ঘোষক আকাশ থেকে তাদেরকে এই বলে আহবান করেননি-“নিশ্চয়ই তোমাদের পাপ ক্ষমা করা হয়েছে এবং তোমাদের পাপসমূহ পূণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেয়া হয়েছে।”
আসকারী এ হাদীসটি হযরত হানযালা আবসী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! ফজর ও আসর নামাযের পরে কিছু সময়ের জন্য আমাকে সôরণ কর। তা হলে উভয় নামাযের মধ্য সময়ে আমি তোমাকে সহায়তা করব।”
আবূ নুয়াঈ’ম এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মূসা (আ) বললেন, “হে আমার রব। আমি চাই, তোমার বান্দাদের মধ্যে তুমি যাকে ভালবাস আমিও যেন তাকে ভালবাসতে পারি।” আল্লাহ্ বললেন, “(হে মূসা), তুমি যখন দেখ, আমার কোন বান্দা বেশি আমার যিকির করছে (তখন বুঝে নিও) আমি তাকে এর সমতা দিয়েছি, আমার অনুমতিক্রমেই সে আমার যিকির করছে এবং তাকে আমি ভালবাসি। আর যখন দেখ, আমার কোন বান্দা আমার যিকির করে না তখন যেন আমি তাকে এ (আল্লাহর যিকির) থেকে বিরত রেখেছি এবং আমি তার উপর রুষ্ট।”
দারু কুতনী এ হাদীসটি হযরত উমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও মর্যাদাশীল আল্লাহ্ বলেছেন, “রাগাম্বিত হওয়ার সময়ে যে আমাকে সôরণ করে, আমিও রাগাম্বিত সময়ে তাকে সôরণ করব এবং যাদেরকে আমি ধ্বংস করব, তাকে তাদের মধ্যে শামিল করব না।“
এ হাদীসটি দায়লামী আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ বলেন, “আমার যিকির যাকে এরূপভাবে নিমগ্ন রাখে যে, সে আমার কাছে কিছু চাওয়ার সময় পায় না, তাকে আমি এমন বস্তু দান করব, যা প্রার্থনাকারীদের প্রাপ্য বস্তুর চেয়েও উত্তম।”
ইমাম বুঝারী এ হাদীসটি জাবির (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ বলেছেন, “যাকে আমার যিকির এভাবে মগ্ন রাখে যে, সে আমার কাছে তার কাম্যবস্তু চওয়ারও অবসর পায় না, সে আমার কাছে চাওয়ার আগেই আমি তাকে দিয়ে দেই।”
এ হাদীসটি আবূ নুয়াঈ’ম হযরত হুযাইফা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সেই পবিত্র সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন। নিশ্চয়ই মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ্ বেহেশতের কোন কোন গাছকে প্রত্যাদেশ করবেন, “আমার যে সকল বান্দা আমার যিকিরের জন্য গান-বাজনা শোনা থেকে নিবৃত রয়েছে তাদেরকে তুমি সুমিষ্ট সূর পরিবেশন কর।” তারা তখন তসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনার বিনিময়ে (অর্থাৎ যিকিরের পুরস্কার হিসাবে) এরূপ সুমিষ্ট সূর শুনতে পাবে ইতিপূর্বে যার অনুরূপ সূর কোন সৃষ্টি জীব শুনেনি।”
দায়লামী এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহ যাকে যিকির করতে নিষেধ করেছেন:
৩৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ্ দাউদ (আ)-এর প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন, “জালিমদেরকে বলে দাও, তারা যেন আমাকে সôরণ না করে। কারণ যে লোক আমায় সôরণ করে, আমিও তাকে সôরণ করি। আর জালিমদেরকে সôরণ করার অর্থ হল তাদের প্রতি আমার অভিশাপ বর্ষণ কর।”
হাকেম এ হাদীসটি ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “আনুগত্যের সাথে তোমরা আমাকে সôরণ কর, তোমাদেরকে আমি ক্ষমা সহকারে সôরণ করব। আমাকে যে সôরণ করে সাথে সাথে সে যদি আমার অনুগত হয়, তবে আমার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে, আমি যেন তাকে ক্ষমার সাথে সôরণ করি। আর যে আমাকে সôরণ করে- অথচ সে আমার অবাধ্যচারী, তবে আমার জন্য কর্তব্য হয়ে পড়ে, আমি যেন তাকে ঘৃণার সাথে সôরণ করি।”
দায়লামী এ হাদিসটি আবী হিন্দ দওয়ারী থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর নিকটবর্তী:
৩৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- হযরত মূসা (আ) – এর প্রতি আল্লাহ প্রত্যাদেশ করলেন, “হে মূসা! তুমি কি এটা চাও যে, আমি তোমার ঘরে তোমার সাথে বসবাস করি? এই শুনে হযরত মূসা (আ) আল্লাহর উদ্দেশে সিজদায় রত হলেন অত:পর নিবেদন করলেন- ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার সাথে আমার ঘরে কিভাবে বসবাস করবেন? ’ অনন্তর আল্লাহ্ বললেন, হে মুসা! তুমি কি জান না আমায় যে সôরণ করে আমি তার সঙ্গী হই? আর আমার বান্দা আমাকে যেখানে খোজে, সেখানেই আমাকে পায়।“
এ হাদীসটি ইবনু শাহীন হযরত জাবির (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৪০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- হযরত মূসা (আ) বললেন, “হে আমার প্রতিপালক! আপনি কি আমার খুব কাছাকাছি যে, আপনাকে আমি অনুচ্চরস্বরে ডাকব, না কি আমার থেকে অনেক দূরে যে, উচ্চৈস্বরে ডাকবো? কারণ আপনার সুরের মাধূরী তো আমি অবশ্যই অনুভব করি কিন্তু আপনাকে দেখতে পাই না, তা হলে আপনি কোথায় অবস্খান করেন?” আল্লাহ্ এরশাদ করলেন, “আমি তোমার পেছনে, তোমার সামনে, তোমার ডানে এবং তোমার বামে অবস্খান করি। ওহে মূসা! আমি আমার বান্দার সাথে বসে থাকি যখন সে আমায় সôরণ করে। সে যখন আমাকে ডাকে আমি তখন তার সাথে থাকি।”
দায়লামী এ হাদীসটি সাওবান (রা) সংগ্রহ করেছেন।
৪১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ্ বলেন, “আমি আমার বান্দার সাথে অবস্খান করি। যতক্ষণ সে আমার যিকির করে এবং আমার যিকিরে তার দু’ঠোট সঞ্চারিত হয়।”
আহমদ এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
উচুমনা ব্যক্তি:
৪২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন মহান ও পরাক্রমশালী প্রতিপালক বলবেন, “আজ শীঘ্রই হাশরের ময়দানে সমবেতগণ জানতে পারবে কে উচুমনা।” বলা হল, “হে আল্লাহ্র রাসূল! কে সে উচুমনা ব্যক্তি?” তিনি বললেন, “মসজিদ সমূহে আল্লাহর যিকিরের মজলিসে অংশগ্রহণকারীগণ।”
এ হাদীসটি আহমদ ও আবূ ইয়ালা আবূ সাঈদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞ:
৪৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “ও হে আদম সন্তান। যতক্ষণ তুমি আমায় সôরণ কর ততক্ষণই তুমি আমার শুকরিয়া আদায় কর। আর যতক্ষণ তুমি আমাকে বিসôৃত থাক ততক্ষণ তুমি আমার প্রতি নাশুকর থাক।”
ইবন্ শাহীন এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
‘মুমিনের ডাক’ আল্লাহর খুব প্রিয়:
৪৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় বিশবাসী মু’মিন বান্দা আল্লাহকে ডাকে, অনন্তর আল্লাহ্ তা পছন্দ করেন। অত:পর তিনি বলেন, “হে জিবরাঈ’ল আমার (মুমিন) বান্দার এ প্রয়োজন পূরণ কর এবং তা সাময়িক রেখে পেছনে ফেল, কারণ আমি তার কন্ঠস্বর শুনতে ভালবাসি।” আর নিশ্চয় (গুনাহগার) বান্দা আল্লাহকে ডাকে কিন্তু আল্লাহ্ তা ঘৃণা করেন। অত:পর মহান আল্লাহ্ বলেনক্স“হে জিবরাঈ’ল আমার বান্দার প্রয়োজন পূরণ কর এবং তার জন্য তা জলদি কর। কারণ, আমি তার কন্ঠস্বর শুনতে ভালবাসি না।”
ইবনু আসাকির এ হাদীসটি আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৪৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই জিবরাঈ’ল (আ) আদমের প্রয়োজন মেটানোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন। অত:পর কোন অবিশবাসী বান্দা যখন দু’আ করে তখন মহান আল্লাহ বলেন, “হে জিবরাঈল! তার প্রয়োজন পূরণ করে দাও। আমি তার দু’আ শুনতে চাই না।” আর কোন মু’মিন বান্দা যখন দু’আ করে তখন আল্লাহ্ বলেন, “হে জিবরাঈল! তার প্রয়োজন স্খগিত রাখ, কারণ আমি তার আহবান শুনতে পছন্দ করি।”
ইবনুন নাজ্জার এ হাদিসটি হযরত জাবির (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৪৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেন, “আমার প্রতি বান্দার যে ধারণা রয়েছে আমি তার সাথে থাকি। সে যখন আমাকে সôরণ করে আমি তখন তার সাথেই থাকি।” রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “আল্লাহর কসম! তোমাদের তওবা করায় আল্লাহ্ সেরূপ আনন্দিত হন, মরুভূমিতে হারিয়ে হারিয়ে যাওয়া প্রাণী খুজে পেলে তোমরা যেরূপ আনন্দিত হও। আমার দিকে যে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। আমার দিকে সে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক গজ অগ্রসর হই; আর সে যখন আমার দিকে পায়দলে অগ্রসর হয়, আমি তখন দন্সুতবেগে তার দিকে অগ্রসর হই।”
মুসলিম এ হাদিসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৪৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ এক বান্দাকে দোযখে প্রবেশ করানোর আদেশ দেবেন। সে যখন দোযখের প্রান্তদেশে উপনীত হবে, তখন পিছু ফিরে তাকবে এবং বলবে, “আল্লাহর কসম! ‘হে প্রতিপালক! তোমার সম্পর্কে আমার কি ভাল ধারণা ছিল না? তখন মহান প্রতাপশালী আল্লাহর বলবেন, “তাকে ফিরিয়ে আন। কারণ, আমি আমার বান্দার ধারণার সাথে অবস্খান করি।” আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেবেন।
বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৪৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “ওহে আমার বান্দা! আমার সম্পর্কে তোমার ধারণার সাথে আমি আছি। তুমি যখন আমার আহবান কর, আমি তখন তোমার সাথে থাকি।”
৪৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমার সম্পর্কে বান্দাদের ধারণার সাথে আমি আছি। কেউ যদি সুধারণা পোষণ কর, তবে তার জন্য তা কল্যাণকর। আর যদি সে খারাপ ধারণা পোষণ করে, তবে তার জন্য তা কল্যাণকর।”
তিবরানী এ হাদিসটি হযরত ওয়াসিল (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৫০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, “আমি আমার প্রতি আমার বান্দার ধারণার সাথে আছি। আর আমাকে যখন সে সôরণ করে, আমি তখন তার সাথেই অবস্খান করি। সে যদি আমায় মনে মনে সôরণ করে, আমিও তাকে মনে মনে সôরণ করি। সে যদি আমাকে কোন এক সম্প্রদায়ের মধ্যে সôরণ করে, তবে আমি তাকে ওর চেয়েও উৎকৃষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে সôরণ করি। সে যদি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তার দিকে আমি একহাত অগ্রসর হই। সে যদি আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়, তবে তার দিকে আমি এক গজ অগ্রসর হই। আর সে যদি আমার দিকে পায়দলে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে আগাই।
আহমদ ও শায়খইন এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৫১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও মর্যাদাশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণার সাথে আমি আছি। সে যদি আমার প্রতি সুধারণা পোষণ করে তবে তা তারই সাথে থাকবে, আর যদি সে খারাপ ধারণা পোষণ করে, তবেও তা তারই সাথে থাকবে।”
আহমদ এ হাদিসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৫২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কোন বান্দাই শুধু তিনবার ‘হে প্রভূ’ বলে না; বরং সুমহান আল্লাহ্ বলেন, “ও হে বান্দা! আমি উপস্খিত আছি।” অনন্তর তিনি যা ইচ্ছে তাড়াতাড়ি করেন এবং যা ইচ্ছে বিলম্বিত করেন।
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৫৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশীল আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার কোন বান্দা অন্য কোন প্রিয়বস্তু দ্বারা আমার নিকট প্রিয় হয় না যে পর্যন্ত সে আমি তার প্রতি যা ফরজ করেছি, তা আদায় না করে।”
খাতীব এ হাদীসটি আলী (রা: থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর হক ও বান্দার হক সম্পর্কে
৫৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেন, “আমার বান্দা আমার অধিকার সংরক্ষণে তৎপর না হওয়া পর্যন্ত আমি আমার বান্দার কোন অধিকার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহন করি না।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর দীদার সম্পর্কে
৫৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার বান্দা যখন আমার দিদারকে ভালবাসে, আমিও তার সাক্ষাত ভালবাসি। আর সে যখন আমার দিদারকে অপছন্দ করে, আমিও তার সাক্ষাত ঘৃণা করি।”
মালেক ও বুখারী এ হাদিসটি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৫৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “ওহে মূসা! তুমি কখনো আমাকে দেখবে না। জীবিত কেউ মৃত্যুবরণ করা ছাড়া আমাকে দেখবে না। স্খলভাগের কোন অধিবাসী দেখবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে নীচে নিক্ষেপ করা হয় (অর্থাৎ তার মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত )। জলভাগের কোন অধিবাসীও আমাকে দেখবে না, যে পর্যন্ত না তাকে পৃথক করা হয় (অর্থাৎ মৃত্যু হয়)। নিশ্চয়ই আমাকে বেহেশতীগণ দেখবে, যাদের চোখ দৃৃষ্টি শুণ্য করা হবে না এং যাদের দেহ জীর্ন হবে না।”
হাকীম ও তিরমিযী এ হাদিসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৫৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- বেহেশতীগণ যখন বেহেশতে প্রবেশ করবে, তখন সুমহান আল্লাহ বলবেন, “তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদেরকে আরও বেশী কিছূ দেই?” তারা বলবে, “ আপনি কি আমাদের মুখমন্ডলসমূহকে উজ্জল করেন নি?” আপনি কি আমাদেরকে বেহেশতে প্রবেশ করাননি এবং দোযখ থেকে নিüকৃতি দেননি?” তখন আল্লাহ্ তার হিজাব (আলোর পর্দা) খুলে দেবেন। অত:পর তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের দিকে দৃষ্টিপাত করা অপো অধিকতর প্রিয় কোন বস্তু দেয়া হবে না।”
তিরমিযী ও মুসলিম এ হাদীসটি সুহাইব (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুনা সম্পর্কে:
৫৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ্ বলেন, “আমার ক্রোধের উপর আমার অনুগ্রহ বিজয় লাভ করেছে।”
ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৫৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমাদের মহান ও পরাক্রান্ত প্রতিপালক বলেছেন, “একটি ভাল কাজ করলে দশটি পূন্য লেখা হয় আর একটি খারাপ কাজের জন্য একটি পাপ লেখা হয়, অথবা আমি তা মাফ করে দেই। আর যে লোক পৃথিবী পরিমাণ পাপ নিয়ে আমার সাথে দেখা করে তাকে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে দেখা দেই। আর যে লোক একটি পূর্ণ কর্ম করার সংকল্প করে, কিন্তু তখনও তা সম্পন্ন করেনি, আমি তার জন্য একটি সওয়াব লিখি। আর যে লোক আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই, আর আমার দিকে যে এক হাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক গজ এগিয়ে আসি।”
আবূ দাউদ এ হাদীসটি আবূ যর (রা)- থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৬০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “ও হে মূসা! তুমি অনুগ্রহ কর, তোমার প্রতি অনুগ্রহ করা হবে।”
এ হাদীসটি দায়লামী সংগ্রহ করেছেন।
৬১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার বান্দা যখন কোন একটি পূণ্যে কাজের মনস্খ করে, কিন্তু তখনও সে তা সম্পন্ন করেনি, আমি তার জন্য একটি পূণ্য লিখে দেই। আর সে যদি তা সম্পন্ন করে তবে আমি দশ থেকে সাত’শ গুণ পর্যন্ত পূণ্য লিখে থাকি। আর সে যখন কোন পাপ কাজের মনস্খ করে, কিন্ত তখনও তা সম্পন্ন করে তবে আমি তাতে একটি মাত্র পাপ লিখি।”
শায়খাইন ও তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৬২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ হযরত দাউদ (আ) -এর প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “আমার ইয্যত ও জালালের কসম! আমার এরূপ কোন বান্দা নেই, সে আমার সৃষ্টজীবকে ছেড়ে আমায় আঁকড়ে ধরে আমার আশন্সয় অবলম্বন করে, বরং আমি তার নিয়তের দ্বারা তা জানতে পারি, তখন আকাশসমূহ ও তাতে যা কিছু রয়েছে এবং পৃথিবী ও তাতে যা কিছু রয়েছে সবাই মিলে তাকে প্রতারণার জালে আটকিয়ে ফেলে। কিন্তু এর মধ্য থেকে আমি তার পরিত্রাণের পথ প্রশস্ত করে দেই। আর এরূপ কোন বান্দা নেই যে, সে আমাকে ত্যাগ করে কোন সৃষ্টির আশন্সয় নেয়, আমি তার নিয়ত অভিপ্রায় দ্বারা তা জানতে পারি, বরং আসমানের সমস্ত পন্থা তার সামনে কেটে ফেলি। আর তার বাসনাকে তার পায়ের তলে দৃঢ়ভাবে বেধে রাখি। আর এরূপ কোন বান্দা নেই, যে আমার আদেশের আগেই তাকে অনুগত করা না হয়। চাওয়ার আগে আমি তাকে দান করি। আর আমার কাছে মাফ চাওয়ার আগেই আমি তাকে মার্জনা করে দেই।”
তামôাম এ হাদীসটি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে মালিক থেকে এবং তিনি তার পিতা থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৬৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ্ যখন সৃষ্টিকে সৃষ্টির মনস্খ করলেন তখন তিনি আরশের উপর রতি তাঁর গ্রন্থে লিখলেন, “নিশ্চয়ই আমার করুণা আমার রোষের উপর প্রভাবশালী।”
আহমদ ও শায়খাইন এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৬৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কোন এক বান্দা মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করতে থাকে। অত:পর সে তা থেকে বিচ্যুত হয় না। তখন মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, “হে জিবরাঈ’ল! আমার অমুক বান্দা আমাকে খুশি করতে চেয়েছে। (তুমি জেনে রাখ) নিশ্চয় তার প্রতি আমার অনুগ্রহ রয়েছে”। তখন সেই ঘোষণা আরশ বহনকারীগণ এবং তাদের পাশর্ববর্তী ফেরেশতাগণ পুন: পুন: বলতে থাকে, এমন কি সপ্তম আকাশের অধিবাসীরাও এ কথাগুলি বলতে থাকে। এরপর সে (জিবরাঈ’ল) দুনিয়ায় নেমে আসে।”
আহমদ ্ এ হাদীসটি হযরত সাওবান (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৬৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ্ বান্দাকে জিজ্ঞেসকরবেন এবং বলবেন, “তুমি যখন অসৎকর্ম সংঘটিত হতে দেখেছিলে তখন তাতে বাধা দাওনি কেন?” রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, এর প্রতুত্তর আল্লাহ্ বান্দার মনে উদিত করে দেবেন। সে বলবে, “হে আমার রব! আমি মানুষদেরকে ভয় করেছিলাম এবং তোমার করুনার আশা পোষণ করেছিলাম।”
বায়হাকী এ হাদিসটি হযরত আবূ সাঈদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৬৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সৃষ্টিকে যখন সুমহান আল্লাহ্ সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি নিজ হাতে তার নিজের জন্য অপরিহার্য দায়িত্বরূপে লিখে নিলেন, “নিশ্চয়ই আমার করুণা আমার রোষের উপর প্রভাব বিস্তার করবে।”
এ হাদীসটা ইবনে মাজা হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৬৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেন, “তোমরা যদি আমার করুনা কর, তবে আমার মাখলুকের প্রতি অনুগ্রহকর।”
আবূ শায়খ এ হাদীসটি হযরত আবু বকর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৬৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, “উদারতায় আমার চেয়ে বড় আর কে হতে পারে? আমি বান্দাদেরকে তাদের বিছানায় রক্ষণাবেক্ষণ করি, তারা যেন আমার অবাধ্য হয়নি। আর এটা আমার অনুকম্পা যে, আমি তওবাকারীর তওবা কবূল করি, যেন সে সর্বদা তওবাকারী ছিল। এমন কে আছে, যে আমার কাছে প্রার্থনা করেছে অথচ আমি তাকে তা দেইনি? আমি কি কৃপন যে, আমার বান্দা কৃপণতার জন্য আমাকে দোষারোপ করবে”?
দায়লামী এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে এবং তিনি আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
বান্দাদেরকে শাস্তি দিতে আল্লাহ লজ্জা পান:
৬৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- জিবরাঈ’ল (আ) আমাকে মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ সম্পর্কে জানিয়েছেন, আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার ইযযত, জালাল ও একত্বের কসম! আমার সাথে আমার বান্দাগণের যে প্রয়োজন রয়েছে এর কসম! এবং আমার আরশের উপর আসন নেয়ার কসম। নিশ্চয় আমি আমার সে বান্দা ও বান্দিকে শাস্তি দেিত লজ্জা বোধ করি যারা ইসলামে অবস্খান করে বয়-বৃদ্ধ হয়েছে। অত:পর রাসূল (সা:) কাঁদতে শুরু করলেন। আরয করা হল, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি কাদছেন কেন? তিনি বললেন, “আমি সে ব্যক্তির জন্য কাঁদি যার জন্য আল্লাহ লজ্জ বোধ করেন। অথচ মহান আল্লাহর সমôুখে সে লজ্জিত হয় না।”
খালীল ও রাফিঈ’ এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৭০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেন, “আমার যে বান্দা আমার দিকে দু’হাত তুলে ধরে তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে আমি শরম পাই।” ফেরেশতাগন আরয করেন, “হে আমাদের প্রতিপালক! সে এর উপযুক্ত নয়।” মহান আল্লাহ বলেন, “কিন্তু আমি তো তাকওয়া ও মার অধিকারী।” আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, নিশ্চয়ই আমি তাকে মার্জনা করে দিয়েছি।
হাকেম ও তিরমিযী এ হাদীসটি আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৭১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ ্ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি সেই বান্দা ও বাঁদীর নিকট লজ্জিত- যারা ইসলামে অবস্খান করে বড় হয়েছে। অর্থাৎ ইসলামে থেকে যে বান্দার দাড়ি সাদা হয়েছে এবং ইসলামে অবস্খান করে যে বাঁদীর চুল পেকেছে। এর পরও আমি কি করে তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দেব।”
আবূ ইয়ালা এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য:
৭২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- প্রকাশ্য ব্যাপার বলতে গেলে তা ইসলাম ও তোমার চরিত্রের যেটুকু সুন্দর হয়েছে এবং তোমার প্রতি যে পর্যাপ্ত জিবিকা বন্টন করা হয়েছে। আর গোপনীয় বিষয় বলতে গেলে, হে ইবনে আব্বাস! তোমার যে সব দোষ তিনি গোপনীয় বিষয় বলতে গেলে, হে ইবনে আব্বাস! তোমার যে সব দোষ তিনি গোপন করেছেন। মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ্ বলেন, “আমি মু’মিন পুরুষ ও মু’মিনা স্ত্রীলোকদের জন্য তাদের মৃত্যুর পর তাদের সম্পদ থেকে এক-তৃতীয়াংশ নির্ধারিত করে দিয়েছি। সে সম্পদের সাহায্যে আমি তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে থাকি। আর মু’মিন পুরুষ ও মু’মিনা স্ত্রীলোকদেরকে এরূপ করে দেই যে, তারা তাদের জন্য মাগফেরাত প্রার্থনা করে। আমি তার জন্য তার সেসব দোষ লুকিয়ে রাখি যে, যদি তা আমার বিশিষ্ট বান্দাগণ ছাড়া তার সঙ্গী-সাথীরা জানত, তবে তারা তাকে প্রত্যাখান করত।”
ইবনে মারদুইয়া, বায়হাকী, দায়লামী ও ইবনুন্নাজার এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর সন্তুষ্টি:
৭৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় সুমহান আল্লাহ্ বেহেশতীদেরকে সম্বোধন করবেন। তারা তখন বলবে, “তোমার সমীপে আমরা হাযির, ইয়া রব! আমরা তোমার প্রশংসা করি!” আল্লাহ্ তখন বলবেন, “তোমরা কি খুশি হয়েছে?” তারা বলবে, “আমরা খুশি হব না কেন? আপনি আমাদেরকে এরূপ দান করেছেন যা আর কাউকে দেননি।” আল্লাহ্ বলবেন, “আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও উত্তম বস্তু দেব না?” তারা আরজ করবে, “হে আমাদের রব! এর চেয়ে উত্তম বস্তু আর কি আছে?” আল্লাহ্ বলবেন, “তোমাদের প্রতি আমি আমার সন্তুষ্টি অবর্তীণ করব, এতএব এরপর কোন কড়াকড়ি করা যাবে না।”
আহমদ ও শায়খাইন এ হাদীসটি হযরত আবূ সাঈদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর ক্ষমা সম্পর্কে:
৭৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- ইবলিস তার রবের সমীপে বলল, “আপনার ইযযত ও জালালের কসম! আমি আদম সম্প্রদায়কে পথচ্যুত করতে থাকব, যে পর্যন্ত তাদের প্রাণ থাকে।” আল্লাহ বললেন, “আমার ইযযত ও জালালের কসম! তাদেরকে আমি মাফ করতে থাকব, যে পর্যন্ত তারা আমার কাছে মাফ চাইতে থাকবে।”
আবূ নুয়াঈ’ম এ হাদীসটি আবূ সাঈদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৭৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমরা যদি চাও তবে আমি তোমাদেরকে জানাতে পারি কেয়ামতের দিন সুমহান আল্লাহ্ মু’মিনদের সাথে সর্বপ্রথম কি বলবেন? আর মু’মিনগণ সর্বপ্রথম কি বলবে? অনন্তর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মু’মিনদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, “আমার সাক্ষাতে তোমরা কি প্রীত” জওয়াবে তারা বলবে, “হ্যাঁ হে আমাদের প্রতিপালক!” আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করবেন, “কি জন্য?” তারা বলবে, “আমরা আপনার ক্ষমা ও মাগফিরাতের আশা করেছিলাম।” তখন আল্লাহ্ বলবেন, “তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া আমার জন্য অপরিহার্য্য করে নিলাম।”
ইবনুল মুবারক এ হাদীসটি হযরত মুয়ায (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৭৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমি অত্যন্ত করুণাময় ও মহান ক্ষমাকারী। এটা অসম্ভব যে, আমি একজন মুসলমান বান্দার (পাপ-সমূহ) পৃথিবীতে গোপন রাখব, অত:পর তার সে সব অসদাচরণ প্রকাশ করে তাকে অপদস্ত করব। আমি আমার বান্দার পাপ মার্জনা করতে থাকি যে পর্যন্ত সে মাফ চাইতে থাকে।” এ হাদীসটি হাকেম ও তিরমিযী সংগ্রহ করেছেন।
৭৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় কোন বান্দা পাপ করে, অত:পর বলে, “আমার প্রতিপালক! আমি পাপ করেছি, আমাকে ক্ষমা করুন।” তখন তার রব বলেন, “আমার বান্দা কি জানে যে, তার এরূপ একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং তার ডাকে সাড়া দেন?” তিনি বলেন, “আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।” তারপর যতদিন আল্লাহ চান ততদিন সে পাপ করা থেকে নিবৃত থাকে। তারপর সে পাপ করে এবং বলে, “হে আমার রব! আমি আরও একটি পাপ করে ফেলেছি, আমায় আপনি ক্ষমা করুন।” তখন তার রব বলেন, “আমার বান্দা জানে কি যে, তার এরূপ একজন প্রতিপালক আছেন যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং তার ডাকে সাড়া দেন? সুতরাং নিশ্চয় আমি তাকে মাফ করে দেই। অত:পর সে তার ইচ্ছেমত আমল করুক।”
আহমদ ও শায়খাইন হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন।
৭৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- শয়তান বলল, “ইয়া রব! তোমার ইজ্জতের কসম, নিশ্চয়ই আমি তোমার বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করতে থাকব যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে প্রাণ থাকবে।” অত:পর পূত-পবিত্র প্রভূ বললেন, “আমার ইজ্জত ও জালালের কসম! আমি তাদেরকে মাফ করতে থাকব যে পর্যন্ত (তারা) আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে।”
এ হাদীসটি আহমদ হযরত আবূ সাঈদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৭৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- রক্ষণাবেক্ষণকারী উভয় ফেরেশতার মধ্যে এমন কেউ নেই, যে হেফাযতকৃত বিষয় গুলো আল্লাহর কাছে উঠিয়ে নিয়ে যায়, অত:পর তিনি তার প্রথম পৃষ্ঠায় লিখিত পূণ্য দেখে এবং শেষের পৃষ্ঠায়ও পূণ্য দেখে বরং মহান আল্লাহ্ ফেরেশতাদেরকে বলেন, “তোমরা সাক্ষী থাক। আমি আমার বান্দাকে উভয় পৃষ্ঠার মধ্যখানে যা কিছু ত্রুটি আছে সব ক্ষমা করে দিয়েছি।”
আবূ ইয়া’লা এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৮০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- এক ব্যক্তি নামাজে যত ছিল। সে যখন সেজদা দিল, তখন আরেক জন আগমন করল এবং তার ঘাড়ে আরোহন করল। নিচের জন বলল, “আল্লাহর কসম! কখনও আল্লাহ্ তোমাকে মাফ করবেন না।” তখন মহান ও মর্যাদাশালী আল্লাহ বললেন, “আমার বান্দা তখন আমার কসম করে বলেছে যে, আমি আমার বান্দাকে মাফ করব না। অথচ অবশ্যই আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৮১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহ কসম! অমুককে আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ্ বললেন, “কোন একজন আমার নামে কসম করে বলে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করবো না? নিশ্চয়ই আমি অমুককে মাফ করে দিয়েছি এবং তোমার সত্য কর্ম নষ্ট করে দিয়েছি।”
মুসলিম এ হাদীসটি হযরত জুনদুব (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৮২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- এক লোককে দোযখ থেকে বের করে আনা হবে। তারপর তার মহান রব তাকে বলবেন, “আমি যদি তোমাকে দোযখ থেকে নিüকৃৃতি দেই, বিনিময়ে তুমি আমাকে কি দেবে? সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার কাছে যা চাও তোমাকে আমি তাই দেব।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ। আমার ইযযতের কসম! আমি তোমার কাছে এরূপ বস্তু চেয়েছিলাম যা এর চেয়ে সহজ, অথচ তুমি আমাকে তা দাওনি। আমি তোমার কাছে চেয়েছি যে, তুমি যদি চাও আমি তোমাকে দান করব, তুমি যদি প্রার্থনা কর তবে আমি তা কবুল করব, তুমি যদি মাফ চাও তবে আমি তোমাকে মাফ করব।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৮৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- বান্দা যখন বলে, “রাব্বিগ-ফিরলী, (প্রভু আমাকে ক্ষমা করুন)” প্রতিপালক তখন বলেন, “আমার বান্দা এটা উপলব্ধি করেছে যে, আমি ছাড়া আর কেউ পাপসমূহ মাফ করতে পারে না।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত আলী (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছন।
আল্লাহকে ভয় পাওয়া না পাওয়া সম্পর্কে:
৮৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার ইজ্জত ও জালালের কসম! আমার বান্দা জন্য আমি দু’টি নিরাপত্তা ও দু’টি ভয় একত্র করব না। পৃথিবীতে সে যদি আমার থেকে নির্ভয় হয়ে যায় তবে আমি তাকে সেদিন ভীত করব, যেদিন আমি আমার বান্দাদেরকে সমবেত করব। আর সে যদি পৃথিবীতে আমাকে ভয় পায়, তবে সেদিন তাকে নিরাপত্তা প্রদান করব-যেদিন আমার বান্দাদেরকে একত্রিত করা হবে।”
আবূ নুয়াঈ’ম এ হাদীসটি হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৮৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমাদের কেউ যেন নিজেকে হীন ও তুচ্ছ না করে। যদি সে আল্লাহর এরূপ কোন আদেশ দেখতে পায় যাতে তার কথা বলা উচিত, কিন্তু সে বিষয়ে সে কিছু বলে না, অত:পর সে মহান আল্লাহর সমôুখীন হবে। যে অবস্খায় সে তা (অর্থাৎ আল্লাহর আদেশের বিষয়ে কথা বলার সুযোগ) নষ্ট করে দিয়েছে। তখন মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলবেন, “ও বিষয়ে কথা বলতে তোমাকে কিসে নিষেধ করেছিল?” প্রত্যুত্তরে সে বলিবে, “মানুষের ভয়।” আল্লাহ বলবেন, “আমি ছিলাম তোমার ভয় করার বেশি হকদার।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আবূ সাঈ’দ খুদরী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৮৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- ফেরেশতাগণ আরয করেন, “হে প্রতিপালক! তোমার অমুক বান্দা একটি পাপ করতে মনস্খ করছে।” আল্লাহ্ সর্বাপো বড় দন্সষ্টা, তিনি বলেন, “তাকে লক্ষ্য করতে থাক, সে যদি তা করে ফেলে তবে ওটার সমপরিমাণ পাপ তার জন্য লিখ। আর সে যদি তা ছেড়ে দেয় তবে ওতে তার জন্য একটি পূর্ণ লিখ। কারণ, নিশ্চয়ই সে ওটা আমার শাস্তির ভয়ে ছেড়ে দিয়েছে।”
এ হাদীসটি আহমদ ও মুসলিম হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর দেয়া নেআ’মতের বিষয়ে জাওয়াবদিহী সম্পর্কে:
৮৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন আদম সন্তানকে এভাবে হাযির করা হবে যেন একটা মেষ শাবক। তারপর তাকে আল্লাহর সামনে দাড় করান হবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, “আমি তোমাকে রিযিক দিয়েছিলাম। তোমার প্রতি উত্তমরূপে খেয়াল করেছিলাম এবং তোমাকে নেআ’মত দান করেছিলাম। তার পরিবর্তে তুমি কি কাজ করেছ?” সে বলবে, “আমি তা সঞ্চয় করেছিলাম, তা বাড়িয়েছিলাম; আর আমার যা কিছু ছিল তার অধিকাংশ রেখে এসেছি। আপনি আমাকে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিন, আমি যেন তা নিয়ে আসতে পারি।” তখন আল্লাহ বলবেন, “যা তুমি অগ্রিম পাঠিয়েছিলে আমাকে তা দেখাও।” সে পুনরায় বলবে, “হে আমার রব, আমি তা সঞ্চয় করেছিলাম, তা বৃদ্ধি করেছিলাম, তারপর আমার যা কিছু ছিল তার অধিকাংশ রেখে এসেছি। আমাকে আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিন, যেন আমি তা নিয়ে আসতে পারি।” অনন্তর যখন সাব্যস্ত হবে যে, বান্দা উত্তম কিছু অগ্রিম পাঠায়নি, তখন তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে।
তিরমিযি এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৮৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন বান্দাকে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন করা হবে তা পার্থিব নেআ’মতের ব্যাপারে। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, “আমি কি তোমায় দৈহিক সুস্খতা দান করিনি? আমি কি ঠান্ডা পানীয় দ্বারা তোমার তৃষäা নির্বারণ করিনি?”
তিরমিযি এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৮৯. কেয়ামতের দিন জনৈক বান্দাকে উপস্খিত করা হবে এবং তাকে বলা হবে, “আমি কি তোমাকে কান, চোখ, ঐশ্বর্য্য ও সন্তান দেইনি? আর তোমার জন্য আমি চতুüপদ পশুকে তোমার অনুগত করে দিয়েছিলাম এবং চাষের যমীনকেও। আর তোমাকে নেতৃত্ব করার জন্য অবকাশ দিয়েছিলাম। তখন তুমি কি চিন্তা করেছিলে যে, আজ তুমি আমার সমôুখীন হবে?” তখন সে বলবে, “না।” আল্লাহ্ তখন তাকে বলবেন, “আজ আমিও তোমাকে ভুলে যাব, যেভাবে তুমি আমাকে ভুলে গিয়াছিলে।”
তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৯০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “হে আদম সন্তান তুমি আমার প্রতি ইনসাফ করো না। আমি নেআ’মত দিয়ে তোমার প্রতি ভালবাসা জাহির করি। আর তুমি পাপ অর্জন করে আমাকে কাছে ঘৃণ্য হও। আমার তরফ থেকে তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয় কল্যাণ। আর তোমার দিক থেকে আমার প্রতি উঠে আসে মন্দ। আর মহান ফেরেশতা তোমার দিক থেকে প্রত্যেক দিন ও রাতে একটি মন্দ আমল আমার কাছে নিয়ে আসে। হে আদম সন্তান! যদি তুমি অপরের কাছ থেকে তোমার খারাপ বর্ণনা শুনতে, তবে অতি শীঘ্রই তুমি তাকে ঘৃণা করতে শুরু করতে।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৯১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামত দিবসে আল্লাহ তার বান্দাকে বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি তোমাকে ঘোড়া ও উটের উপর সওয়ার করিনি? আমি কি তোমাকে নারী বিয়ে করাইনি? আমি কি তোমাকে এরূপ (পদে সমাসীন) করিনি যেন তুমি নেতৃত্ব করতে পারে?” তখন সে বলবে-“হ্যাঁ, আমার প্রতিপালক!” তখন আল্লাহ বলবেন, “এর শুকরিয়া কোথায়?”
এ হাদীসটি বায়হাকী হযরত আবূ হুরাইরা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
ঘৃণা ও ভালবাসা দু’ই আল্লাহর জন্য:
৯২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার ভালবাসা সে সকল লোকের জন্য নির্ধারিত, যারা আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরের সাথে বসে।আমার আমার ভালবাসা সে সকল ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে যারা আমার উদ্দেশ্যে একে অপরের জন্য ধন-সম্পদ ব্যয় করে। আর আমার ভালবাসা সে সকল ব্যক্তির জন্য নির্ধারণ হয়েছে, যারা আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরের সাথে দেখা সাক্ষাত করে।”
এ হাদীসটি তিবরানী হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৯৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমার উদ্দেশ্যে যারা একে অপরকে বন্ধু বানিয়েছে তাদের জন্য আমার ভালবাসা সুনির্ধারিত হয়ে গেছে। তাদেরকে কেয়ামতের দিন, যে দিন আমার ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না, আরশের নিচে ছায়া দেব।”
ইবনুল আবিদ্ দুনিয়া এ হাদীসটি হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৯৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি দুনিয়াবাসীদেরকে শাস্তি দিতে মনস্খ করি। অনন্তর আমি যখন আমার ঘর আবাদকারী, আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরের বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি ও খুব ভোরে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারীর প্রতি তাকাই, তখন আমি তাদের উপর থেকে সেই শাস্তি অপসারণ করে নেই।”
এ হাদীসটি বায়হাকী কর্তৃক সংগৃহীত।
৯৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ বলবেন, “ঐ সকল ব্যাক্তি কোথায় যারা পৃথিবীতে আমার মহত্ত্বের দিকে লক্ষ্য রেখেই একে অপরকে ভালবাসত? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ার নিচে আশন্সয় দেব। আজ আমার ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া নেই।”
আহমদ ও মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৯৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার উদ্দেশে পরস্পরের যারা ভালবাসে আমার উদ্দেশে পরস্পরের সাথে যারা বসে, আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরে যারা ব্যয় করে এবং আমার উদ্দেশে পরস্পরে যারা দেখা-সাক্ষাত করে, তাদের জন্য আমার ভালবাসা সুনির্ধারিত হয়ে গেছে।”
আহমদ ও ইবনে হাব্বান এ হাদীসটি হযরত মুয়ায (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
মুসলমানের সম্পর্ক:
৯৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন দু’জন মুসলমান নেই যারা (পরস্পর) সাক্ষাত করে এবং একজন তার সঙ্গীর হাত ধরে তখন আল্লাহ তায়া’লার কর্তব্য হয়ে যায় যে, তাদের প্রার্থনা বিশেষভাবে মঞ্জুর করা এবং তাদেরকে মাফ না করে তাদের হাত পৃথক না করা। আর এরূপ কোন সম্প্রদায় নেই, যারা আল্লাহকে সôরণ করার জন্য সমবেত হয়, এর দ্বারা শুধূ তার অনুগ্রহ ছাড়া অন্য কিছু চায় না, তাদের বিষয়ে আসমান থেকে ঘোষণা আসে, “তোমরা মজলিস ত্যাগ কর এ অবস্খায় যেন তোমরা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছ। আমি তোমাদের পাপসমূহকে পূণ্যে পরিবর্তিত করে দিয়েছি।”
আহমদ, আবু ইয়া’লা ও দিয়াউ এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৯৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই সোম ও বৃহস্পতিবার এ দু’দিনে আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানকে মাফ করে দেন, শুধুমাত্র দু’ব্যাক্তি ছাড়া, যারা একে অপরের প্রতি অসন্তুষ্ট।
এ হাদীসটি ইবনে মাজা হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় যুবক:
৯৯. এরূপ কোন যুবক, যে পার্থিব স্বাদ এবং আমোদ প্রমোদ বর্জন করে এবং তার যৌবনের প্রবণতার পরিবর্তে আল্লাহর হুকুম পালনকে গ্রহণ প্রদান করেন। অতপর আল্লাহ্ বলেন, ‘ওহে কামনাত্যাগী এবং আমার উদ্দেশ্যে যৌবন উৎসর্গকারী যুবক। তুমি আমার কাছে আমার কোন কোন ফেরেশতার ন্যায় মর্যাদাশালি।’
হুসাইন ইবনে সুফিয়ান এ হাদীসটি হযরত শুরায়হ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১০০ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহর কাছে সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রিয় সেই তরুণ সুদর্শন যুবক, যে তার যৌবন ও সৌন্দর্য্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে পেশ করে, তাঁর হুকুম পালনে খরচ করে। তিনি সে ব্যক্তি সম্পর্কে তাঁর ফেরেশতাগণের কাছে গর্ব করেন। তিনি বলেন, “এই আমার প্রকৃত বান্দা।”
ইবনু আসাকির এ হাদীসটি হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর তাসবীহ-তাহলীল সম্পর্কে:
১০১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আমার রব আমাকে খবর দিয়েছেন, অতি সত্বর আমি একটি নিদর্শন দেখতে পাব। অত:পর আমি যখন তা দেখব তখন আমি যেন ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি ওয়াস্তাগ ফিরুল্লাহি ওয়া আতুবু ইলায়হি, কথাটি খুব বেশি বেশি আওড়াতে থাকি। অত:পর আমি তা দেখেছি। যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় অর্থাৎ মক্কা বিজয়ের দিন এল, তখন তুমি (হে মুহামôদ!) দলে দলে লোকদেরকে আল্লাহর ধর্মে প্রবেশ করতে দেখেছ। এতএব, তোমার রবের হামদ বা প্রশংসাজ্ঞাপক তাসবীহ পাঠ কর এবং তার কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় তিনি তওবা কবুলকারী।”
মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আয়েশা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১০২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- বান্দা যখন বলে- ‘সুবহানাল্লাহ্ ’ আল্লাহ্ বলেন, “আমার বান্দা আমার পবিত্রতা ও প্রশংসায় সত্যারোপ করেছে। পবিত্রতা আমি ভিন্ন আর কারো হতে পারে না।”
দায়লামী এ হাদীসটা হযরত আবুদ্ দারদা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১০৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যে লোক বলে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহি’ তার সম্পর্কে’ আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা আমার নিকট আত্নসমর্পন করেছে এবং আমার অনুগত হয়েছে।”
এ হাদীসটি হাকেম হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১০৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কোন বান্দা যখন স্বীয় বিছানায় কিংবা মাটিতে তার শোয়ার স্খানে শয়ন করে, অত:পর কোন রাতে তার ডানে অথবা বামে পাশ ফিরে তারপর বলে, “আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাহল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা- শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহ্য়ী ওয়াইউমীতু ওয়াহুয়া হাইয়্যন লা ইয়ামূত, বিয়াদিহিল খায়রু ওয়াহুয়া আ’লা কুল্লি শাইয়্যিন কাদীর” তখন মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ তার ফেরেশতাগণকে বলেন, “তোমরা আমার বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর – এ অবস্খায়ও সে আমাকে ভুলেনি। আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি, আমি তার প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেছি।”
ইবনুস সুন্নী এ হাদীসটি আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১০৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, “(হে মুহামôদ!) তোমার উমôতকে বলে দাও, তারা যেন সকালে দশবার, সন্ধ্যায় দশবার এবং ঘুমানোর সময় দশবার ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করে। এটা তাদেরকে ঘুমানোর সময় পার্থিব বিপদ থেকে, বিকালে শয়তানের প্রবঞ্চনা থেকে এবং সকালে আমার নিকৃষ্ট গযব থেকে রক্ষা করবে।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আবূবকর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১০৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ্ বান্দার প্রতি খুবই খুশী হন, যখন সে বলে, ‘লা-ইলাহা ইল্লা আনতা ইন্নী কাদ জালামতু নাফসী ফাগফিরলী যনূবী, ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুর্য যুনূবা ইল্লা আনতা’ (আল্লাহ) তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, অবশ্যই আমি আমার নিজের প্রতি জুলুম করেছি, আমায় ক্ষমা করুন, তুমি ছাড়া কেউ পাপ মার্জনা করতে পারবে না। ‘আল্লাহ্ বলেন, ‘আমার বান্দা বুঝতে পেরেছে যে, তার একজন রব (প্রতিপালক) আছেন, তিনি তাকে মার্জনা করেন ও শাস্তি দেন।”
ইবনুস-সুন্নী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা)-থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১০৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন-নিশ্চয় ইবরাহীম (আ) তাঁর রবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন এবং বলেছিলেন, “ইয়া রব! যে লোক তোমার হামদ বা প্রশংসা করে, তার পুরস্কার কি? তিনি বললেন, “হামদ বা প্রশংসা কৃতজ্ঞতার চাবি; তার কৃতজ্ঞতা তা নিয়ে পরওয়ারদেগারে আলমের আরশ পর্যন্ত আরোহণ করে।” তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, “যে তোমার তাসবীহ বা গৌরব বর্ণনা করে, তার পুরস্কার কি?” তিনি বললেন, “তাসবীহের রহস্য পরওয়ারদেগারে আলম ছাড়া আর কেউ জানেনা।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
গর্ব ও অহংকার একমাত্র আল্লাহর জন্য:
১০৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই গৌরব আমার পোশাক এবং অহংকার আমার চাদর। এতএব, যে তা নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করবে তাকে আমি শাস্তি দেব।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১০৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ বলেন, “শেন্সষ্ঠত্ব, গর্ব ও অহংকার আমারই। আর মতা আমার গোপনীয় বিষয়। এতএব, যে লোক এর কোন একটি নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করে, আমি তাকে জাহান্নামে ছুড়ে মারব।”
হাকেম ও তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১১০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “অহংকার আমার চাদর এবং শেন্সষ্ঠত্ব আমার পোষাক। অনন্তর যে এর কোন একটি নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করবে তাকে আমি জাহান্নামে ছুড়ে মারব।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা ও ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১১১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন চুল ঝুলিয়ে দেয়া হয় ও অহংঙ্কারের সাথে চলাচল করে, মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, “আমি আমার সত্ত্বার কসম করে বলছি, আমি তাদের কতককে দিয়ে অপর কতকের প্রতি অকল্যাণ প্রেরণ করব।”
খারায়েতী এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা:) সম্পর্কে:
১১২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আমাকে যখন আকাশ ভ্রমণে নেয়া হল, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। তখন আমি দেখতে পেলাম, আরশের ডান পাশে লেখা আছে- “আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, মুহামôদ (সা:) আল্লাহর রাসূল, তাকে আমি মর্যাদা দিয়ে সাহায্য করেছি।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আবূ হামরা থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১১৩. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ্ ইবরাহীম (আ)-কে খলীল (বন্ধু) রূপে, মূসা (আ)-কে নাজীর (গোপনীয় সম্বোধনের পাত্র) রূপে এবং আমাকে হাবিব (বিশেষ বন্ধু) রূপে গ্রহণ করেছেন। অত:পর মহান আল্লাহ্ বলেছেন, ‘আমার নাজীর (মূসা)-এর উপর আমার হাবিব (বিশেষ বন্ধু) কে অগ্রাধিকার দেব।”
হাকিম, তিরমিযী, তিবরানী, দায়লামী ও ইবনে আসাকির এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। তিবরানী একে যঈ’ফ বলেছেন।
১১৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আমার কাছে জিরাঈ’ল এলেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই আমার ও আপনার প্রতিপালক আপনাকে বলেন, আপনি জানেন কি কিরূপে আমি আপনার যিকিরকে সমুন্নত করেছি? আমি বললাম, আল্লাহ্ সর্বাপো ভাল জানেন। তিনি তখন (আল্লাহ) বললেন, আমার যিকির করা হয় না এবং আমার সাথে আপনার সôরণও করা হয়।”
এ হাদীসটি আবূ ইয়ালা, ইবনে আব্বাস রাহাবী, ইবনে আসাকির, দিয়াউল মুকাদ্দেসী থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১১৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- রাতের বেলা যখন আমাকে উর্ধ্বলোক ভ্রমণ (মেরাজ) করান হল, আমি তখন আমার মহান ও মর্যাদাশালী প্রতিপালকের সমীপে উপস্খিত হলাম। তিনি আমার মর্যাদা সম্বন্ধে তিনটি বিষয়ে আমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন, তাতে বলা হল, তিনি (আমি) প্রেরিত রাসূলদের নেতা, ধর্মভীরুদের অভিভাবক ও বন্ধু এবং কপাল ও হাত-পায়ে শুভ্র চিহ্ন ধারণকারীদের সরদার।”
ইবনু নাজ্জার এ হাদীসটি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আসাদ ইবনে যুরারা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১১৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- এমন কোন ব্যক্তি নেই, যে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে অথচ তা নিয়ে একজন ফেরেশতা ঊর্ধ্বেলোকে আরোহণ করে না। সে তা নিয়ে দয়াময় মহান আল্লাহর সমôুখে উপস্খিত হয়। তখন মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেন, “তোমরা এটা নিয়ে আমার সে বান্দার কবরের পাশে যাও যাতে এর পাঠকারীর জন্য তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারো এবং এর দ্বারা তার চোখ শীতল করে দাও।”
ইবনু মাজা এ হাদীসটি হযরত আয়েশা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১১৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই আমার কাছে একজন ফেরেশতা এলেন এবং বললেন, “তোমার প্রতিপালক তোমার সম্পর্কে বলেন, এটা কি তোমার জন্য পছন্দনীয় নয় যে, তোমার কোন উমôত তোমার উপর একবার দরূদ প্রেরণ করে, আমি তখন তার প্রত দশবার রহমত পাঠাই। আর তোমার কোন উমôত যদি তোমার উপর একবার সালাম (শান্তি বর্ষণ) প্রেরণ করে, আমি তখন তার প্রত দশবার সালাম (শান্তি) পাঠাই? আমি তখন বললাম, হ্যা (নিশ্চয়ই) পছন্দ করি।”
তিবরানী ও নাসায়ী এ হাদীসটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবূ তালাহা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১১৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই এটা গোপনীয় উক্তির অন্তর্ভূক্ত; তোমরা যদি আমাকে এটা জিজ্ঞেস না করতে, তবে তোমাদেরকে আমি এ সম্বন্ধে জানতাম না। মহান আল্লাহ্ আমার ব্যাপারে দু’জন ফেরেশতা নিয়োগ করেছেন, কোন মুসলমানের সামনে আমার নাম নেয়া হয় আর সে আমার প্রতি দরূদ প্রেরণ করে, তখন উক্ত দু’ফেরেশতা সে লোকের জন্য বলে, ‘তোমাকে আল্লাহ্ মাফ করুন’। আল্লাহ্ ও তাঁর অন্যান্য ফেরেশতারা এ দু’ফেরেশতার জওয়াবে বলেন, ‘আমীন’।” বর্ণনাকারী বলেছেন, সাহাবাগণ আরয করেছিলেন, ‘ইয়া রাসূলালআহ! ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইউসাল্লুন্ াআ’লান-নাবিয়্যি’ উক্তির অর্থ কি? তিনি তখন উল্লেখিত বক্তব্য দিলেন।
তিবরানী এহাদীসটি হাকাম ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে খাত্তাফ থেকে, তিনি হযরত উমেô আনীস বিনতে ইবনে আলী (রা) থেকে এবং তিনি তাঁর পিতা থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১১৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই যখন তুমি আমাকে দেখলে যে, আমি খেজুর বাগানে প্রবেশ করলাম, তখন জেনে রাখ যে, আমি সেখানে জিবরাঈ’ল (আ)-এর দেখা পেলাম। তিনি তখন বললেন, ‘আমি তোমাকে একটি সুসংবাদ দিচ্ছি। মহান ও মর্যাদাশীল আল্লাহ্ বলেন, তোমার প্রতি যে, লোক সালাম পাঠায় আমিও তার প্রতি সালাম পাঠাই। আর তোমার প্রতি যে, দরূদ পাঠাই আমিও তার প্রতি রহমত প্রেরণ করি।” নবী করীম (সা:) বলেন, “অত:পর আমি শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে আল্লাহর উদ্দেশে সিজদায় রত হলাম।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১২০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আমার কাছে জিবরাঈ’ল (আ) এসে বললেন, “হে মুহামôদ! তোমার প্রতিপালক বলেন; তুমি কি এটা শুনে খুশী নও যে, তোমার কোন উমôত যখন তোমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আমি তখন তার প্রতি দশবার রহমত প্রেরণ করি? আর তোমার প্রতি তোমার কোন উমôত একবার সালাম (শান্তি বর্ষণ) পাঠালে ওর বিনিময়ে আমি তার প্রতি দশবার সালাম পাঠাই?”
নাসায়ী এ হাদীসটি হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আবূ তালহা থেকে এবং তিনি তাঁর পিতা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১২১. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- বুররাক আনা হল। ওটা একটি সাদা রংয়ের চতুস্পদ প্রাণী উচ্চতায় গাধার চেয়েও বেশি এবং খচ্চর থেকে কম। ওর দু’পায়ের সামনের অংশে তার খুর রয়েছে। আমি তাতে আরোহণ করলাম এবং বায়তুল মুকাদ্দাসে চলে এলাম। অত:পর আমি ওটাকে সে মসজিদে প্রবেশ করলাম, দু’রাকাআত নামায পড়লাম, অত:পর বেরিয়ে এলাম। অন্তর জিবরাঈ’ল একটি সুরার ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার কাছে এলেন। আমি দুধ পছন্দ করলাম। জিবরাঈ’ল তখন বললেন, আপনি ফিরাতকে পছন্দ করে নিয়েছেন।” তারপর বুররাক আমাদেরকে নিয়ে প্রথম আসমানে উড্ডয়ন করল। জিবরাঈ’ল আকাশের দ্বার খুলে দিতে অনুরোধ জানালেন। তাকে বলা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, আমি জিবন্সাঈ’ল। বলা হল, তোমার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহামôদ (সা:)। বলা হল, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তাকে (আমাকে) ডেকে পাঠান হয়েছে। অনন্তর আমাদের জন্য আকাশের দ্বার খুলে দেয়া হল। এখানে আমি আদম (আ)-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে অভিবাদন জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন।
তারপর বুররাক আমাদেরকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে আরোহণ করল। জিবরাঈ’ল আকাশের দরজা খুলে দিতে অনুরোধ জানালেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, জিবরাঈ’ল। বলা হল, তোমার সাথে আর কে? তিনি জবাব দিলেন, মুহামôদ। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বলিলেন হ্যাঁ, তাকে ডেকে পাঠান হয়েছে। অত:পর আমাদের দরজা খুলে দেয়া হল। এখানে আমি আমার খালাতো দু’ভাই -ঈসা ইবনে মারইয়াম ও ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়ার (আ) দেখা পেলাম। তারপর তারা দু’জন আমাদেরকে অভিবাদন জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন।
অত:পর বুররাক আমাদেরকে নিয়ে তৃতীয় আসমানে আরোহন করল। জিবরাঈ’লকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তুমি? তিনি বলিলেন, মুহামôদ (সা:)! বলা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠান হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ ডেকে পাঠান হয়েছে। অত:পর আমাদের জন্য দরজা উমôুক্ত করা হল। এখানে আমি ইউসুফ (আ)-এর দেখা পেলাম। তাঁকে সৌন্দর্যের অর্ধাংশ দেয়া হয়েছিল। অনন্তর তিনি আমাকে অভিবাদন জানালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন।
অত:পর বুররাক আমাদেরকে নিয়ে চতুর্থ আসমানে আরোহণ করল। জিবরাঈ’ল দরজা খোলার জন্য অনুরোধ জানালেন। তাকে বলা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈ’ল। জিজ্ঞেস করা হল, তোমার সাথে কে? তিনি বললেন মুহামôদ (সা:)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ? অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হল। এখানে আমি ইদরীস (আ) -এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে অভিভাদন জানালেন এবং আমার জন্য দোয়া করলেন। সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আর তাকে আমি অতি উচ্চস্খানে উঠালাম।”
অত:পর আমাদেরকে নিয়ে তা পঞ্চম আসমানে আরোহন করল। জিবরাঈ’ল দরজা খোলার জন্য অনুরোধ জানালেন। জিজ্ঞেস করা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈ’ল। জিজ্ঞেস করা হল, তোমার সাথে কে? তিনি বলিলেন, মুহামôদ (সা:)! জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ডেকে পাঠান হয়েছে। অনন্তর আমাদের জন্য দরজা খোলা হল। এখানে আমি হারুন (আ)-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে অভিবাদন জানালেন এবং আমার কল্যানের জন্য দোয়া করলেন।
অনন্তর আমাদেরকে নিয়ে ওটা ষষ্ঠ আকাশে আরোহণ করল। জিবরাঈল দরজা খোলার জন্য অনুরোধ জানালেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, জিবরাঈ’ল। জিজ্ঞেস করা হল, তোমার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহামôদ (সা:)। জিজ্ঞেস করা হল, তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অত:পর আমাদের জন্য দরজা খোলা হল। আমি এখানে মূসা (আ)-এর দেখা পেলাম। তিনি আমাকে অভিবাদন জানালেন এবং আমার কল্যানের জন্য দোয়া করলেন।
অত:পর বুররাক আমাদেরকে নিয়ে সপ্তম আকাশে আরোহন করল। জিবরাঈ’ল দরজা খোলার জন্য অনুরোধ জানালেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তুমি? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈ’ল। বলা হল, তোমার সাথে আর কে? তিন বললেন, মুহামôদ (সা:) এর দেখা পেলাম। তিনি বায়তুল মামুরে পিঠ লাগিয়ে বসে ছিলেন। এ ঘরের বৈশিষ্ট্য এরূপ যে, প্রতিদিন এখানে সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রবেশ করে এবং তারা পুনরায় কখনো ফিরে আসে না।
এরপর জিবরাঈ’ল আমাকে নিয়ে সিদরাতুল মুনতাহায় গেলেন। কি কি আশ্চার্য্য ওর পাতাগুলো হাতির কানের মত। আর কি আশ্চর্য! তার ফুলগুলো পবর্তশৃঙ্গের মত। আল্লাহর ইচ্ছায় ওটা যখন ঢেকে যায় তখন তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। মহান আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর মাঝে এমন কেউ নেই, যে ওর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে পারে। অত:পর আমার প্রতি যে প্রত্যাদেশ ছিল, তা করা হল এবং আমার প্রতি প্রত্যেক দিন ও রাতে পঞ্চাশটি নামায ফরয করা হল। অত:পর আমি মূসা (আ) -এর কাছে নেমে এলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার প্রতিপালক তোমার জন্য কি ফরয করেছেন?” আমি বললাম, “পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায।” তিনি বললেন, “তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাও এবং হালকা করার জন্য অনুরোধ জানাও। কারণ তোমার উমôত ওটা আদায় করতে পারবে না। আমি বণী ইসরাঈ’লকে পরীক্ষা করেছি।”
এতএব আমি আমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে গেলাম এবং নিবেদন জানালাম, হে আমার রব! আমিার উমôতের নামায কমিয়ে দিন। তিনি আমার পাঁচ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে দিলেন। পুনরায় আমি মূসার (আ) কাছে ফিরে গেলাম এলাম এবং বলাম, “আমার পাঁচটি নামায কমিয়ে দিয়েছি” তিনি বললেন, “তোমার উমôত এ পারবে না। পুনরায় তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাও এবং হালকা করার জন্য অনুরোধ জানাও।” এতএব আমি এভাবে আমার রব ও মুসার (আ:) কাছে যাতায়াত করতে থাকলাম, যে পর্যন্ত রব বললেন, “হে মুহামôদ! দিনরাতে তোমার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায। আর যে লোক কোন ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে, কিন্তু তা করে না, আমি তার জন্য একটি পূণ্য লিখি। অত:পর যদি সে তা করে, কিন্তু সে তা করে না – এর বদলে তার জন্য কিছু লেখা হয় না। আর যদি সে তা করে ফেলে, তবে তার জন্য একটি পাপ লিখি।” অনন্তর আমি নামলাম ও মূসার (আ) কাছে আসলাম এবং তাঁকে জানালাম। তিনি বললেন, “তুমি তোমার প্রতি পালকের কাছে যাও এবং ওটা হালকা করার জন্য আরয কর।” আমি বললাম, “আমি বহুবার আমার রবের কাছে নিবেদন করেছি। এতএব এখন আমি পুনরায় তাঁর কাছে আব্দার করতে লজ্জা বোধ করছি।”
আহমদ ও মুসলিম ও আবু ইয়া’লা এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আসহাবের রাসূল ও উমôতে মোহামôদী (সা:) প্রসঙ্গে:
১২২. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তুমি কি জান না (হে ওমর!), নিশ্চয়ই আল্লাহ্ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি করুণার দৃষ্টি ফেলে বলেছেন, “তোমরা যা খুশি আমল কর, তোমাদেরকে আমি মাফ করে দিয়েছি।”
আহমদ ও শায়খাইন এবং আবূ দাঊদ ও তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১২৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমার বিশবাসী-মু’মিন বান্দা সকল কল্যাণের উৎসস্খল।”
এ হাদীসটি আহমদ সংগ্রহ করেছেন।
১২৪. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আমার উমôতের হিসাব আমার উপর ন্যাস্ত করার জন্য আমি মহান আল্লাহর সমীপে আরয করলাম, যাতে তারা অপরাপর উমôতের সামনে লাঞ্ছিত না হয়, তখন মহান ও পরাক্রমশালী রব আমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন, “হে মুহামôদ! আমি তাদের হিসাব গ্রহণ করব। অনন্তর তাদের যদি কোন ক্রটি হয়, আমি তোমার কাছেও তা গোপন রাখাব, যাতে তারা তোমার কাছেও অপদস্খ না হয়।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১২৫. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন“আমার বিশবাসী-মু’মিন বান্দা আমার কাছে কোন কোন ফেরেশতার চেয়েও প্রিয়তর।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা:) -এর শাফাআ’ত:
১২৬. (রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “তোমার আমার দুনিয়া ও আখিরাতের সহচর। মহান আল্লাহ্ আমাকে জাগালেন, অতপর বললেন, “হে মুহামôদ! নিশ্চয় আমি কোন নবী ও রাসূল পাঠাননি, বরং সে আমার কাছে একটি বিষয়ে প্রার্থনা করেছে; যা আমি তাকে প্রদান করেছি। অতএব হে মুহাম্দ! তুমি প্রার্থনা কর, তোমাকে তা দেয়া হবে।” তখন আমি বললাম, “আমার চাওয়া হল, কেয়ামতের দিন আমার উমôতের জন্য শাফা’আতের অনুমতি দিন। আববকর (রা) নিবেদন করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (স)! শাফা’আত কি? তখন রাসূল (সা:) বললেন, “কেয়ামতের দিন আমি বলব- ইয়া রব! আমার শাফা’আত, যা আপনার কাছে গচ্ছিত রেখেছি।” তখন রব বলবেন, হ্যাঁ। অনন্তর মহান ও প্রতাপশালী প্রতিপালক আমার অবশিষ্ঠ উমôতকে দোযখ থেকে বের করে আনবেন এবং তাদেরকে বেহেশতে প্রেরণ করবেন।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১২৭. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় কেয়ামতের দিন আমার উমôতের সেই লোকের জন্য শাফা’আত হবে, যে কবীরা গুনাহ করেছে এবং সে অবস্খায় মারা গিয়েছে। তারা জাহান্নামের প্রথম স্তরে থাকবে, তাদের চেহারা কাল হবে না, চোখগুলো নীল হবে না। তাদেরকে জিঞ্জিরাবদ্ধ করে রাখা হবে না। বন্দীরূপে শয়তানদের সাথে একত্রিত করা হবে না, হাতুড়ি দিয়ে মারা হবে না এবং দোযখের নিম্নদেশে নিক্ষেপ করা হবে না। তাদের কেউ কেউ এতে এক ঘন্টা অবস্খান করবে অতৎপর বেরিয়ে আসবে। কেউ কেউ এতে একদিন অবস্খান করবে অতৎপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে। কেউ কেউ সেখানে এক বছর অবস্খান করবে। সেকালটি পৃথিবী সৃষ্টি থেকে এর ধ্বংসের সময় পর্যন্ত দির্ঘস্খায়ী হবে, যার পরিব্যপ্তি সাত হাজার বছর। তারপর মহান আল্লাহ্ যখন একত্ববাদে বিশবাসীদেরকে সেখান থেকে নিüকৃতি দেয়ার ইচ্ছা করবেন, তখন তিনি (অন্যান্য) সকল ধর্মাবলম্বীদের মনে এ ধারণা ঢুকিয়ে দেবেন, যার ফলে তার বলতে থাকবে, “আমরা এবং তোমরা সকলেই পৃথিবীতে ছিলাম। অত:পর তোমরা ঈমান এনেছিল, আর আমরা কুফরী করেছিলাম। আর তোমরা সত্যকে মেনে নিয়েছিলে এবং আমারা তাকে মিথ্যা মনে করছিলাম, তোমরা স্বীকার করেছিলে, আমরা অস্বীকার করেছিলাম, কিন্তু এতে তোমাদের লাভ হল না। আজ আমরা শাস্তির ব্যাপারে সকলেই সমান। তোমরাও তেমনভাবেই শাস্তি পাচ্ছ যেমনভাবে আমরা শাস্তি পাচ্ছি। এ সময় আল্লাহর ক্রোধ এত প্রবল হবে, যার অনুরূপ অতীতে কখনও হননি এবং ভবিষ্যতেও তেমনটি হবেন না, তখন (আল্লাহর ইচ্ছায়) একত্ববাদীগণ সেখান থেকে বেরিয়ে বেহেশত ও পুলসেরাতের মধ্যেবর্তী একটি স্খানের দিকে আসবে, যাকে সঞ্জীবনী ঝরণা বলা হয়। অনন্তর তাদের উপর সে ঝরণার পানি ছিটিয়ে দেয়া হবে, ফলে তারা এভাবে উথিত হবে যেরূপ বণ্যার পরে চারাগাছ জন্মায়। অত:পর যেটি ছায়ার কাছাকাছি থাকে, তা সবুজ হয়। আর যেটি রোদের তাপের নিকটবর্তী, তা হয় হরিদন্সাভ। এভাবে তারা বেহেশতে প্রবেশ করতে থাকবে, তাদের কপালে লেখা থাকবে – আল্লাহ্ কর্তৃক দোযখ থেকে মুক্ত, শুধু এক ব্যক্তি ছাড়া। সে তাদের পরও সেখানে এক হাজার বছর অবস্খান করবে, তারপর এই বলে ডাকবে, “হে হান্নান, হে মান্নান”। তখন তাকে বের করে আনার জন্য আল্লাহ্ এক ফেরেশতাকে পাঠাবেন। ফেরেশতা তার খোঁজে দোযখে প্রবেশ করবে, তারপর সত্তর বছর পর্যন্ত তালাশ করবে, কিন্তু তার কোন খোজ পাবে না। অত:পর সে ফিরে এসে বলবে, “আপনি আমাকে আপনার অমুক বান্দাকে দোযখ থেকে বের করে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি সত্তর বছর পর্যন্ত খোজ করে তাকে পেলাম না। তাই তাকে বের করা সম্ভব হল না।” তখন আল্লাহ্ বলবেন –“যাও সে অমুক উপত্যকায় একটি পাথরের নিচে আছে, তাকে সেখান থেকে বের করে আন।” ফেরেশতা আবার যাবে এবং তাকে সেখান থেকে বের করে আন।” ফেরেশতা আবার যাবে এবং তাকে সেখান থেকে বের করে আনবে, অত:পর বেহেশতে প্রবেশ করাবে।”
হাকীম, তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১২৮. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই আমি কেয়ামতের দিন মানুষের নেতা হব, এতে কোন গর্ব বা অহংকার নেই। আর মানুষদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, কেয়ামতের দিন আমার পতাকাতলে উপস্খিত থাকবে না এবং মুক্তির প্রতীক্ষা করবে না। সেদিন আমার হাতে থাকবে হামদ বা প্রশংসার পতাকা, আমি চলতে থাকব এবং মানুষেরাও আমার সাথে হাঁটতে থাকবে। এমনকি আমরা বেহেশতের দরজায় এসে উপনীত হব এবং তা খোলার ইচ্ছা করব। তখন বলা হবে, তুমি কে? আমি বলব, মুহমôদ (সা:)। বলা হবে, মুহমôদকে স্বাগতম। অত:পর আমি আমার মহান প্রতিপালককে দেখব এবং শুকরিয়া চিত্তে তাঁর সামনে সিজদায় নত হব। আমাকে বলা হবে, মাথা তোল এবং চাও। তুমি যা চাইবে তাই তোমাকে দেয়া হবে। তুমি সুপারিশ করলে তা মঞ্জুর করা হবে।” অত:পর যে লোক জাহান্নামের আগুনে জ্বলছে সেও আল্লাহর রহমত ও আমার শাফাআ’তের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে।”
হাকেম, আহমদ ও বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
বাবা-মা’র জন্য ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের শাফাআ’ত:
১২৯. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে বলা হবে, “তোমার বেহেশতে প্রবেশ কর।” তখন তারা বলবে, “হে প্রতিপালক! যে পর্যন্ত আমাদের পিতা-মাতা জান্নাতে না যাবে (সে পর্যন্ত আমরা জান্নাতে প্রবেশ করব না)। এতএব তারা ফিরে আসবে। তখন মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলবেন, “একি? আমি দেখছি তোমরা দেরি করছ, সত্বর তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর।” তারা বলবে, “হে প্রতিপালক! আমাদের পিতা-মাতা কোথায়? তখন আল্লাহ্ বলবেন, “তোমাদের পিতামাতাকে (সাথে) নিয়ে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর।”
আহমদ এ হাদীসটি কোন এক সাহাবী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
পিতা -মাতার অবাধ্য ও অনুগত সন্তান সম্পর্কে:
২৩০. রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- পিতা-মাতার অবাধ্যচারীকে বলা হবে, “আমার আনুগত্য প্রদর্শনে তুমি যে আমলই কর না -কেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ক্ষমা করব না।” আর পিতা-মাতার অনুগত সন্তানকে বলা হবে, “তুমি যা ইচ্ছে তাই কর, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব।”
আবূ নুআঈম এ হাদীসটি হযরত আয়েশা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
মেয়েদের দন্সুত বিয়ে দেয়া সম্পর্কে:
২৩১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তাওরাতে লেখা আছে, “যার কোন মেয়ে বার বছর বয়সে পৌঁছে অথচ সে তাকে বিয়ে দেয় না- অত:পর সে কোন পাপে লিপ্ত হয়, তবে মেয়ের সে পাপ তার উপরও বর্তায়।”
বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ:) সম্পর্কে:
১৩২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ হযরত আদম (আ)- কে বললেন, “হে আদম! আমি আমার আমানত আকাশসমূহ ও যমীনের প্রতি পেশ করেছিলাম। কিন্তু এরা তা বহনে সক্ষম হয়নি। তুমি কি এ আমানত ও তাতে যা কিছু রয়েছে তা বহনে প্রস্তুত আছ?” তিনি নিবেদন জানালেন, “আমার জন্য তাতে কি (প্রতিদান) আছে ইয়া রব্বী!” আল্লাহ বললেন, “তুমি যদি তা বহনে সক্ষম হও তবে তোমাকে প্রতিদান দেয়া হবে। আর তুমি যদি তা বিনষ্ট কর, তবে তোমাকে শাস্তি দেয়া হবে।” আদম (আ:) বললেন, “আমি তা বহন করলাম এবং তাতে যা কিছু রয়েছে তাও।” এর পরে আদম (আ:) প্রথম নামায ও আসরের নামাযের মধ্যবর্তী সময়টুকু ছাড়া বেহেশতে অবস্খান করেননি, বরং শয়তান তাকে সেখান থেকে বের করে দিল।”
আবুশ শায়খ এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৩৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, আমার কোন বান্দার পক্ষে এ দাবি করা ঠিক নয় যে, সে ইউনুস ইবনে মাত্তার চেয়ে শেন্সষ্ঠতর।”
মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৩৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আমি যেন ইউনুস ইবনে মাত্তাকে দেখছি, তার দেহে দু’টি সূতীর চাদর রয়েছে। সে তালবিয়া পাঠ করছে, পাহাড়সমূহ জওয়াব দিচ্ছে (তার আওয়াজ পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে) আর মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ তাকে বলছেন, “আমি উপস্খিত আছি, হে ইউনুস! এই যে আমি তোমার সাথে রয়েছি।”
দারেকুতনী এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৩৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ যখন আইউব (আ) কে মার্জনা করলেন, তার উপর সোনালি পঙ্গপাল বর্ষণ করলেন। আইউব (আ) সেগুলোকে তাঁর হাতে ধরতে লাগলেন এবং কাপড়ে জড়াতে লাগলেন। সে সময় তাকে বলা হল, “ওহে আইউব! তুমি কি পরিতৃপ্ত নও?” প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, “তোমার অনুগ্রহ হতে কে তৃপ্ত হয়?”
হাকেম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৩৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- হযরত আইউব (আ) একদিন বস্ত্রহীন অবস্খায় গোসল করছিলেন। এমন সময় তাঁর উপর সোনার পঙ্গপাল পতিত হতে লাগল। হযরত আইউব (আ) সেগুলোকে তাঁর কাপড়ে জড়াতে লাগলেন। অনন্তর তার মহান ও মুবারক রব তাঁকে ডেকে বললেন, “হে আইউব! তুমি যা দেখছ তোমাকে কি তারচেয়ে সম্পদশালী করিনি?” তিনি আরজ করলেন, “হ্যাঁ। আপনার ইযযতের কসম! কিন্তু আমি আপনার দান ও বরকত থেকে অভাবমুক্ত নই।”
বুখারী, নাসায়ী ও মুসনাদে আহমদ এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৩৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)-এর প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন- “কেয়ামতের দিন জনৈক বান্দা একটি মাত্র পুণ্য নিয়ে উপস্খিত হবে। আমি তাকে তার বিনিময়ে বেহেশতে প্রবেশের নির্দেশ দেব।” দাউদ (আ) নিবেদন করলেন, “ইয়া রব! কে সে বান্দা? তিনি বললেন, “যে মু’মিন বান্দা তার মু’মিন ভাইয়ের প্রয়োজন পুরণের জন্য দৌড়ে যায়। তার উদ্দেশ্য এ থাকে যে, মানুষের প্রয়োজন পুরণ হউক, তা তার হাতে হোক কিংবা আর কারো হাতে।”
খাতীব এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগন্সহ করেছেন।
১৩৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ্ আদম (আ:) এর প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করে বললেন, “হে আদম! তোমার উপর কোন নূতন বিপদ ঘটার আগে তুমি এ ঘরের হজ্জ সম্পন্ন করে নাও।” তিনি বললেন, “ইয়া রাব্বী! আমার উপর কি বিপদ ঘটবে!” তিনি বললেন, “যা কিছু জান না – অর্থাৎ মৃত্যু।” আদম (আ) নিবেদন করলেন, “মৃত্যু কি?” আল্লাহ বললেন, “অচিরেই তুমি এর স্বাদ আস্বাদন করবে।”
এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে দায়লামী সংগ্রহ করেছেন।
১৩৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ হযরত ঈসা ইবনে মরিয়াম (আ) এর প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “হে ঈসা! ইসরাঈ’ল বংশের নেতাদেরকে বলে দাও- যে লোক আমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোযা রাখবে, আমি তাকে দৈহিক সুস্খতা দান করব এবং তার প্রতিদান বাড়িয়ে দেব।”
আবুশ শায়খ এ হাদীসটি হযরত আবু দারদা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৪০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ ইবরাহীম (আ:)-এর প্রতি ওহী প্রেরণ করলেন, “হে খলীল! তুমি তোমার আচরণ সুন্দর কর, যদি তা অবিশবাসীদের সাথেও হয়। তবে তুমি নেককারদের পর্যায়ভুক্ত হবে। কারণ আমার আমার উক্তি আগেই লেখা হয়েছে যে, যার আচরণ সুন্দর হবে তাকে আমার আরশের ছায়াতলে ছায়াদান করব, আমার পবিত্র বেহেশতের প্রকোষ্ঠে আমার নৈকট্য রাখব।”
হাকীম ও তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৪১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান হযরত আল্লাহ্ মূসা (আ:) এর প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “নিশ্চয়ই তোমার সম্প্রদায় তাদের মসজিদসমূহ নির্মাণ করেছে। অথচ তাদের হৃদয়গুলো কলুষিত করে নিয়েছে। আর তারা এমনভাবে মোটাতাজা হয়েছে, শুকরগুলোকে হত্যার সময় যেমন মোটা হয়ে থাকে। আর নিশ্চয়ই আমি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেছি, অত:পর তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছি। এতএব আমি তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেব না এবং তাদেরকে তাদের কাম্য বস্তু দেব না।”
ইবনে মানদা ও দায়লামী এ হাদীসটি ওহী লেখক হযরত হানযালা (রা) এর চাচাত ভাইয়ের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন।
মসজিদ সম্পর্কে:
১৪২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমার যখন কাউকে সর্বদা মসজিদ সমূহে যাতায়াত করতে দেখ, তখন তাকে মু’মিন হিসেবে সাক্ষ্য দিতে কুন্ঠিত হইও না। কারণ আল্লাহ্, বলেন, “নিশ্চয়ই যে লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে সে আল্লাহ্র মসজিদ আবাদ করে।”
এ হাদীসটি হাকেম হযরত আবূ সাঈদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৪৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমরা যখন কোন লোককে মসজিদে যাতায়াতে অভ্যস্ত দেখ, তখন তার ঈমান আছে বলে তার পক্ষে সাক্ষ্য দাও। কারণ মহান আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও কেয়ামতের দিনের উপর ঈমান এনেছে, সে আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করে।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত আবূ সাঈদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর প্রতিবেশী:
১৪৪ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ্ উচ্চস্বরে আহবান করতে থাকবেন, “আমার প্রতিবেশী কোথায়!” “আমার প্রতিবেশী কোথায়!” ফেরেশতাগণ তখন নিবেদন জানাবেন- “হে আমাদের প্রতিপালক! কার পক্ষে আপনার প্রতিবেশী হওয়া সম্ভব?” তিনি তখন বলবেন, “মসজিদসমূহ আবাদকারিগণ কোথায়?”
এ হাদীসটি ইবনুন- নাজ্জার হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আযান সম্পর্কে:
১৪৫ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কোন মুয়াযযিন যখন আযান দেয়া শুরু করে, তখন প্রতিপালক তার মাথার উপর স্বীয় হাত রাখেন, তিনি সে পর্যন্ত হাত স্খির রাখেন যে পর্যন্ত সে আযান শেষ না করে। আর নিশ্চয় তার কন্ঠস্বর বিস্তৃতির দূরত্ব পর্যন্ত তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। তারপর সে যখন আযান শেষ করে অবসর নেয়, তখন রব বলেন –“হে আমার বান্দা! তুমি সত্য বলেছ এবং তুমি সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছ। সুতরাং তুমি সুসংবাদ লও।”
হাকেম এ হাদিসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
ওযু সম্পর্কে:
১৪৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমাদের উপর কতগুলো বন্ধন রয়েছে, অত:পর কেউ যখন ওযুরত অবস্খায় তার হাত ধোয়, তখন একটি বন্ধন উমেôাচিত হয়, আর যখন সে তার চেহারা ধোয়, তখন একটি বন্ধন খুলে যায়, আর সে যখন তার মাথা মাসেহ করে, তখন একটি বন্ধন খুলে যায়, আর সে যখন তার দু’পা ধোয় তখন একটি বন্ধন খুলে যায়। তারপর পর্দার অন্তরাল থেকে আল্লাহ্ বলেন, “আমার এ বান্দার প্রতি তোমরা লক্ষ্য কর, সে তার নিজের আত্নার চিকিৎসা করছে, সে যা ইচ্ছে তাই আমার কাছে চাইতে পারে। আমার বান্দা আমার কাছে যা কিছু প্রার্থনা করে, তা তার জন্য তাই রয়েছে।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত উকবা ইবনে আমের (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
নামায সম্পর্কে:
১৪৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “(হে মুহামôদ)! আমি তোমার উমôতের প্রতি পাঁচটি নামায ফরজ করেছি। আর স্বয়ং আমি এ ওয়াদা করেছি যে, যে লোক এ নামাযগুলো সঠিক সময়ে যত্নসহকারে রক্ষনাবেক্ষন(আদায়) করবে, আমি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাব। আর যে সেগুলো রক্ষনা-বেক্ষন করবে না, তার জন্য আমার কোন প্রতিশ্রুতি নেই।”
ইবনু মাজা এ হাদীসটি হযরত আবূ কাতাদা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৪৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমার প্রতিপালনকারী সেই বকরীর রাখালের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট, যে কোন পাহাড় চুড়ায় বকরী চড়ায়, নামাযের জন্য আযান দেয় এবং নামায আদায় করে। অত:পর মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ বলেন –“তোমরা আমার এ বান্দার প্রতি খেয়াল কর; সে আযান দেয়, নামায আদায় করে ও আমাকে ভয় করে। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিয়েছি এবং তাকে বেহেশতে প্রবেশ করার অধিকার দিলাম।”
এ হাদীসটি হযরত উকবা ইবনে আমের (রা:) থেকে আহমদ সংগ্রহ করেছেন।
১৪৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- বান্দার কাছ থেকে কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে বিষয়ের হিসেব গ্রহণ করা হবে তা হল তার নামায। সে যদি তা পুরোপুরীভাবে আদায় করে থাকে তবে তা পুরো লেখা হবে। আর সে যদি তা পুরোপুরী আদায় না করে থাকে, তবে মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বলবেন –“দেখ, আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা, যার দ্বারা তোমরা তার ফরজ পুরো করে নিতে পার।” অত:পর যাকাত সম্বন্ধে অনুরূপভাবে হিসেব গ্রহণ করা হবে। তারপর তার সমূদয় আমলের হিসেব অনুরূপভাবে নেয়া হবে।”
আহমদ ও আবূ দাউদ এ হাদীসটি তামীনদারী ও হযরত আবনে আবি শায়বা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৫০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- রক্ষণাবেক্ষণকারী উভয় ফেরেশতা কারো নামাযের সাথে যুক্ত নামায আল্লাহর কাছে উঠিয়ে নেন না, বরং সুমহান আল্লাহ বলেন, “আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, আমি আমার বান্দার দু’নামাযের মধ্যবর্তী পাপ সমূহ ক্ষমা করে দিয়েছি।”
বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করছেন।
১৫১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেন- নামাযকে অর্ধেক অর্ধেক করে আমার ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। আমার বান্দা আমার কাছে যা যাâঞা করে তা তার জন্য। অনন্তর বান্দা যখন বলে –“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশব পালনকর্তা” তখন আল্লাহ বলেন – আমার বান্দা আমার যথাযথ প্রশংসা করেছে। অত:পর সে যখন বলে- “তিনি করুনাময় ও অসীম দয়ালু”, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার গুণকীর্তন করেছে। এরপর সে যখন বলে –“তিনি বিচার দিনের মালিক”, তখন আল্লাহ বলেন – আমার বান্দা আমার মর্যাদা প্রকাশ করেছে। সে যখন বলে – “আমরা তোমারই এবাদত করি আর তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি”, তখন আল্লাহ বলেন, “এটা আমার ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধাঅর্ধি। আমার বান্দা যা চায় তা তার জন্য।” অত:পর যখন সে বলে- “আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত কর তাদের পথে, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ, অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথে নয়” তখন আল্লাহ বলেন – “এটা আমার বান্দার অংশ। আর আমার কাছে আমার বান্দা যা চায় তা তার জন্য।”
আহমদ ও মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আবূ হোরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৫২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমরা কি জান তোমাদের প্রভূ কি বলেন? তিনি বলেন, “যে লোক নামাযগুলো তাদের সুনিদিষ্ট সময়ে আদায় করে, তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে, আর তাদের প্রতি ন্যাস্ত দায়িত্ব অগ্রাহ্য করে বিনষ্ট করে না, তার প্রতি আমার কর্তব্য এই যে, আমি তাকে বেহেশতে প্রবশে করাব। আর যে লোক এ নামাযগুলো তাদের নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করে না, তাদের রক্ষনা-বেক্ষন করে না, আর তাদের দায়িত্ব উপেক্ষা করে তা বিনষ্ট করে ফেলে, তার জন্য আমার কোন প্রতিশ্রুতি নেই। আমি যদি ইচ্ছা করি তাকে শাস্তি দিতে পারি, আর যদি ইচ্ছা করি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারি।”
তাবরানী এ হাদীসটি হযরত কাব ইবনে উজরাহ (রা) থেকে সংগ্রহ করছেন।
১৫৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, তিনটি বস্তু আছে, যে লোক এগুলোর রক্ষনাবেক্ষণ করে, সে আমার প্রকৃত বন্ধু। আর সেগুলো যে বিনষ্ট করে, সে আমার শত্রু। তা হচ্ছে- নামায, রোজা ও ফরজ গোসল।”
এ হাদীসটি ইবনুন নাজ্জার হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
ফযর নামাযের তা’কীদ:
১৫৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! দিনের প্রথমাংশে চার রাকাআ’ত নামায আদায়ে অপারাগ হয়ো না, ওর শেষে আমি তোমাকে যথেষ্ট সাহায্য করব।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আবুদ্ দারদা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
নামাযের কথা ভুলে গেলে:
১৫৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যে লোক নামাযের কথা ভূলে যায়, তার দায়িত্ব হল- যখন তা সôরণ হবে তখনই সে তা আদায় করে নেবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, “নামায কায়েম কর আমার স্বরণে।”
মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
শেষে রাতের নামায ও এবাদাত:
১৫৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আমার উমôতের জন্য আমি যদি এটা কষ্টকর মনে না করতাম তবে নিশ্চয় আমি এশার নামায রাতের এক-তৃতীয়াংশ কিংবা অর্ধেকের পরে সরিয়ে দিতাম। কারণ, যখন রাতের অর্ধেক অতিক্রান্ত হয়, তখন মহান আল্লাহ্ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, “কোন ক্ষমা কামনাকারী আছে কি, যেন আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি? কোন তওবাকারী আছে কি, যেন আমি তার তওবা মঞ্জুর করতে পারি? কোন প্রার্থনাকারী আছে কি, যেন আমি তার প্রার্থনা কবুল করতে পারি?” (ততক্ষণ পর্যন্ত এ আহবান চলতে থাকে) যে পর্যন্ত না ফজরের উদয় হয়।
আহমদ এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৫৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে, তখন মহান আল্লাহ্ বলেন, “কে সে ব্যক্তি, যে বিপদ দুরীকরণ কামনা করে যেন আমি তার বিপদ দূর করতে পারি? কে সে ব্যক্তি, যে আমার কাছে জীবিকা প্রার্থনা করে যেন আমি তাকে তা প্রদান করতে পারি।”
আবূ দাঊদ এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা(রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৫৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- প্রত্যেক রাতে আমাদের মহান ও মুবারক প্রতিপালক পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন। কারণ যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকে, তখন তিনি বলেন, “কে আমাকে আহবান করবে,, আমি যেন তার ডাকে সাড়া দিতে পারি? কে আমার কাছে চাইবে, যেন আমি তাকে প্রার্থিত বস্তু দিতে পারি? কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যেন আমি তাকে মাফ করতে পারি?
মালিক ও শায়খাইন এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৫৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকে, তখন আল্লাহ্ পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন- “কে আছ, যে আমাকে ডাকবে যাতে আমি তার ডাকে শাড়া দিতে পারি? কে আছ, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে যাতে আমি ক্ষমা করতে পারি? কে আছ, যে আমার কাছে বিপদ মুক্তির জন্য প্রার্থনা করে, যাতে আমি তার বিপদ দূর করতে পারি? কে আছ, যে আমার কাছে জীবিকা চাইবে, যাতে আমি তাকে জীবিকা দিতে পারি?” সকাল না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ্ এরূপ বলতে থাকেন।
ইবনুুন নাজ্জার এ হাদীসটি আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
প্রকৃত গোলাম:
১৬০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় কোন বান্দা যখন প্রকাশ্যে নামায পড়ে এবং তা ভালভাবে সম্পন্ন করে, আর সে যখন গোপনে নামায (নফল) আদায় করে তখন আল্লাহ্ বলেন, “এ আমার প্রকৃত গোলাম।”
ইবনে মাজা এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৫ ই শা’বান বা শবে বরাত সম্পর্কে:
১৬১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন অর্ধ শা’বানের (অর্থাৎ পনরই শা’বানের) রাত আসে তখন তোমরা সে রাতে কিয়াম অর্থাৎ এবাদাত কর এবং দিনে রোযা রাখ। কারণ আল্লাহ্ তাতে সূর্যাস্তের পর পরই পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, “কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী কি নেই যে, আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি? কোন জীবিকা অনুসন্ধানকারী কি নেই যে, আমি তাকে জীবিকা দিতে পারি? কোন অসুস্খ ব্যক্তি কি নেই যে, আমি তাকে সুস্খতা দান করতে পারি? কোন প্রার্থনাকারী কি নেই যে, তাকে আমি প্রার্থিত বস্তু দিতে পারি? এরূপ নেই কি? ” ফজর উদয় না হওয়া পর্যন্ত বলা হতে থাকে।
ইবনে মাজা এ হাদীসটি হযরত আলী (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
রোযা সম্পর্কে
রোযা আল্লাহর একান্ত নিজের:
১৬২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “পূণ্য দশগুন ও তার চেয়েও বেশি ধরা হয়। আর পাপ একটিই ধরা হয়, তাও আমি মুছে ফেলি। আর রোযা আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।” রোযা মহান আল্লাহর আযাব থেকে পরিত্রানের ঢালস্বরূপ। যা দিয়ে তরবারীর মত অস্ত্র থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।
বাগাভী এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন।
১৬৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক বলেন, “প্রতিটি পূণ্য ওর দশগুনের সমপরিমাণ হতে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত ধরা হয়। কিন্তু রোযা আমারই জন্য, আর আমিই ওর প্রতিদান দিয়ে থাকি।” রোযা দোযখ থেকে পরিত্রানের ঢাল স্বরূপ আর রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির গন্ধের চেয়েও বেশি সুরভিত। আর যখন রোযা রাখা অবস্খায় তোমাদের বিরুদ্ধে কোন মুর্খ তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে, তখন তার বলা দরকার, আমি রোযাদার।”
তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৬৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ্ যদি ইচ্ছা করেন আদম সন্তানের প্রতিটি আমলের সওয়াব দশগুন থেকে সাতশ’গুণ পর্যন্ত অথবা তার চেয়েও বেশি বাড়িয়ে দেয়া হয়। মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, শুধু রোযা ছাড়া।“কারণ তা বিশেষভাবে আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেব। আমার জন্য সে তার কামস্পৃহা ও আহার বর্জন করে।” রোযাদারের জন্য আনন্দ রয়েছে, একটি আনন্দ তার ইফতারের সময়, আর অপরটি তবে প্রতিপালকের দিদার লাভের সময়। নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।”
আহমদ ও মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৬৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, “আদম সন্তানের প্রতিটি কর্ম তার নিজের জন্য, একমাত্র রোযা ছাড়া। নিশ্চয় তা আমার জন্য এবং আমিই ওর প্রতিদান দেব।” রোযা একটি ঢালস্বরূপ। তোমাদের কারো জন্য যখন রোযার দিন উপস্খিত হয়, সে যেন কোন মন্দ কথা না বলে এবং চিৎকার না করে। আর কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা তার সাথে ঝগড়া কর, তখন তার কসম! নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির গন্ধের চেয়েও উত্তম। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে যা সে উপভোগ করে, যখন সে ইফতার করে তখন এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে দেখা করবে তখন।”
শায়খাইন এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৬৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।” নিশ্চয়ই রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে -একটি যখন সে ইফতার করে তখন, আরেকটি যখন সে আল্লাহর সাথে দেখা করবে এবং আল্লাহ্ তাকে প্রতিদান দেবেন তখন। আর যার হাতে মুহামôদের জীবন, তার কসম! নিশ্চয়ই রোযাদারদের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির গন্ধের চেয়েও বেশী সুগন্ধময়।”
নাসায়ী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৬৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “বান্দাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় সে লোক, যে ইফতারের (রোযা খুলার) ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তরাম্বিত।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৬৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- রোযা ঢালস্বরূপ, তা মু’মিনের দুর্গসমূহের একটি দুর্গ। আমল তার আমলকারীর জন্য। আল্লাহ্ বলেন, “রোযা আমার জন্য এবং আমিই ওর প্রতিদান দেব।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আবূ উমামা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৬৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ইসরাঈল বংশের জনৈক নবীর প্রতি এ প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছিলেন, “তোমার সম্প্রদায়কে এ সংবাদ দাও যে, এরূপ কোন বান্দা নেই, যে আমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোন এক দিন রোযা না রাখে; আমি যখন তাকে দৈহিক সুস্খতা দান করি এবং তাকে বড় রকমের পুরস্কার দিয়ে থাকি।”
বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৭০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ্ রি ফেরেশতাদেরকে (কেরামান কাতেবীন) এ বলে প্রত্যাদেশ করেন যে, “আসরের পরে আমার রোযাদার বান্দাদের কোন পাপ লিখ না।”
হাকেম এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৭১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেন, “যার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমার নিষিদ্ধ কর্মগুলো থেকে রোযা রাখে না (নিবৃত হয় না), আমার জন্য তার পানাহার বর্জনের কোন প্রয়োজন নেই।”
আবূ নুয়াইম এ হাদীসটি হযরত ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৭২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ বলেছেন, “আদম সন্তানের প্রতি আমল তারই জন্য, শুধু রোযা ছাড়া। রোযা আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। নিশ্চয়ই রোযাদারের মুখের গন্ধ আমার কাছে মৃগনাভির গন্ধের চেয়েও বেশি সুগন্ধময়।”
ইবনে হাব্বান এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
ইয়াওমুল বীযের রোযা:
১৭৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় আদম (আ) যখন ভূল বশত অবাধ্য হলেন এবং গাছের ফল খেলেন, আল্লাহ্ তখন তার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করলেন, “হে আদম! আমার কাছ থেকে নেমে যাও। আমার ইযযতের কসম! যে আমার অবাধ্য হয়েছে, সে আমার কাছে থাকতে পারবে না।” অনন্তর মলিন মুখে তিনি দুনিয়াতে নেমে এলেন। তখন ফেরেশতাগণ সিজদায় পড়ে ফরিয়াদ জানাতে লাগল এবং বলল, “হে প্রতিপালক! তুমি নিজ হাতে যা সৃষ্টি করেছে, যাকে বেহেশতে স্খান দিয়েছে, একটি মাত্র পাপের কারণে তার সমুদায় উজ্জলতা পাল্টে দিলে?” অনন্তর আল্লাহ্ প্রত্যাদেশ করে বললেন, হে আদম! আমার উদ্দেশ্যে মাসের ১৩ তারিখ এ দিনটিতে রোযা রাখ, ” অত:পর আদম (আ) সেদিন রোযা রাখলেন, তারপর তার দেহের একতৃতীয়াংশ সাদা হয়ে গেল। তারপর আল্লাহ্ পুনরায় প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “হে আদম! আমার জন্য মাসের ১৪ তারিখ এ দিনটিতে রোযা রাখ” তারপর আল্লাহ্ তার কাছে প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “হে আদম! তুমি আমার উদ্দেশে ১৫ তারিখ এ দিনটিতে রোযা রাখ”, তখন তিনি সেদিন রোযা রাখলেন, তারপর তার পুরো দেহ সাদা হয়ে গেল। অত:পর এ দিনগুলির নাম রাখা হয়েছে আইয়ামুল বীয অর্থাৎ শেবত-শুভ্র দিবস।”
খাতীব এ হাদীসটি হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
শবে ক্বদর ও দু’ঈদ সম্পর্কে:
১৭৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন ক্বদরের রাত আসে, তখন জিবরাঈ’ল (আ) ফেরেশতাদের একটি দলসহ অবর্তীন হন এবং যে বান্দা দাড়ানো কিংবা বসা অবস্খায় আল্লাহর সôরণ করে, তাদের প্রত্যেকের প্রতি দু’আ বর্ষণ করতে থাকেন। অত:পর যখন তাদের ঈ’দ আসে, তখন আল্লাহ ্ তাদের জন্য তার ফেরেশতাদের সামনে গৌরব করে বলেন, “হে আমার ফেরেশতাগণ! যে শন্সমিক তার কাজ শেষে করেছে তার কি পন্সতিদান হতে পারে?” ফেরেশতাগণ নিবেদন করেন, “হে আমাদের রব! তার প্রতিদান হচ্ছে, তার ‘পুরো পারিশন্সমিক’ দিয়ে দেয়া।” আল্লাহ্ বলেন, “হে ফেরেশতাগণ! আমার বান্দা ও বাদীগণ, তাদের প্রতি আমার নির্ধারিত ফরয পুরণ করেছে, তারপর উচ্চ:স্বরে আমার কাছে দু’আ করতে করতে ঈ’দের নামাযের জন্য বেরিয়ে এসেছে। এতএব আমার ইযযত ও জালালের কসম! আমার অনুগ্রহ, আমার উচ্চ মর্যাদা ও আমার উচ্চ পদের কসম! নিশ্চয়ই আমি তাদের দু’আ কবুল করব।” তারপর তিনি বলেন, “তোমরা প্রত্যাবর্তন কর, নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে মাফ করে দিয়েছি। অত:পর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্খায় ফিরে আসবে।”
বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
হজ্জ সম্পর্কে:
১৭৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “যে লোক আমার ঘরে কিংবা আমার রাসূলের ঘরে অথবা বায়তুল মুকাদ্দাসে এসে আমায় যিয়ারাত করেছে, অত:পর মারা গিয়েছে, সে শহীদী মৃত্যুবরণ করেছে।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৭৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যে লোক বৈধ, অথবা ব্যবসায়ের, অথবা ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ দ্বারা হজ্জ আদায় করে, আরাফাতের ময়দান থেকে বেরুবার আগেই তার পাপরাশি মাফ করে দেয়া হয়। আর কোন ব্যক্তি যখন অবৈধ-হারাম সম্পদে হজ্জ করে এবং বলে, ‘আমি তোমার সমীপে উপস্খিত আছি, তখন আল্লাহ বলেন, ‘তোমার কোন উপস্খিতি এবং মঙ্গল নেই। অনন্তর তার আমলনামা গুটিয়ে নেয়া হয় এবং তা তার চেহারার উপর ছুড়ে মারা হয়।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৭৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যে লোক এরূপ পাথেয় ও পথ খরচের অধিকারী যা তাকে আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌছাতে পারে, অথচ সে হজ্জ করেনি, তার জন্যে ইয়াহূদী বা খৃষ্টান হয়ে মারা যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। আর এটা আল্লাহ্ তার কিতাবে বলেন, “আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাঁর ঘরে হ্জ করার সামর্থ্য যার আছে, তার জন্যে হজ্জ্ব করা আবশ্যক (কর্তব্য)। আর যে লোক এটা অস্বীকার ও অমান্য করে (তার মনে রাখা উচিত যে) আল্লাহর বিশববাসীদের মুখাপেী নন।”
তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৭৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- উকুফে আরাফা বা আরাফার সন্ধ্যায় সেখানে থেমে থাকার তাৎপর্য এই যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সে সময় পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং ফেরেশতাদের সাথে তোমাদের বিষয়ে গর্ব করে বলেন, আমার এ সকল বান্দা ধুলি- ধুসরিত অবস্খায় আমার করুনা লাভের আশায় আমার কাছে এসেছে। এতএব, যদি তোমাদের পাপসমূহ বালুকণার সমসংখ্যকও হয় বা বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায় অসংখ্যা হয়, কিংবা গাছের বালুকণার সমসংখ্যকও হয় বা বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায় অসংখ্য হয়, কিংবা গাছের পাতার মত অগণিত হয়, তথাপি নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে মাফ করে দেব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্খায় অগ্রসর হও এবং যাদের জন্য তোমরা সুপারিশ করেছ তারাও ক্ষমাপ্রাপ্ত।”
ইবনে আসাকির এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৭৯ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ বলেন, “আমি যে বান্দার শরীর সুস্খ রেখেছি এবং তার জন্য তার জীবিকা প্রশস্ত করে দিয়েছি, আর এ অবস্খায় পাঁচ বছর চলে গিয়েছে, যার মধ্যে সে আমার দিকে আসেননি, নিশ্চয়ই সে বঞ্চিত হবে।”
আবূ ইয়ালা এ হাদীসটি হযরত আব্বার (র:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৮০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন আরাফাতের দিন আসে, তখন মহান ও পরাক্রান্ত রব পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং হাজীদের সম্পর্কে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, “আমার বান্দাদের প্রতি লক্ষ্য কর, তারা উüকখুüক মাথায় ধুলি-ধুসরিত চেহারা নিয়ে বহুদূর থেকে আমাকে উচ্চৈস্বরে ডাকতে ডাকতে আমার ঘর দেখতে দুর্গম গিরিপথ অতিক্রম করে আমার কাছে এসেছে। আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখছি যে, তাদেরকে আমি মাফ করে দিয়েছি।” অত:পর ফেরেশতাগণ নিবেদন করে, “ইয়া রব! তাদের মধ্যে নিশ্চয়ই অমুক ও অমুক পাপীও রয়েছে।” তখন আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছে।” রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “আরাফাতের দিন ছাড় আর কোন এমন দিন নেই, যেদিন এত বেশি সংখ্যক মানুষকে দোযখের আগুন থেকে মুক্ত করা হয়।”
ইবনু আবিদ-দুনয়া এ হাদীসটি হযরত জাবির (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৮১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি যে বান্দার দেহ সুস্খ রেখেছি এবং তার জীবিকা প্রশস্ত করে দিয়েছি আর এ অবস্খায় পাঁচ বছরের মধ্যে সে আমার ঘর যিয়ারত করতে আসেনি, অবশ্যই সে মাহরুম হবে।”
ইবনে আদী ও বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
যাকাত সম্পর্কে:
১৮২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় আমি সুষ্ঠুভাবে নামায কায়েম করা ও যাকাত দান করার উদ্দেশ্যে ধন-দৌলত অবর্তীন করেছি। কোন আদম সন্তানের যদি এক উপত্যকা সমান সম্পদ থাকে, তখন সে নিশ্চয় কামনা করে, তার জন্য যেন দ্বিতীয় উপত্যকা সমান সম্পদ আসে। আর তার যদি দু’উপত্যকা সমান সম্পদ থাকে, তবে সে নিশ্চয় বাসনা করে, তার জন্য তৃতীয় উপত্যকা পরিমাণ সম্পদ আসুক। আর আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড় অন্য কোন বস্তু পূর্ণ করতে পারবে না।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত আবূ ওয়াকিদ লায়সী থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৮৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “হে আদম! তোমার ধন ভান্ডার আমার কাছে গচ্ছিত রাখ, তোমার সম্পদে না আগুন লাগবে, না তা পানিতে ডুববে, না তা চুরি হবে। তুমি যখন ওটার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ করবে, আমি তখন তোমাকে তা পুরো মাত্রায় দেব।”
বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত হাসান বসরী (র:) থেকে সংগ্রহ করিয়াছেন।
১৮৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! তোমার কাছে এ পরিমাণ সম্পদ থাকতে পারে, যা তোমার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট, অথচ তুমি এ পরিমাণ চাও যা তোমাকে বিভ্রান্ত ও বিদেন্সাহী করে তুলবে। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সুস্খ দেহে রাত ভোর কর, তোমার পরিবার ও পশুপালের ভেতর তুমি নিরাপদে থাক এবং তোমার কাছে এক দিনের খাদ্য মওজুদ থাকে, তবে অবশিষ্টটা সমস্ত পৃথিবীর জন্য হোক।”
ইবনু আ’দী এ হাদীসটি হযরত উমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
দান-সদকা সম্পর্কে:
১৮৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! আল্লাহর জন্য তুমি ব্যয় কর, তোমার জন্য ব্যয় করা হবে। কারণ আল্লাহর দণি হাত পরিপূর্ণ ও দানশীল, দিনরাতের দান ওর কিছুই হন্সাস করতে পারে না।”
দারুকুতনী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
১৮৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- জিবরাঈল (আ:) আমাকে বলেছেন, “মোবারক ও মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই এটা এরূপ একটি ধর্ম, যা আমি আমার নিজের জন্য পছন্দ করি, আর কিছু কখনও এর শুদ্ধি করতে পারবে না। এতএব যত দিন তোমরা ওর সাথে সংশ্লিষ্ট থাক ততদিন ওকে দানশীলতা ও সচ্চরিত্রতা দ্বারা সমôান দাও।”
ইবনু আসাকির এ হাদীসটি হযরত জাবির (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৮৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “আমার উদ্দেশ্যে ব্যয়কারী আমাকে ঋণ দিয়ে থাকে। আর নামায আদায়কারী আমার সাথে গোপনে বাক্যালাপ করে।”
এ হাদীসটি দায়লামী সংগ্রহ করেছেন।
১৮৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! তোমার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে ফেলা কল্যানকর। আর তা সঞ্চিত রাখা তোমার জন্য অমঙ্গলজনক। তোমরা জীবিকার সমপরিমাণ (তোমার হাতে) রাখার জন্য তুমি নিন্দনীয় নও। নিজ পরিবারের লোকজন থেকে ব্যয় করা শুরু কর। নিচের হাত থেকে উপরের হাত উত্তম।”
বায়হাকী এ হাদিসটি হযরত আবূ উমামা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৮৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেছেন, “তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর, তোমার জন্য ব্যয় করা হবে।”
বুখারী ও মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- অত:পর হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদের জন্য আগে ভাগে কিছু পাঠাও। অত:পর তার প্রতিপালক নিশ্চয় তাকে বলবেন, “তার কোন মধ্যস্খ ব্যক্তি থাকবে না, যে তার সমôুখে মধ্যস্খতা করবে। তোমার কাছে কি কোন রাসূল আসে নি, যে তোমার কাছে আমার বার্তা পৌছে দিয়েছে? আর তোমাকে আমি কি কোন সম্পদ দেইনি এবং তোমার উপর অনুগ্রহ করিনি? অত:পর তুমি তোমার নিজের জন্য কি অগ্রিম পাঠিয়েছি? তখন সে নিজের ডানে ও বামে তাকাতে থাকবে, কিন্তু কিছুই দেখতে পাবে না। অত:পর সে তার সামনের দিকে তাকাবে কিন্তু তখন সে দোযখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবে না। অতএব যে পারে সে যেন নিজেকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করে, যদিও তা এক টুকরো খেজুরের বিনিময়ে হোক, সে যেন নিশ্চয় তা করে, আর যার কাছে তাও নেই, সে মধুর কথা ধারা তা করুক। কারণ তা দিয়েও পূণ্যের প্রতিদান দশগুন থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত দেয়া হবে। আর আল্লাহর রাসূলের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।”
হান্নাদ এ হাদীসটি হযরত আবূ সালমার ইবনে আবদুর ইবনে আওফ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “দানকারী আমার (বন্ধু) এবং আমি তার (বন্ধু)”।
এ হাদীসটি দায়লামী সংগ্রহ করেছেন।
১৯২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা🙂 বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ নিজে হাতে চিরস্খায়ী জান্নাত ‘আদন’ সৃষ্টি করলেন। তাতে এমন বস্তু সৃষ্টি করলেন, যা কোন চোখ দেখেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে যার কল্পনা জাগ্রত হয়নি। অত:পর তিনি ওটাকে বললেন, “কথা বল” অনন্তর তা বলল, “নিশ্চয়ই বিশবাসীগণ সফলকাম হয়েছে।” অনন্তর তিনি বললেন, “তোমার নিকটে কোন বখীল (কৃপণ) আমার প্রতিবেশী হতে পারবে না।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ্ চির নিবাস বেহেশতে নিজ হাতে এক এক বৃক্ষ রোপন করলেন এবং তা সুসজ্জিত করলেন এবং ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন। সে মতে তারা তাতে নির্ঝরণী প্রবাহিত করল এবং গাছে ঝুলন্ত অবস্খায় ফলাদী ধরল। অত:পর তিনি (আল্লাহ) তার উজ্জ্বল্য ও সৌন্দর্য্যরে প্রতি তাকিয়ে বললেন, “আমার মর্যাদা ও আরশের উপরে প্রতিষ্ঠিত আমার উচ্চ অবস্খানের কসম! তোমার নিকটে কোন বখীল(কৃপণ) লোক আমার প্রতিবেশী হতে পারবে না।”
ইবনু নাজ্জার এ হাদীসটি হযরত আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯৪ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- জান্নাত বলল, “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তুমি সৌন্দর্যমন্ডিত করেছ এবং আমার ভিত্তিস্তম্ভ গুলো সুন্দর করেছ।” অত:পর আল্লাহ্ তার প্রতি প্রত্যাদেশ পাঠালেন, “আমি তোমার ভিত্তিসমূহকে হাসান, হুসাইন ও পূণ্যবান আনসারদের দ্বারা সুশোভিত করেছি। আমার ইযযত ও মহত্বের কসম! তোমার মধ্যে কোন রিয়াকার ও বখীল প্রবেশ করবে না।”
আবূ মূসা মুদায়নী এ হাদীসটি হযরত আব্বাস ইবনে বুযাই আযদীরী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
জিহাদ সম্পর্কে:
১৯৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আমাদের প্রতিপালক সে লোকের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, যে আল্লাহ রাস্তায় জিহাদে অংশ নিয়েছে, অত:পর তার সাথিরা পরাজিত হয়েছে। তখন সে বুঝতে পেরেছে তার পরিণামফল কি হবে, তথাপি সে পুনরায় জিহাদে শরিক হয়েছে এমনভাবে যে, রক্তপাতে তার মৃত্যু হয়েছে। তখন মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ স্বীয় ফেরেশতাদেরকে বললেন, “তোমরা আমার এ বান্দার দিকে খেয়াল করে দেখ, আমার কাছে যে পুরস্কার রয়েছে তাতে সে আকৃষ্ট হয়েছে এবং আমার কাছে যে অনুগ্রহ রয়েছে তা পাওয়ার আশায় সে আবার জিহাদে অংশ নিয়েছে। এমনকি সে তার জীবন উৎসর্গ করেছে।”
আবূ দাঊদ এ হাদীসটি হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছে।
১৯৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেছেন, “আমার সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় আমার বান্দাদের মধ্যে যে আমার পথে জিহাদকারীরূপে ঘর থেকে বের হয়, যদি তাকে ফিরিয়ে আনি, তবে তাকে পুরস্কার ও গণীমতের মালসহ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমিই গ্রহণ করি, আর যদি তার প্রাণ কেড়ে নেই, তবে তাকে মাফ করার, তার উপর অনুগ্রহ করার এবং তাকে বেহেশতে প্রবেশের দায়িত্বও আমার।”
আহমদ ও নাসায়ী এ হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ যখন হযরত মূসা (আ:) কে ফিরাউনের বিরুদ্ধে প্রার্থনা করার অনুমতি দিলেন, তখন ফেরেশতাগণ ‘আমিন’ (কবুল করুন) বলল। তখন আল্লাহ্ বললেন, “তোমার প্রার্থনা কবুল করা হয়েছে এবং সে ব্যক্তির প্রার্থনা (মঞ্জুর হয়েছে) – যে আল্লাহর পথে জিহাদ করে।” অত:পর রাসূল (সা:) বললেন, মুজাহিদদেরকে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে তোমরা সাবধান থেকো। কারণ, আল্লাহ্ তাদের অনুকুলে এরূপ রাগাম্বিত হন, যেরূপভাবে রাসূলগণের অনুকূলে রাগাম্বিত হয়ে থাকেন। আর আল্লাহ্ তাদের প্রার্থনা এমনভাবে মঞ্জুর করেন যেমনভাবে রাসূলগণের প্রার্থনা মঞ্জুর করে।”
আবূল ফাতাহ আযদী এ হাদীসটি হযরত জুমানাহ বাহেলী থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সামনে আবির্ভূত হলেন এবং বললেন, “তোমরা যা মনে চায় আমল কর, তোমাদেরকে আমি মাফ করে দিয়েছি।”
ইবনে আবী শায়বা এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
১৯৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “আমার রাস্তায় জিহাদকারীর কথা বলতে গেলে, সে আমার জিম্বায় রয়েছে। আমি যদি তার প্রাণ কেড়ে নেই, তবে তাকে বেহেশতের উত্তরাধিকারী করি, আর যদি তাকে ফিরিয়ে আনি তবে তাকে পুরস্কার ও গনীমতসহ ফিরিয়ে আনি।”
শাহাদাত:
২০০ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- শাহাদাতবরণকারীগণ আল্লাহর কাছে আল্লাহর আরশের ছায়া তলে ইয়াকুতের তৈরী মিম্বারের উপর অবস্খান করবে, যা মৃগনাভীর স্তুপের উপরে স্খাপিত হবে। সেদিন শুধুমাত্র তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে বলবেন, “আমি কি তোমাদের সাথে আমার ওয়াদা পুরণ করিনি এবং তা তোমাদের জন্য বাস্তবে রূপ দেইনি?” তারা তখন বলবে, “হ্যা আমাদের প্রতিপালকের কসম! তুমি অঙ্গিকার পুরণ করেছ।”
হাদীসটি উকায়লী এ সংগ্রহ করেছেন।
২০১ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় শহীদদের রূহগুলো সবুজ রংয়ের পাখিদের অন্তরে অবস্খান করে, তাদের জন্য আল্লাহর আরশ থেকে কতগুলো দীপাধার দান করা হয়েছে। তারা বেহেশতের অভ্যন্তরে যেখানে খুশি ভ্রমণ করে। তারপর এ দীপাধারগুলো কাছে অবস্খান নিয়ে বিশন্সাম নেয়। তখন তাদের রব তাদের প্রতি দৃষ্টি ফেলে বলেন, তোমরা আর কি চাও?” তখন তারা জওয়াব দেয়, “আমরা আর কি চাইবো? আমরা বেহেশতের যেখানে ইচ্ছা ভ্রমন করে থাকি।” অনন্তর আল্লাহ তিনবার এ প্রশ্ন করবেন। অত:পর তারা যখন দেখবে যে, তাদেরকে এ প্রশ্ন বারবার করা হচ্ছে তখন তারা বলবে, “ইয়া পরওয়ারদেগার! আমরা এ বাসনা পোষণ করি যে, আপনি আমাদের আত্নাগুলো পুনরায় আমাদের দেহে ফিরিয়ে দিন, আমরা যেন পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে আবার আপনার দ্বীনের রাস্তায় শহীদ হতে পারি।” অত:পর আল্লাহ যখন দেখবেন যে, (মূলত) তাদের কোন প্রয়োজন নেই, তখন তাদেরকে ছেড়ে দেবেন।
মুসলিম এ হাদীসটি হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
শহীদ ব্যক্তির দ্বিতীয়বার শাহাদাতের আকাঙ্খা:
২০২ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- ওহে জাবির! আমি কি তোমাকে এ সুসংবাদ দেব না এ যে, আল্লাহ কিভাবে তোমার পিতার সাথে দেখা করেছেন? আল্লাহ কারও সাথে পর্দার আড়ালে ছাড়া কথা বলেন না। আর তিনি তোমার পিতাকে সম্বোধন করে বলেছেন, হে আমার বান্দা! আমার কাছে তোমার মনের ইচ্ছা প্রকাশ কর, আমি যেন তোমাকে তা দান করতে পারি।” তিনি (তোমার পিতা) বললেন, “হে আমার রব! আপনি কি আমাকে দ্বিতয়িবার জীবন দান করবেন, আমি যাতে দ্বিতীয়বার আপনার পথে শহীদ হতে পারি?” মহান ও প্রতাপশালী রব রললেন, “আমার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিপূবেই ঘোষণা করা হয়েছে যে, মৃতকে দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে পাঠানো হবে না।” তোমার পিতা বললেন, “হে আমার রব! তা হলে আমার পরবর্তীগণকে এ সংবাদ পৌঁছে দিন।”
তিরমিযী এ হাদিসটি হযরত জাবির (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
কোরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে:
২০৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও মহিমান্নিত আল্লাহ বলেন, “কুরআন তিলা’ওয়াত ও আমার যিকির যাকে আমার কাছে কোন কিছু চাওয়ার এবং আমাকে ডাকবার ফুরসাত দেয় না, তাকে আমি শুকর-গুজারদের জন্য নির্ধারিত পুরস্কারের চেয়েও শেন্সষ্টতম পুরস্কার দিয়ে থাকি।”
ইবনুল আনবারী এ হাদীসটি হরত আবূ সাঈ’দ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২০৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ্ তাবারাক ওয়াতা’আলা বলেন, “কুরআন তেলাওয়াত ও আমার যিকিরে মশগুল হওয়ার দরুণ যে লোক আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করার সুযোগ পায় না তাকে আমি যা দেই, তা প্রার্থনাকারীকে যা দিয়ে থাকি তার চেয়েও উত্তম। আর আল্লাহর বানীর মর্যাদা যাবতীয় বাণীর উপর অনুরূপ, যেমন সমুদয় সৃষ্টির উপরে সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে আল্লাহর মর্যাদা।”
দারেমী এ হাদীসটি হযরত আবূ সাঈ’দ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
সূরা ফাতিহা:
২০৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, “হে আদম সন্তান, আমি তোমার উপর সাতটি আয়াত নাযিল করেছি, তার তিনটি আমার জন্য, তিনিটি তোমার জন্য আরেকটি আমার ও তোমার জন্য সমান সমান। অত:পর যা আমার জন্য তা হচ্ছে, “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন, আর-রাহমানির রাহীম, মালিকি ইয়াওমিদদীন।” আর যা আমার ও তোমার জন্য তা হল, “ইয়্যাকা-না’বুদু ওয়াইয়াকা নাসতায়ীন” তোমার তরফ থেকে ইবাদত এবং আমার তরফ থেকে তোমাকে সাহায্য দান। আর যা তোমার জন্য তা হচ্ছে, “ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকীম রিাতাল্লাযীনা আন আ’মতা আ’লাইহিম, গায়রিল মাগদুবি আ’লাইহিম আলাদদোয়াল্লীন।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
সূরা ইখলাস:
২০৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- রাতে যে লোক নিজ বিছানায় শোয়ার ইচ্ছা করে তারপর ডান কাতে শুয়ে একশ’বার কুলহু আল্লাহু আহাদ’ (সূরা এখলাস) পাঠ করে, কেয়ামতের দিন পরোয়ারদেগার তাকে বলবেন, “হে আমার বান্দা! তুমি তোমার ডান দিক দিয়ে বেহেশতে প্রবেশ কর।”
তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
বিনয় ও মহত্ত্ব সম্পর্কে:
২০৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ আদম (আ) কে তার স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করেন। তার দৈর্ঘ্য ছিল ষাট গজ। তারপর আল্লাহ্ তাকে বললেন, “যাও এবং ফেরেশতাদের যে সম্প্রদায় বসে আছে তাদেরকে সালাম কর এবং মনোযোগ দিয়ে শুন তারা তোমাকে কি অভিবাদন জানায়। কেননা, এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্ততিদের পরস্পরের অভিবাদন পদ্ধতি। অত:পর তিনি গেলেন এবং বললেন, “আসসালামু আ’লাইকুম”। প্রত্যুত্তরে তাঁরা বললেন, “আসসালামু আ’লাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ্”। সুতরাং ফেরেশতাগণ ওয়া রহমাতুল্লাহ বাড়িয়ে দিলেন। এতএব, যারা বেহেশতে প্রবেশ করবে, তারা আদমের চেহারা বিশিষ্ট এবং ষাট গজ লম্বা হবে। তারপর থেকে সৃষ্ট মানুষের দেহ আকারে ছোট হতে লাগল, এমনকি তা বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।”
এ হাদীসটি আহমদ ও শায়খাইন হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২০৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- পৃথিবীতে যে নিজেকে উচ্চ মনে করে কেয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাকে নীচু করবেন। তার পৃথিবীতে যে আল্লাহর সামনে নমন্সতা অবলম্বন করে, কেয়ামতের দিন তিনি তাকে পূর্ণ জীবন দান করে সামনে নিয়ে আসবেন এবং সমবেতদের মধ্য থেকে তাকে বাছাই করে নেবেন এবং বলবেন, “হে আমার উত্তম বান্দা!” মহান ও মর্যাদাশালী আল্লাহ সেদিন সেদিন বলতে থাকবেন, “আমার নিকটবর্তী হও, আমার নিকটবর্তী হও, নিশ্চয় তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত, যাদের কোন ভয় নেই এবং যাদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।”
ইবনে আসাকির এ হাদীসটি হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২০৯ক্স
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রত্যেক দিন বলেন, “আমি তোমাদের পরাক্রমশালী প্রভু। এতএব, যে লোক দোজাহানের মঙ্গল কামনা করে, সে যেন সর্বশক্তিমানের অনুগত হয়ে চলে।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২১০ক্স
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ্ বলেন, “আমার নিকটে যে লোক এরূপ ভাবে নমন্সতা প্রকাশ করে, আমি তাকে এরূপে উন্নতী করি।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২১১ক্স
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন সুমহান আল্লাহ বলবেন, “আমি তোমাদেরকে কাজ করার হুকুম করেছিলাম এবং তোমাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম কিন্তু তোমরা তা নষ্ট করে দিয়েছ, আর তোমরা নিজ বংশীয় সম্পর্ককে শেন্সষ্ঠ বস্তু মনে করেছ। এতএব, আজ আমি আমার পরিচয় ও মর্যাদা উচ্চ করব এবং তোমাদের বংশ মর্যাদাকে নীচু করব। সংযমশীল ব্যক্তিগণ কোথায়? তোমাদের মধ্যে শেন্সষ্ঠতম পরহেযগার ব্যক্তি আল্লাহর নিকট শেন্সষ্ঠতর।”
হাকেম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২১২ক্স
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “যে লোক আমার অধিকারের বিষয়ে বিনয় প্রকাশ করে ( বা আমার উদ্দেশে নমন্সতা প্রদর্শন করে) এবং আমার সামনে বিনয় প্রকাশ করে, আর আমার দুনিয়ায় তাকাব্বুর (অহংকার) করে না, আমি তাকে উন্নত করতে থাকি; এমন কি শেষ পর্যন্ত তাকে আমি ইল্লীনে পৌঁছে দেব।”
আবূ নূয়াইম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
ই’লম সম্পর্কে:
২১৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আগেকার (আসমানী) কিতাবে লেখা আছে, “হে আদম সন্তান! পরিতোষিক ছাড়া তুমি যেমন শিক্ষা লাভ করেছ, অনুরূপ পরিতোষিক গ্রহণ না করে শিক্ষা দাও।”
ইবনু লাল এ হাদীসটি হযরত ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আ’লেম সম্প্রদায়:
২১৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন সুমহান আল্লাহ বলবেন, “হে আলেম সম্প্রদায়! হে আলেম সম্প্রদায়! আমার পরিচয় প্রকাশের জন্য তোমাদেরকে আমি ই’লম (জ্ঞান) দান করেছি। তোমরা দাঁড়াও, নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।”
এ হাদীসটি তিবী হযরত জাবির (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
তাকওয়া সম্পর্কে:
২১৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ তাঁর জনৈক নবীর প্রতি অবতীর্ণ ওহীতে বলেন, “হে আদম সন্তান! তোমাকে আমি রিযিক দেই, আর তুমি অন্যের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। হে আদম সন্তান! আমি তোমাকে আহবান করি, আর তুমি আমার কাছ থেকে পলায়ন কর। হে আদম সন্তান! আমি তোমাকে সôরণ করি, আর তুমি আমাকে ভুলে থাক। হে আদম সন্তান! আল্লাহকে ভয় কর এবং যেথায় ইচ্ছে, সেখানে ঘুমিয়ে পর।”
আহমদ ফারসি এ হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২১৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “আমার নৈকট্য সন্ধানীদের মধ্যে সংযমী লোকের সমান নৈকট্য অর্জন আর কারো দ্বারা সম্ভব হয়নি।”
আবুশ্ শায়খ এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন।
তিক্ত পৃথিবী:
২১৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ পৃথিবীকে সম্বোধন করে বলেন, “তুমি আমার আওলিয়াদের জন্য তিতা হয়ে যাও।” অর্থাৎ তাদেরকে তোমার কুহকে ফেল না।
দায়লামী এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন।
ধর্ম নিষ্ঠা সম্পর্কে:
২১৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “আমার নৈকট্য অর্জনকারীগণ ধর্ম নিষ্ঠার মত আর কিছু দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে পারে না।”
এ হাদীসটি আবুশ শায়খ সংগ্রহ করেছেন।
পূন্যবানদের পুরস্কার:
২১৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সমôানীত সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমি আমার পূণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন সব বস্তু সৃষ্টি করে রেখেছি, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি, আর কোন মানুষের অন্তরে ও কল্পনায় জাগ্রত হয়নি।”
আহমদ, শায়খাইন, তিরমিযী ও ইবনে মাজা এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। ইবনে জরীরও অনুরূপ হাদীস সংগ্রহ করেছেন।
ধর্মের পরিবর্তে দুনিয়া অìেðষণে ধ্বংস:
২২০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ আদম (সা:) কে হাজার রকমের শিল্প-বাণিজ্য শিখালেন এবং তাকে বললেন, “তুমি তোমার ছেলে ও সন্তান-সন্তেিদরকে বল, তোমরা যদি ধৈর্য্য ধারণ করতে না পার, তবে এ সব শিল্প-বাণিজ্যের মাধ্যমে দুনিয়া তালাশ কর। আর দ্বীনের পরিবর্তে তা (দুনিয়াকে) চেয়ো না, কারণ দ্বীন একমাত্র আমার জন্য নির্ধারিত। যে লোক দ্বীনের পরিবর্তে পৃথিবী অìেðষণ করে সে ধ্বংস হোক।”
হাকেম এ হাদীসটি হযরত আতিয়া ইবনে বাশীর মাযানী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আত্নীয়তার বন্ধন সম্পর্কে:
২২১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তাওরাতে লেখা আছে, যে লোক এটা পছন্দ করে যে, তার দীর্ঘায়ু হোক এবং তার রিযিক বৃদ্ধি পাক সে যেন আত্নীয়তার বন্ধন অটুট রাখে।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২২২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেছেন, “আমি রহমান, আমি রেহম সৃষ্টি করেছি এবং ওর নাম আমার নাম থেকে বের করেছি। এতএব, যে লোক তাকে মিলিত করে আমি তার সাথে একত্রিত হব আর যে তা কেটে ফেলে, আমিও তাকে কেটে ফেলব, আর যে তা ছিন্ন করে, আমিও তা ছিন্ন করব।”
আহমদ ও বুখারী এ হাদীসটি আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২২৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- রেহম রেহমানেরই একটি শাখা। সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “যে লোক তোমাকে একত্রিত করে আমিও তাকে একত্রিত করব, আর যে তোমাকে কেটে ফেলে আমিও তাকে কেটে ফেলব।”
বুখারী এ হাদীসটি হযরত আয়েশা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২২৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ পৃথিবী ও আসমানসমূহ সৃষ্টি করার আগে উমôুল বা মূল কিতাবে লিখে রেখেছিলেন, “নিশ্চয় আমি রহমানুর রহীম, আমি রেহম (সম্পর্ক) সৃষ্টি করেছি এবং এর জন্য আমার নাম থেকে নাম করণ করেছি। এতএব, যে লোক তা সংযুক্ত করে, আমিও তাকে আমার (নিজের সাথে) সম্পৃক্ত করব, আর যে তা বিচ্ছিন্ন করে, আমিও তাকে বিছিন্ন করব।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত জাবীর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
পারস্পরিক লেনদেন সম্পর্কে:
২২৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- ইনজীলে লেখা আছে, “তুমি যেরূপ ব্যবহার কর তোমার সাথে অনুরূপ ব্যবহার করা হবে, আর তুমি যেমন পাল্লা ওজন কর। পাল্লা দিয়ে তোমাকে সেরূপ ওজন করা হবে।”
এ হাদীসটি হযরত ফুয়ালা ইবনে উবাইদ (রা) থেকে মুসনাদির ফিরদাউসে লেখা হয়েছে।
২২৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ বলেছেন, “এরূপ তিনজন লোক আছে কেয়ামতের দিন যাদের সাথে আমি কলহকারী সাজব। প্রথমত সে ব্যক্তি, যে আমার নাম নিয়ে ওয়াদা করেছে, তারপর ওয়াদা ভঙ্গ করে প্রতারণা করেছে। দ্বিতীয়ত সে ব্যক্তি, যে কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রি করে তার মূল্য খেয়েছে। তৃতীয়ত সেই জন, যে কোন শন্সমিক নিযুক্ত করেছে এবং তার কাছ থেকে পুরো পরিশন্সম ও কাজ আদায় করে নিয়েছে, তৎপর তাকে তার পারিশন্সমিক দেয়নি।”
বুখারী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২২৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “দু’জন অংশীদারের মধ্যে আমি তৃতীয় অংশীদার, যে পর্যন্ত একজন তার সাথীর সাথে বিশবাসঘাতকতা না করে। অত:পর একজন যখন তার সাথীর সাথে বিশবাসঘাতকতা করে, তখন আমি তাদের দু’জনের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসি।”
আবু দাঊদ এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
তাকদীর বা অদৃষ্ট সম্পর্কে:
২২৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- জিবরাঈ’ল (আ) আমাকে বললে, মহান ও মর্যাদাশীল আল্লাহ বলেছেন, “হে মুহামôদ! যে লোক আমার উপর বিশবাস (ঈমান) এনেছে, অথচ আমার দ্বারা ভাল-মন্দ নিয়ন্ত্রণে (অদৃষ্টে) বিশবাস রাখে না, সে যেন আমাকে ছাড়া আরেকজন প্রতিপালক খুঁজে নেয়।
শিরাযী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২২৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। অত:পর মহান আল্লাহ তাকে বললেন, “লিখ”। সে বলল, “হে আমার প্রতিপালক! কি লিখব?” তিনি বললেন, “কেয়ামত সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক বস্তুর তাকদীর (অদৃষ্ট লিপি)। যে লোক এর অন্যথায় প্রাণত্যাগ করে সে আমার দলভূক্ত নয়।”
আবূ দাঊদ এ হাদীসটি হযরত ইবনে সামিত (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২২৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান মর্যাদাশালী আল্লাহ বলেন, “যে যুবক আমার নির্ধারিত অদৃষ্টে বিশবাসী আর আমার নির্ধারিত লেখনীতে পরিতূষ্ট, আমার দেয়া জীবনোপকরণে পরিতৃপ্ত এবং আমার জন্য প্রবৃত্তির খায়েস পরিত্যাগী, সে যুবক আমার কাছে আমার কোন কোন ফেরেশতার মত।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৩০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ আদমকে সৃষ্টি করলেন, অনন্তর তার থেকে সন্তান-সন্ততি বের করলেন। এরপর আল্লাহ্ বললেন, “আমি এদেরকে সৃষ্টি করেছি বেহেশতের জন্য এবং এরা বেহেশতীদের আমল করবে।” তারপর তার পিঠে হাত বুলালেন এবং তা থেকে সন্তান-সন্ততি বের করলেন। তারপর বললেন, “আমি এদেরকে সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য, আর তারা দোযখীদের আমল করবে।” এক সাহাবী জিজ্ঞেস করল, “ইয়া রাসূলুল্লাহ! তবে আমল কি জন্য? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, “নিশ্চয় মহান আল্লাহ কোন বান্দাকে যখন বেহেশতের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাকে বেহেশতীদের আমলে যুক্ত করেন। এমনকি সে বেহেশতীদের আমল করতে করতে মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তারপর আল্লাহ তাকে সে জন্য বেহেশতে প্রবেশ করান। আর কোন বান্দাকে যখন তিনি দোযখের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাকে দোযখীদের আমলে নিয়োজিত করেন, এমনকি সে দোযখীদের আমল করতে করতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। অনন্তর আল্লাহ্ তাকে ওর বিনিময়ে দোযখে প্রবেশ করান।”
মালিক, আহমদ ও বুখারী এ হাদীসটি হযরত উমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৩১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “যে লোক আমার নির্ধারিত অদৃষ্টে সন্তুষ্ট নয়, এবং আমার বালা-মুসিবতের সময় ধৈর্য ধারণ করতে পারে না, তার উচিত সে যেন আমাকে ছাড়া অপর কোন রব খুজে নেয়।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত সাঈদ ইবনে যিয়াদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৩২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ আদম (আ) কে সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করে তার ডান কাঁধে আঘাত করলেন, অত:পর তার সন্তানদেরকে বের করলেন, তার এরূপ শেত-শুভ্র যেন মুক্তা সদৃশ উজ্জল দুধ। তারপর তিনি তার বাম কাঁধে আঘাত করলেন এবং কাল বর্ণের সন্তান বের করলেন, তারা যেন কাল কয়লা। অত:পর তিনি তার ডান হাতের সন্তানদের বিষয়ে বললেন, “তারা বেহেশী হবেআর এতে আমার কোন পরোয়া নেই।” আর তার বাম হাতের তালুস্খিত সন্তানদের বিষয়ে বললেন, “তারা দোযখী হবে, আর এতে আমার কোন পরোয়া নেই।”
আহমদ ও ইবনু আসাকির এ হাদীসটি হযরত আবুদ দারদা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৩৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- জিবরাঈল আমার কাছে এলেন এবং বললেন, হে মুহামôাদ (সা:) নিশ্চয় আপনাকে আপনার রব সালাম জানিয়েছেন আর বলেছেন-“নিশ্চয় আমার বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও আছে প্রাচুর্য ছাড়া যার ঈ’মান ঠিক থাকে না। তাকে যদি দরিদন্স করে দে’য়া হয় তবে অবশ্যই সে অবিশবাসী কাফের হয়ে যাবে। আর নিশ্চয় আমার বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও আছে, ফকিরী-দারিদন্সতা ছাড়া যার ঈ’মান ঠিক থাকে না। তাকে যদি ঐশবর্যশালী করে দেই তবে অবশ্যই সে কাফের হয়ে যাবে। আর নিশ্চয় আমার বান্দাদের মধ্যে এমন বান্দাও আছে, সুস্খতা ছাড়া যারা ঈ’মান ঠিক থাকে না। যদি তাকে অসুস্খ করে দেই তবে অবশ্যই সে কাফের হয়ে যাবে।”
হযরত ওমার (রা) থেকে খাতির এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন।
২৩৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ আদমকে সৃষ্টি করলেন, এরপর তাঁর পিঠ থেকে সন্তানদেরকে বের করলেন। অনন্তর বললেন, “এরা জান্নাতের জন্য, আর আমি কারো গ্রাহ্য করি না, আর এরা দোযখের জন্য, আমি কারো পরোয়া করি না। তখন আরয করা হল, “হে আল্লাহর রাসূল! কিসের আশায় আমরা আমল করব?” তিনি বললেন, “সূনির্ধারিত অদৃষ্টস্খলে পৌঁছার আশায়।”
জিয়া মাকদিসী এ হাদিসটি হযরত আবদুর রহমান ইবনে কাতাদা আসলামী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৩৫ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- শুক্র জরায়ুতে স্খান নেয়ার চল্লিশ রাত পরে ফেরেশতা শুক্রে প্রবেশ করেন এবং বলেন, “হে আমার রব, আমি কি লিখব, “দুর্ভাগ্যবান না সৌভাগ্যবান?” তখন আল্লাহ বাতলে দেন এবং দু’টির যে কোন একটি লেখা হয়। অত:পর ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেন, “এ ছেলে না মেয়ে?” আল্লাহ্ তখন বাতলে দেন আর দু’টির একটি লেখা হয়। অনন্তর তার কর্ম, তার আচরণ, তার তাকদীর, তার জিবিক ও মৃত্যু লেখা হয়। অত:পর পুস্তিকা বন্ধ করা হয়। তারপর তাতে যা লেখা হয়েছে। তার কিছু কম বেশি হয় না।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত হুযাইফা ইবনে উসাইদ আল-গাফারী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৩৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কোন এক স্খানে একটি পাথর পাওয়া গিয়েছিল, তাতে লেখা ছিল, “আমি আল্লাহ্ বাক্কার মলিক, আমি কল্যান ও অকল্যান সৃষ্টি করেছি। অত:পর সৌভাগ্য তার জন্য, যার হাত দিয়ে কল্যাণ সৃষ্টি করেছি। আর ধ্বংস তার জন্য, যার হাত দিয়ে অকল্যান সৃষ্টি করেছি।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৩৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আ) কে যেদিন সৃষ্টি করলেন, সেদিন তিনি তাঁর পিঠ থেকে এক মুঠো গ্রহণ করলেন। অনন্তর সব উত্তম তাঁর ডান হাতে পড়ল এবং সব খারাপ তাঁর অন্য হাতে পড়ল। তখন তিনি বললেন, এরা ডান পাশের অধিবাসী এবং আমি কারো অত:পর আল্লাহ্ তাদেরকে আদমের পিঠে ফিরিয়ে দিলেন। আর সে অনুসারেই আজো পর্যন্ত তাঁর বংশানুক্রম সৃষ্টি হচ্ছে।”
তিবরানী এ হাদিসটি হযরত আবি মূসা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৩৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ আদমের সন্তান-সন্ততিকে তাঁর পিঠ থেকে বের করলেন, অত:পর তাদের নিজের ব্যাপারেই সাক্ষী করে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি কি তোমাদের রব (প্রভু) নই?” তারা বলল, “হ্যাঁ” অত:পর তিনি তাদেরকে তাঁর দু’হাতের তালুতে আন্দোলিত করলেন। অনন্তর বললেন, “এরা বেহেশতে যাবে; আর এরা দোযখে প্রবেশ করবে।” এরপর বেহেশতবাসীদের জন্য তাদের আমল সহজ করে দেয়া হবে।
বাযাযাজ এ হাদিসটি হযরত হিশাম ইবনে হাকীম হিযাম থেকে সংগ্রহ করেছেন।
বিপদে ধৈর্যধারণ সম্পর্কে:
২৩৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “আমি আমার কোন বান্দার সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু কেড়ে নেই না। (কেড়ে নিলে) তার প্রতিদান বেহেশত ছাড়া আর কিছুই আমার পছন্দনীয় নয়।”
আবূ নুয়াঈম এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৪০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি যখন আমার কোন বান্দার সবচেয়ে প্রিয়বস্তু দু’টি চোখ কেড়ে নেই, অত:পর সে ধৈর্য্য ধারণ করে এবং পূণ্যের আশা করে, তাকে আমি বেহেশত ছাড়া আর কোন পুরস্কার দিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারি না।
তিবরানী ও হাকেম এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৪১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই কোন বান্দা যখন রোগগ্রোস্ত হয় তখন আল্লাহ্ তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, “আমার বান্দাকে আমি আমার কায়েদ খানা সমূহের একটিতে আবদ্ধ করেছি। অত:পর আমি যদি তার প্রাণ কেড়ে নেই, তবে আমি তাকে ক্ষমা করব। আর তাকে যদি সুস্খ করি, তবে সে এমন অবস্খায় উঠে বসবে যেন তার কোন পাপ নেই।”
হাকেম ও তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আবূ উমামা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৪২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- পূণ্য ভান্ডার তিনটি – দান-সাদকা গোপন রাখা, মুসবিত গোপন রাখা এবং রোগ সম্বন্ধে অভিযোগ গোপন রাখা। পরীক্ষা করি, অন্তর সে ছবর এখতিয়ার করে এবং আমার বিরুদ্ধে তার দর্শকদের কাছে কোন অভিযোগ দায়ের করে না, আমি তখন তাকে বিপদমুক্ত করি এবং তার আগের গোশত ইত্তম গোশত এবং তার আগের রক্ত উত্তম রক্তে পরিবর্তন করে দেই। আর যদি আমি তাকে ছেড়ে দেই, তবে তাকে এমনভাবে ছেড়ে দেই যে, তার কোন পাপ থাকে না। আর তার যদি (মৃত্যু) ঘটাই, তবে আল্লাহর করুনার দিকে তাকে টেনে নেই।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৪৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, “আমার বিশবাসী বান্দার জন্য আমার কাছে বেহেশত ছাড়া আর কোন প্রতিদান নেই যখন আমি পৃথিবীবাসীদের মধ্য থেকে তার প্রিয়তম বন্ধুকে ছিনিয়ে নেই এবং তারপরও সে আমার প্রতি আস্খাশীল থাকে।”
আহমদ ও বুখারী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৪৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মুসলমানদের এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যাকে শারীরিক অসুস্খতার মাধ্যমে বিপদগ্রস্খ করা হয় তার বিষয়ে মহান ও মতাশালী আল্লাহ বান্দার আমল লেখক ফেরেশতাকে ডেকে বলেন, “প্রত্যেক দিন ও রাতে এ বান্দার আমলনামায় সে পরিমাণ পূণ্য লিখ যা সে সুস্খাবস্খায় অর্জন করত এবং যতদিন সে আমার বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে ততদিন পর্যন্ত এমন করতে থাক।”
আহমদ এ হাদীসটি হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৪৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন কোন বান্দার সন্তান মৃত্যুবরণ করে, তখন আল্লাহ তার ফেরেশতাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছ?” তারা বলেন, “হ্যাঁ”। আল্লাহ তখন বলেন, “তোমরা কি তার হ্নদয়ের ফুল ছিনিয়ে নিয়েছ?” তারা বলেন, “হ্যাঁ” তখন সুমহান আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দা তখন কি বলেছিল?” তারা বলে, সে তোমার হামদ বা প্রশংসা করেছিল (আলহামদুলিল্লাহ এবং ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তখন আল্লাহ্ বলেন, “আমার এ বান্দার জন্য বেহেশতে একটি গৃহ নির্মান কর এবিং তার নাম রাখ – ‘বায়তুল হামদ’ বা প্রশংসার ঘর।”
তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আবূ মুসা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৪৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ্ বলেন, “আমি যখন পৃথিবীতে আমার বান্দার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেই, তখন ওর বিনিময় আমার নিকট বেহেশত ছাড়া আর কিছুই নয়।”
তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৪৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ পূণ্যবানদের রক ফেরেশতাদের প্রতি এ প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেন, “দু:খকালীন অবস্খায় আমার বান্দার বিরুদ্ধে তোমরা কোন কিছু লিখ না।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৪৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- আল্লাহ্ তাবারাক ওয়াতাআ’লা বলেছেন, আমি যখন আমার বান্দাদের মধ্য কারো প্রতি কোন বিপদ পাঠাই তার দেহের উপর অথবা তার সন্তানের প্রতি কিংবা তার সম্পদের উপর, তারপরও সে উত্তম ধৈর্যের সাথে সেই বিপদকে গ্রহণ করে, কেয়ামত দিবসে আমি লজ্জা অনুভব করি যে, কি রূপে আমি তার জন্য পাল্লা স্খাপন করব এবং তার পাপ পূণ্যের খতিয়ান তার সামনে মেলে ধরব।”
হাকেম ও তিরমিযী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৪৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কোন বান্দা যখন রোগগ্রস্খ হয়, তখন মহান আল্লাহ্ তার কাছে দু’জন ফেরেশতা পাঠান এবং বলেন, “দেখ এ রোগী রোগ পরিদর্শনকারীদেরকে কি বলে?” অনন্তর সে যদি তাদের প্রবেশকালে আল্লাহর প্রশংসা করে, তবে ফেরেশতারা তা আল্লাহর দরবারে নিয়ে যান। আর আল্লাহ্ তা অবগত আছেন। তখন সুমহান আল্লাহ বলেন, “আমার বান্দার জন্য আমার সিদ্ধান্ত এই যে, আমি তার দেহের গোশত উত্তম গোশতে এবং তার রক্ত উত্তম রক্তে পরিবর্তন করব এবং আমি তার থেকে তার পাপসমূহ দূর করে দবে।”
দারু কুতনী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৫০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “আমি ভগ্ন-হৃদয় লোকদের কাছাকাছি অবস্খান করি।”
গাযযালী (রা) এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন।
২৫১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “বিপদগ্রস্তদেরকে আমার আরশের কাছাকাছি কর। নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে ভালোবাসি।”
এ হাদীসটি দায়লামী সংগ্রহ করেছেন।
২৫২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা বলবেন –“হে আদম সন্তান! আমি অসুস্খ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করনি।” বান্দা বলবে –“হে আমার প্রতিপালক। আপনিতো বিশবপালনকর্তা কিভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?” তিনি বলবেন –“তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্খ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কি জান জান না, যদি তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে।?”
“হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি।” বান্দা বলবে –“হে আমার রব! তুমি হলে বিশব পালনকর্তা, তোমাকে আমি রিরূপে আহার করাব?” তিনি বলবেন –“তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বন্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে বে আজ তা প্রাপ্ত হতে।?”
“হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।” বান্দা বলবে –“হে আমার প্রভূ! তুমি তো রব্বুল আলামীন তোমাকে আমি কিভাবে পান করাব?” তিনি বলবেন, “তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।”
এ হাদীসটি হযরত আবূ হোরায়রা (রা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৫৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই তোমাদের আগেকার মানুষদের মধ্যে জনৈক ব্যক্তির একটি ক্ষত হয়েছিল। অত:পর ওটা যখন তাকে কষ্ট দিতে আরম্ভ করল, তখন সে তুনীর থেকে একটি তীর টেনে নিয়ে তা দিয়ে তের উপরের আবরণ উঠিয়ে ফেলল। ফলে যে রক্তপাত শুরু হল তা আর বন্ধ হল না। এমন কি সে মারা গেল। তখন আল্লাহ্ বললেন, “আমার বান্দা আমার নির্দেশের আগে আগেই নিজের প্রাণ হরণে ত্বরাম্বিত করেছে। আমি তার জন্য বেহেশত হারাম করে দিয়েছি।”
আহমদ ও শায়খাইন এ হাদীসটি হযরত জনদুব বাজালী (রা) সংগ্রহ করেছেন।
রূগ্ন ব্যক্তির খোজ-খবর নেওয়া
২৫৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “প্রত্যেক বান্দা, যে তার কোন ভাইকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দেখতে যায়, তাকে জনৈক ঘোষক ফেরেশতা এই বলে আসমান থেকে সম্বোধন করেন, “তুমি সুখী হও এবং তোমার জন্য বেহেশত সুখের হোক।” মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ্ তখন তার আরশের সভাসদ ফেরেশতাগণকে ডেকে বলেন, “এক বান্দা আমার উদ্দেশে তার ভাইয়ের সাথে দেখা করেছে। সুতরাং তাকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর দায়িত্ব আমার উপরে; আর সুমহান আল্লাহ তাঁর এ দায়িত্ব পূরণ করার জন্য বেহেশত ছাড়া আর কোন দাওয়াত পছন্দ করেন না।”
আবূ ইয়ালা এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
বার্ধক্য আল্লাহর নূর
২৫৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ বলেন, “হে আদম সন্তান! নিশ্চয়ই বার্ধক্য আমার নূরসমূহের একটি নূর। আমার নূরকে আমি আমার আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে লজ্জা বোধ করি।”
আবুশ শায়খ এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
বিদআ’ত সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে:
২৫৬ক্স রাসুলুল্লাহ ( সা:) বলেছেন- তোমাদের পূর্বেই আমি কাওসার নামক নির্ঝরনির কাছে উপনীত হব। অবশ্যই আমি একদল লোকের সাথে বিতর্ক করব এবং তাদের উপর বিজয়ী হব। অত:পর আমি বলব, “হে রব! আমার সহচর, আমার সহচর।” আমাকে তখন বলা হবে, “আপনি জানেন না আপনার পরে এরা কি সব বিদ’আতী কাজ করছে।”
মুসনাদে আহমদ, বুখারী ও মুসলিমে হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে ও ইবনে শাইবায় আবূ হুযাইফা (রা) থেকে সংগৃহিত।
২৫৭ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন আমার সাহাবাদের একটি দল আমার কাছে উপনীত হবে এবং তাদেরকে হাউয থেকে পানি আহরণ করতে বাধা দেয়া হবে। আমি তখন বলব, “ইয়া রব! তারা আমার সহচরবৃন্দ।” আল্লাহ্ বলবেন, “নিশ্চয়ই তোমার পর তারা ধর্মের মধ্যে যে নতুন প্রথার প্রবর্তন করেছে, সে বিষয়ে তোমার জানা নেই। তোমার পরে তারা পিছু ফিরে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল।”
বুখারী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
জুলম সম্পর্কে:
২৫৮ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন শাসকদেরকে হাযির করা হবে, শাসনে যারা নূন্যতা বা শৈথিল্য করেছে এবং যারা সীমাতিক্রম করেছে, তখন আল্লাহ বলবেন, “তোমরা আমার দুনিয়ার কোষাধ্য ছিলে এবং আমার বান্দাদের ভরসাস্খল ছিলে, আর তোমাদের মধ্যে আমার অভিব্যক্তি ন্যস্ত ছিল।” তারপর তিনি সে লোককে বলবেন, “হদ্দ প্রয়োগে যে ক্রটি করেছিল, তুমি যে কাজ করেছ তার প্ররোচক কে?” প্রত্যুত্তরে সে বলবে, “আমি তার প্রতি দয়া করেছিলাম।” তিনি তখন বলবেন, “তুমি কি আমার বান্দাদের প্রতি আমার চেয়ে বেশি দয়ালু?” আর যে লোক শাস্তির সীমা অতিক্রম করেছিল তাকে বলবেন, “তুমি যা করেছ, সে কি এটা করতে তোমাকে প্ররোচিত করেছে?” সে বলবে, “রাগের বশে আমি এমন করেছি।” আল্লাহ্ তখন বলবেন, (হে ফেরেশতাগণ!) তাদেরকে নিয়ে যাও এবং দোযখের কোন খুটির সাথে বাঁধ।”
আবূ সাঈদ নাক্কাস এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৫৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ (স্বীয় বান্দাদের) অনুসরণ করবেন, এবং (পোলসিরাতের) সেতুর উপর স্বীয় পা স্খাপন করবেন এবং বলবেন, “আমার ইযযত ও জালালের কসম! আজকের দিনে অত্যাচার আমাকে অতিক্রম করে যেতে পারবে না।” এতএব, তিনি মানুষের একে অপরের কাছ থেকে অবিচারের প্রতিদান গ্রহণ করবেন; এমন কি তিনি ভাঙ্গা শিং বিশিষ্ট বকরীকে একটি গুঁতা দেয়ার প্রতিদান বিনিময়ের মাধ্যমে তার প্রতি ইনসাফ বা ন্যায়বিচার করবেন।”
তিবরানী এ হাদিসটি হযরত সাওবান (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
জালিম প্রসঙ্গে:
২৬০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন মহান ও প্রতাপশীল আল্লাহ যমনি ও আসমানসমূহকে নিজের ডান হাতে নেবেন, অত:পর বলবেন, “আমি প্রতাপশালী রাজাধিরাজ। জালেমগণ কোথায়? অহংকারীগণ কোথায়?”
ইবনে উমর (রা) ও ইবনে আমর (রা) থেকে এ হাদীসটি ইবনে মাজা, ইবনে জারীর তিবরাণী ইবনে ওমর (রা) থেকে সহীসূত্রে সংগ্রহ করেছেন।
২৬১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত আল্লাহ্ বলেন, “আমি আমার ইযযত ও মহত্ত্বের কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি জালিমের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করব, শন্সীঘ্রই হোক কিংবা দেরিতে। নিশ্চয়ই আমি তার উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করব, যে মজলুমকে দেখেছি এবং তাকে সাহায্য করার মতাবান হয়েও সাহায্য করেনি।”
নিহত ব্যক্তি ও হত্যাকারী:
২৬২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- অন্যায়ভাবে নিহত ব্যক্তি কেয়ামতের দিন তার হত্যাকারী হাত ধরে সমôানিত প্রভুর সামনে উপস্খিত হবে। এসময় তার শিরা হতে রক্ত ঝরতে থাকবে। অত:পর সে বলতে থাকবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনি তাকে জিজ্ঞেস করুন, কি কারণে সে আমাকে হত্যা করেছিল?” প্রত্যুত্তরে অভিযুক্ত জন বলবে, “তাকে আমি অমুকের ইযযতের জন্য ৯ষমôান) রার্থে) হত্যা করেছিলাম।” তখন তিনি বলবে, “ওটা (ইযযত) আল্লাহরই জন্য।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
ইয়াতীমের সম্পদ আত্নসাৎ:
২৬৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন সুমহান আল্লাহ্ একদল মানুষকে কবর থেকে উথিত করবেন। তাদের মুখে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকবে। (তাদেরকে বলা হবে), “তোমরা কি জান না যে, মহান আল্লাহ্ বলেছেন, যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ ভণ করে, নিশ্চয়ই আগুন দিয়ে তারা তাদের উদর পূর্ণ করে এবং অতিসত্তর তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।?”
ইবনে আবূ শায়বা এ হাদীসটি হযরত আবি বারয়া (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
মজলুম প্রসঙ্গে:
২৬৪ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মজলুমের দু’আ মেঘের উর্ধ্বে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার জন্য আকাশের দ্বারগুলো খুলে দেয়া হয়। আর মুবারক ও মহান প্রতিপালক বলেন, “আমার ইযযতের কসম! দেরিতে হলেও নিশ্চয়ই আমি তোমায় সাহায্য করব।”
ইবনে হাব্বান এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৬৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- “কোন বান্দার প্রতি যখন অত্যাচার করা হয়, আর সে প্রতিশোধ গ্রহণের মতা রাখে না এবং এরূপ কেউ থাকে না যে, সেই মজলুমের সাহায্যকারী হয়, তখন সে আকাশের দিকে স্বীয় দৃষ্টি ফিরায় এবং আল্লাহ্কে ডাকে। আল্লাহ্ বলেন, “হে আমার বান্দা! আমি উপস্খিত, আমি এখন থেকে (ইহ ও পরকালে) তোমাকে সাহায্য করব।”
হাকেম এ হাদীসটি হযরত আবুদ দারদা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৬৬ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “হে আদম সন্তান! তুমি যখন অত্যাচারিত হও তখন অপরের বিরুদ্ধে শুধু এ অভিযোগটুকু কর যে, সে তোমার প্রতি জুলুম করেছে। আর অপর কেউ যদি তোমার বিরুদ্ধে এজন্য অভিযোগ পেশ করে যে, তুমি তার উপর জুলুম করেছ, তবে আমার ইচ্ছা অনুযায়ী আমি তোমার ও তোমার বিপরে অভিযোগ গ্রহণ করি, আর আমি যদি চাই তবে তোমাদের দু’জনকে কেয়ামত পর্যন্ত বিলম্বিত করে দেই। তখন তোমাদের দু’য়ের জন্য আমার মাকে প্রশস্ত করে দেই।”
হাকেম এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
দূর্বলকে সহায়তার পুরস্কার:
২৬৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেন, “যে লোক আমার সৃষ্টির মধ্য থেকে এরূপ দুর্বলকে সহায়তা করে, যার সাহায্যকারী কেউ নেই, আমি এ বান্দার রণাবেণের দায়িত্ববান হলাম।”
খাতীব এ হাদীসটি দীনার থেকে, তিনি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর সর্বাপেক্ষা প্রিয় বান্দা:
২৬৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মূসা ইবনে ইমরান (আ) নিবেদন করলেন, “হে প্রতিপালক! তোমার নিকট তোমার বান্দাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি প্রিয়?” আল্লাহ বললেন, “সে লোক, যে প্রতিশোধ গ্রহণ সক্ষম হয়েও মাফ করে দেয়।”
বায়হাকী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
হাকেম এ হাদীসটি ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৬৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- জালেম ও বিদেন্সাহী হইও না; কারণ মহান আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের জুলম তোমাদের নিজেদের প্রতিই আপতিত হবে।”
হাকেম এ হাদীসটি হযরত আবূ বাকার (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
মৃত্যু ও মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে:
২৭০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ আত্নাকে বলেন, “বেরোও।” সে বলে, “না আমি স্বেচ্ছায় বেরোব না।” আল্লাহ বলেন, “অনিচ্ছায় হলেও, বেরোও।”
বাযযার এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৭১ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন মু’মিন-বিশবাসী বান্দার রূহ বেরোয় তখন ওর সাথে দু’জন ফেরেশতা দেখা (অর্থাৎ তা গ্রহণ) করে এবং তা নিয়ে দু’জনই ঊর্ধ্বে আরোহন করে। তারপর এর সুগন্ধির কথা উল্লেখ করা হয়। আসমানবাসিগণ বলে, “পৃথিবী থেকে একটি পবিত্র রূহের আগমন ঘটেছে। হে রূহ! তোমার প্রতি এবং যে দেহ তুমি আবাদ করছিলে, তার প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক।” অনন্তর একজন ফেরেশতা তাকে নিয়ে তার প্রতিপালকের কাছে চলে যায়। তারপর তিনি বলেন, “তাকে শেষ সময়ের (অর্থাৎ কেয়ামত না হওয়া পর্যন্ত) জন্য নিয়ে যাও।” পান্তরে কাফিরের আত্না যখন বেরোয়, তখন এর দুর্গন্ধ ও অপবিত্রতার কথা উল্লেখ করা হয়। আসমানবাসিগণ বলে, “পৃথিবী থেকে একটি অপবিত্র রূহের আগমণ ঘটেছে।” আর এর সম্বন্ধে বলা হয়-“শেষ সময় পর্যন্ত রাখবার জন্য তাকে নিয়ে যাও।”
মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
মৃতের খাটিয়া:
২৭২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “তুমি কি খাটিয়ার উপর কোন মরদেহ দেখ নি? ”
দায়লামী এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন।
মৃতের প্রশংসা:
২৭৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- এরূপ কোন মুসলমান মারা যায় না, যার সম্পর্কে তার নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে থেকে চার পরিবার সাক্ষ্য দেয় যে, বলেন, “তার বিষয়ে আমি তোমাদের কথাকে গ্রহণ করলাম, আর তোমরা যা জাননা, তাকে তা ক্ষমা করে দিলাম।”
মুসনাদে আহমদ, আবূ ইয়ালা, ইবনে হাব্বান, হাকেম, আবূ নুআঈ’ম, বায়হাকী ও দিয়াউল মুকাদ্দেসী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করছেন।
২৭৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কোন মু’মিন লোক যখন মারা যায়, আর তার দু’জন প্রতিবেশী বলে, “আমার তার সম্পর্কে ভাল ছাড়া কিছুই জানি না।” তা যদি আল্লাহর জানায় অনুরূপ নাও হয়, তবুও সুমহান আল্লাহ্ তার ফেরেশতাদেরকে বলেন, “আমার বান্দার পক্ষে আমার এ দু’বান্দার সাক্ষ্য গ্রহন করে নাও। আর তার সম্পর্কে আমার জ্ঞানে যা রয়েছে, তা উপো কর।”
ইবনুন নাজ্জার এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৭৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন তোমরা জানাযা আদায় কর, তখন মৃত লোকটির প্রশংসা কর এবং তার ভাল কর্মের আলোচনা কর। কেননা প্রতিপালক বলেন, “তারা সজ্ঞানে যে কাজের সাক্ষ্য দিচ্ছে, তাতে আমি তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করছি।” আর যা তারা জানে না, তার জন্য তাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি।”
বুখারী এ হাদীসটি তাঁর তারীখ গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন, বর্ণনাকারী হযরত রুবাই বিনতে মুআওয়ায (রা)।
কেয়ামত ও হাশর সম্পর্কে:
কোরআন উঠে না যাওয়া পর্যন্ত কেয়ামত হবে না:
২৭৬ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কুরআন যেখান থেকে এসেছে সেখানে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না। তারপর আকাশের চর্তুদিকে মৌমাছির গুণ গুণ শব্দের মত কুরআনের গুণ গুণ শব্দ হতে থাকবে। তখন মহান ও প্রতাপশালী রব বলবেন, “তোমার কি হয়েছে?” কুরআন বলবে, “আমি তোমার কাছ থেকে বেরিয়েছিলাম এবং তোমার কাছে ফিরে আসব। আমাকে পাঠ করা হয়, কিন্তু আমার কথামত আমল করা হয় না।” তখন কুরআনকে উঠিয়ে নেয়া হবে।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত ইবনে আমর (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আল্লাহর মুঠোর মধ্যে আকাশ ও পৃথিবী:
২৭৭ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয় কেয়ামতের দিন মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ্ সাতটি আকাশ এবং পৃথিবী নিজের মুঠের মধ্যে ধারণ করে বলবেন, “আমি আল্লাহ্, আমি অশীম দয়ালু, আমি রাজাধিরাজ, আমি পরম পবিত্র, আমি শান্তি, আমি রক, আমি শক্তিশালী ও মতাবান, আমি গর্বের অধিকারী। আমিই পৃথিবী সৃষ্টি করেছি যখন তা কিছুই ছিল না, আমি পুনরায় তা ফিরিয়ে আনব। শাসকগণ কোথায়? জুলুমকারীগণ কোথায়?”
এ হাদীসটি আবুশ শায়খ সংগ্রহ করেছেন।
উলঙ্গ ও খাৎনাবিহীন অবস্খায় সমবেত হওয়া:
২৭৮ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে খালি পায়ে, উলঙ্গ ও খাৎনাবিহীন অবস্খায় সমবেত করা হবে। আর সর্বপ্রথম যাকে পোশাক পরান হবে, তিনি হচ্ছেন ইবরাহীম খলীল (আ) মহান আল্লাহ্ বলবেন, “আমার বন্ধু ইবরাহীমকে পোশাক পরাও, লোকজন যেন তার মর্যাদা বুঝতে পারে।” তারপর অপরাপর লোককে তাদের আমলের মান অনুযায়ী পোশাক পরান হবে।”
আবূ নুয়াঈ’ম এ হাদীসটিতলাক ইবনে হাবীব থেকে তিনি তার দাদা থেকে সংগ্রহ করেছেন।
অংগ প্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য:
২৭৯ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমরা আমাকে এটা জিজ্ঞেস কর না, কি জন্য আমি হেসেছি। কেয়ামতের দিন বান্দা ও তার রবের মধ্যে যে তর্ক- বিতর্ক হবে তাতে আমি আশ্চর্যম্বিত হয়েছি। বান্দা বলবে, “হে আমার রব! তুমি কি আমাকে প্রতিশন্সতি দাওনি য, আমার প্রতি তুমি জুলুম করবে না।?” আল্লাহ বলবেন, “হ্যাঁ”। বান্দা বলবে, “তবে আমি আমার নিজের সাক্ষ্য ছাড়া অপর কারো সাক্ষ্য মানব না।” তখন আল্লাহ্ বলবেন, “আমি নিজেও কি যথেষ্ট সাক্ষী নই? অথবা মর্যাদাশীল লেখক ফেরেশতারাও কি সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট নয়?” বান্দা বহুবার তা নাকচ করে দেবে। তখন তার মুখে মোহর লাগান হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বলতে থাকবে, পৃথিবীতে সে কি করেছিল। তখন বান্দা (মনে মনে) বলবে, “তোরা দূর হয়ে যা, তোরা ধ্বংস হ, তোদের জন্যই আমি সংগ্রাম করেছিলাম।”
এ হাদীসটি হাকেম সংগ্রহ করেছেন।
পাপ পূণ্য বিনিময়:
২৮০ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- মহান ও পরাক্রান্ত প্রতিপালক বলেছেন, “বান্দার পূণ্য ও পাপসমূহ উপস্খিত করা হবে। অত:পর তার কতগুলো পরস্পরের সাথে বিনিময় করা হবে। অতপর যদি একটি পূণ্যও অবশিষ্ট থাকে তবে তা দিয়ে আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে যাওয়ার পথ সুগম করে দেবেন।”
হাকেম এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
আমল অনুযায়ী মর্যাদা:
২৮১ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- এক লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে, অত:পর তার গোলামকে তার চেয়েও বেশি মর্যাদায় অধিষ্ঠিত দেখতে পাবে। সে তখন আরয করবে, “হে আমার রব! গোলাম আমার চেয়েও উচ্চতর মর্যাদায় আসীন আছে।” আল্লাহ বলবেন, “তাকে আমি তার আমলের প্রতিদান দিয়েছি। আর তোমাকে তোমার আমলের প্রতিদান দিয়েছি।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে:
২৮২ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- বেহেশত ও দোযখ কলহ করল। বেহেশত বলল, আমার ভেতরে দূর্বল ও দারিদন্সগণ প্রবেশ করবে এবং দোযখ বলল, জালিম ও অহংকারীগণ আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। অনন্তর আল্লাহ্ জাহান্নামকে বললেন, “তুমি আমার আযাব। তোমাকে দিয়ে যাকে ইচ্ছে আমি শাস্তি দেই।” আর বেহেশতকে বললেন, “তুমি আমার রহমত। তোমাকে দিয়ে যাকে ইচ্ছে আমি অনুগ্রহ করি। আর তোমাদের প্রত্যেকের জন্য নিজ নিজ স্খান নির্ধারিত রয়েছে।”
তিরমিযী ও মুসলিম এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন। তারা একে হাসান ছহীহ বলেছেন।
২৮৩ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “এ আমার করুনা, এর দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করি, অর্থাৎ তা হচ্ছে জান্নাত।”
শায়খাইন এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন।
জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ প্রার্থী:
২৮৪ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- (কেয়ামতের দিন) নিশ্চয়ই এক লোককে জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়া হবে। তাকে দেখে জাহান্নাম সংকুচিত হতে থাকবে এবং তার একাংশ অন্য অংশকে ধরে রাখবে। তখন দয়াময় আল্লাহ্ তাকে বলবেন, “তোমার কি হয়েছে?” জাহান্নাম বলবে, “পৃথিবীতে সে সর্বদা আমার আযাব থেকে পরিত্রাণ প্রার্থনা করত। মোবারক ও মহান আল্লাহ্ তখন বলবেন, “আমার বান্দাকে ছেড়ে দাও।”
দায়লামী এ হাদীসটি ইবনে আব্বাস (সা:) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৮৫ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- (কেয়ামতের দিন) সুমহান আল্লাহ্ (ফেরেশতাদেরকে) বলেবেন, “আমার বান্দার আমলনামার প্রতি দৃষ্টি ফেল। অত:পর যাকে তোমারা দেখ যে, সে আমার কাছে বেহেশত চেয়েছিল তাকে আমি বেহেশত দেব, আর যে আমার কাছে জাহান্নাম থেকে পরিত্রান চেয়েছিল, আমি তাকে জাহান্নাম থেকে নিüকৃতি দেব।”
আবূ নুয়াঈ’ম এ হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
জান্নাতীর চাষাবাদ:
২৮৬ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- বেহেশতীদের মধ্যে এক লোক তার প্রতিপালকের কাছে চাষাবাদ করার অনুমতি চাইবে। আল্লাহ্ তাকে বলবেন, “তুমি যা কিছু চেয়েছিলে তা কি এখানে নেই, ” সে বলবে, হ্যাঁ সব কিছু আছে, কিন্তু আমি চাষাবাদ করতে ভালবাসি।” তারপর সে বীজ রোপন করবে, অনন্তর চোখের পলকে বিজ অঙ্কুরিত হবে, চারা বড় হবে, ছড়া বের হবে এবং ফলস কাটার উপযোগী হয়ে যাবে। তারপর তা পাহাড়ের ন্যায় স্তুপীকৃত হবে। তখন আল্লাহ্ বলবেন, “হে আদম সন্তান! লক্ষ্য কর। কোন কিছুই তোমাকে পরিতৃপ্ত করতে পারবে না।”
আহমদ ও বুখারী এ হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৮৭ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ হিসাবের জন্য মানুষদেরকে সমবেত করবেন। অত:পর দরিদন্স মু’মিনগণ কবুতর যেরূপ তাড়াতাড়ি উড়ে, সেরূপ তাড়াতাড়ি আসবে। তাদেরকে বলা হবে, “তোমরা হিসাবের জন্য দাড়াও।” তারা বলবে, “আমাদের কাছে কোন হিসাব নেই। আর হিসাব নেয়া যাবে এমন কিছু কি আপনি আমাদেরকে দান করেছিলেন? তখন আল্লাহ বলবেন, “আমার বান্দারা সত্য বলেছি।” অতএব তাদের জন্য বেহেশতের দ্বার খুলে দেয়া হবে। অনন্তর অন্যদের চেয়েও তারা সত্তর বছর আগে বেহেশতে প্রবেশ করবে।”
আবূ ইয়ালা, তিবরানী ও ইবনে আসাকির এ হাদীসটি হযরত সাদ ইবনে আমের ইবনে হুজাইমের (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৮৮ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন গরীব মুসলমানগণ কবুতরের ন্যায় তাড়াতাড়ি চলবে। তাদেরকে বলা হবে, “হিসাবের জন্য থাম।” তারা বলবে, “আল্লাহর কসম! আমরা এরূপ কিছুই রেখে আসিনি, যার জন্য আমাদের হিসাব নেয়া হবে।” তখন মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ বলবেন, “আমার বান্দারা সত্য বলেছে।” এতএব তারা অপরাপরদের চেয়ে সত্তর বছর আগে বেহেশতে প্রবেশ করবে।”
তিবরানী এ হাদীসটি হযরত সাঈদ ইবনে আমের ইবনে হুজায়ম (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
২৮৯ ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন নিশ্চয় জনৈক বান্দা তার আমলনামা খোলা অবস্খায় দেখবে এবং তার দিকে তাকাবে। তাতে সে এরূপ কতকগুলো পূণ্য দেখতে পাবে, যা সে করেনি। সে তখন বলবে, “ইয়া রব! আমার জন্য এটা কোথা থেকে এল?” আল্লাহ্ বলবেন, “সে গীবৎ সমূহ, তোমার বিরুদ্ধে লোকেরা যা বলাবলি করেছিল অথচ তুমি তা অনুভব করনি।”
আবূ নুয়াঈ’ম এ হাদীসটি হযরত শাবীব ইবনে সা’দা বালাওয়ী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
হারাম (অবৈধ) ও মাকরূহ (অপছন্দনীয়) বিষয় সম্পর্কে:
২৯০ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ্ মদপ্যকে নেশাগ্রস্খ অবস্খায় দেখতে পাবেন। সুমহান আল্লাহ বলবেন, “তোমার জন্য আফসোস! তুমি কি পান করেছিল?” প্রত্তুতরে সে বলবে, “মদ পান করেছিলাম।” আল্লাহ বলবেন, “আমি কি তোমার জন্য তা হারাম (অবৈধ) করিনি?” সে বলবে ‘হ্যাঁ’, অত:পর তাকে দোযখে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে।
আবদুর রাযযাক এ হাদীসটি হযরত হাসান বসরীর থেকে মুরসালরূপে সংগ্রহ করেছেন।
২৯১ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেন, “(পর নারীর প্রতি) প্রথমবার দৃষ্টিফেলা তোমার জন্য বৈধ, কিন্তু দ্বিতীয়বার তাকানোর পরিণামফল কি হবে?”
আবূ শায়খ এ হাদীসটি সংগ্রহ করেছেন।
২৯২ক্স রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “আমার বান্দাদেরকে বিকলাঙ্গ করো না।”
এ হাদীসটি আহমদ সংগ্রহ করেছেন।
দাইয়্যুস বা বেহায়ার দুর্ভাগ্য:
২৯৩ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ তিনটি বস্তু ছাড়া আর কিছু সরাসরি নিজ হাতে সৃষ্টি করেননি। তিনি সমুদয় বস্তুকে বলেছেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে গেছে। আল্লাহ্ যখন আদম ও ফিরদাউসকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং ফিরদাউসকে বলেছেন; আমার ইযযত ও জালালের কসম! তোমার মধ্যে কেন বখীল (কৃপণ) আমার সান্নিধ্যে বাস করতে পারবে না। আর কোন দইয়্যুস বা বেহায়া লোক তোমার সৌরভ পাবে না।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আলী (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
শয়তানের অনুগত্য মুক্ত ব্যক্তির পুরস্কার:
২৯৪ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- যখন কেয়ামতের দিন এসে যাবে, তখন মহান ও প্রতাপশালী আল্লাহ্ বললেন, “কোথায় তারা যারা তাদের চোখ ও কানকে শয়তানের আনুগত্য (গান-বাদ্য) থেকে পবিত্র রেখেছিল? তাদেরকে পৃথক কর?” তখন ফেরেশতারা তাদেরকে মেশক ও আম্বরের স্তুপের উপর পৃথক করবেন। অত:পর তিনি ফেরেশতাদেরকে বলবেন, “তাদেরকে আমার পবিত্রতা ও মর্যাদার গুন কীর্তন শুনাও।” তারা তাদেরকে এরূপ আওয়াজ শুনাবে – যার অনুরূপ সুর কোন শেন্সাতা কখনও শুনেনি।”
দারুকতনী এ হাদীসটি হযরত জাবির (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
পাপের কারণে আকৃতি পরিবর্তন:
২৯৫ক্স রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- নিশ্চয়ই সুমহান আল্লাহ্ অনেক জীবের আকৃতি পরিবর্তন করবেন। আর মানুষ যখন কোন একটি পাপে আত্ননিয়োগ করে, অনন্তর আল্লাহ্ বলেন, “সে আমার প্রতি বিদন্সূপ করেছে।” তারপর আল্লাহ্ তার অবয়াবাকার পরিবর্তন করে দেন। অত:পর কেয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাকে মানুষ রূপে পুনজীবন দান করবেন।”
বুখারী এ হাদীসটি যইফ হাদীস হিসাবে সংগ্রহ করেছেন।
সংগ্রহ,
www.hadithshareef.org