প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা, প্রতিজ্ঞা পালন করা মানব জীবনের এক মহত্তম গুণ। যারা পরিবার ও সমাজ জীবনের দ্বারা এই গুণের মাধ্যমে জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন, তারাই মানুষের কাছে বরণীয়-আদরণীয়। জীবন নির্বাহের ক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে ওয়াদা, শপথ, প্রতিশ্রুতি, সংকল্প বা বিভিন্ন ধরনের চুক্তি এবং অঙ্গীকার পালন করা ঈমানের একটি বিশেষ অঙ্গ, একে খাটো করে দেখার জো নেই। ইসলামে এ গুণটিকে আখলাকে হামিদা অর্থাত্ সুন্দরতম চরিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বস্তুত সংসার জীবনে কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে প্রতিজ্ঞা, প্রতিশ্রুতি ও ওয়াদা পালনই হলো সর্বোত্কৃষ্ট। কেননা প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সময় কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় ওয়াদা পালন করতে গিয়ে প্রিয়জন, প্রিয়তম বস্তুকে উত্সর্গ করতে হয়। এ সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন, ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাুজনা আমানু আওফু বিল উবুদি’। অর্থাত্ হে ইমানদারগণ, তোমরা প্রতিশ্রুতি ও চুক্তিগুলো পূরণ করো, তাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে ওয়াদা প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা অপরিহার্য। এর ব্যতিক্রম বা প্রত্যয় ঘটালে পাপের ভাগিদার হতে হয়। আমাদের হজরত রাসুলেপাক (সা.) বলেছেন, আল আহদু দাইনুন অর্থাত্ ওয়াদা, প্রতিশ্রুতি করা ঋণস্বরূপ। আল্লাহর নবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘আউফু বিল আহদে ইন্নাল আ’দাকানা মাসয়ূলা।’ অর্থাত্ ওয়াদা বা প্রতিজ্ঞা পূরণ করো, এ সম্পর্কে রোজ হাসরে প্রশ্ন করা হবে। ওয়াদা, প্রতিশ্রুতি কাফের হোক, মুসলমান হোক, উভয় ক্ষেত্রেই ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি সংকল্প পালন অবশ্য কর্তব্য। কেননা, প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা এমন গুণ যাকে বিকৃত করা যায় না। এমনকি কোনো অমুসলিম, বিজাতীয়দের সঙ্গে ওয়াদা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে তবে মুসলমানদেরই নীচু ভাবে। ওয়াদা, প্রতিশ্রুতি পালনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় আমাদের কৃত সংকল্পের কথা ভুলে যাই। এর প্রধান কারণ হলো শ্রবণ শক্তির দুর্বলতা এবং প্রতিশ্রুতি পালনে অনিচ্ছা। এছাড়া বাস্তব জগতে আমরা প্রায়ই নিত্যনতুন সৃষ্টির মোহে আচ্ছন্ন থাকি। অতীতের ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। কিন্তু এ ধরনের ভুলে যাওয়া আদৌ ঠিক নয়। এ সম্পর্কে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তোমাদের প্রভু যা কিছু আদেশ করেছেন, তার প্রতি অনুগত হও। এ ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা, প্রতিজ্ঞা পালনের প্রতি যত্নবান হতে হবে। আমরা যেন কোন কিছুর বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা পালনে পিছপা হয়ে না পড়ি। প্রতিজ্ঞা পালনের ক্ষেত্রে মানুষ যদি অতীত জীবনকে সর্বদা স্মরণ করে তবে ওয়াদা, প্রতিশ্রুতি পালন সহজতর হয়। একবার মদিনার আনসার ছায়লাবা সাহাবিদের সাক্ষী রেখে ধন-সম্পদের অধিকারী হওয়ার এবং তা গরিব, দুঃখীজনের মধ্যে মুক্ত হস্তে দান করার প্রতিজ্ঞা করে আল্লাহপাকের কাছে ওয়াদা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি প্রচুর ঐশ্বর্য ও ধন-সম্পদের মালিক হলে তার আগের ওয়াদার কথা ভুলে যান। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে সূরা তওবায় এ কথাও বলেছেন। তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে, আল্লাহপাক যদি আমাকে দেন, আমি অবশ্যই ছদকা (দান-খয়রাত) করব এবং প্রকৃত মোমিন হব। অতঃপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার কৃপায় দান করল। সে তখন কৃপণ-বখিল হয়ে গেল, পিষ্ঠ প্রদর্শন করল। প্রতিশ্রুতি পালনে অস্বীকৃতি জানাল, রোজ কিয়ামত পর্যন্ত ওই ধরনের লোকদের মোনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত করলেন, সে আল্লাহর কৃত ওয়াদা, প্রতিশ্রুতি পালন করেনি প্রতারণা করেছে। অতএব আসুন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি, রাজি, খুশি, নৈকট্য অর্জনে আমরা যেন মানুষের কাছে ওয়াদা, প্রতিশ্রুতি যথাযথ পালনে সচেষ্ট হই। স্মরণ রাখতে হবে ওয়াদা, প্রতিশ্রুতি, প্রতিজ্ঞা, সংকল্প পালন করতে গিয়ে কোনোরূপ অন্তরের গহীনে মুলা ঝুলিয়ে রাখার মতো মনমানসিকতা চিন্তা-চেতনার প্রশ্রয় প্রবণতা থেকে দূরে থাকি। একজন খাঁটি ওয়াদা পালনকারী এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য আল্লাহপাক আমাদের তওফিক দিন।
Leave a Reply