মুমিনের পরিচয়
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। যারা তাঁর ইবাদত করে নিজের জীবনকে সত্যের আলোয় আলোকিত করেছেন তারা হলেন মুমিন। আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি তাঁর প্রিয় নেক বান্দাদের কাতারে শামিল করতে, যারা তাঁর পথে নিজের সব কিছু উজাড় করে দিয়ে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছেন। আল কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে ‘আমাদের তুমি সরল পথ দেখাও, সেসব লোকের পথ, যাদের
তুমি নেয়ামত দান করেছ (সূরা ফাতিহাঃ ৫-৬)।
আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত দয়াশীল। তিনি দয়া-ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। তাঁর প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল হতে হলে আমাদেরে জানতে হবে তাঁর প্রিয় বান্দা কারা? কী তাদের পরিচয়?
আল কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলে তখন তারা বলে, সালাম এবং যারা রাত্রি যাপন করে পালনকর্তার উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়ে ও দণ্ডায়মান হয়ে; এবং যারা বলে হে আমার পালনকর্তা আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও (সূরা আল ফুরকান ৬৩-৬৫)।
উপরে উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় মা’আরেফুল কুরআনে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দাদের ১৩টি গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিশ্বাস, সংশোধন, দৈহিক ও আর্থিক যাবতীয় ব্যক্তিগত কর্মে আল্লাহ ও রাসূল সাঃ-এর বিধান ও ইচ্ছার অনুসরণ, অপর মানুষের সাথে সামাজিকতা ও সম্পর্ক স্থাপনের প্রকারভেদ, দিবারাত্রি ইবাদত পালনের সাথে আল্লাহভীতি, যাবতীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার প্রয়াস, নিজের সাথে সন্তানসন্ততি ও স্ত্রীদের সংশোধনের চিন্তা ইত্যাদি বিষয়বস্তু শামিল আছে। মুমিনের প্রথম গুণ হলো আল্লাহ তায়ালার দাসত্ব স্বীকার করে নেয়া। অর্থাৎ তার ইচ্ছা ক্রিয়াকর্ম, ভালোমন্দ সব কিছু আল্লাহর আদেশ ও মর্জির ওপর নির্ভরশীল।
আল্লাহ তায়ালার বান্দা হওয়ার যোগ্য সে ব্যক্তিই হতে পারে যে তার বিশ্বাস, চিন্তাধারা, প্রত্যেক ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যেকটি আচরণ ও স্থিরতাকে পালনকর্তার আদেশ ও ইচ্ছার অনুগামী রাখে এবং যখন যে আদেশ হয় তা লালনের জন্য উৎকর্ণ থাকে।
দ্বিতীয় গুণঃ মুমিন পৃথিবীতে নম্রতা ও বিনয়ের সাথে চলাফেরা করে; অর্থাৎ গর্বভরে না চলা, অহঙ্কারীর মতো পা না ফেলা। কারণ রাসূল সাঃ হাঁটার সময় শান্তভাবে চলাফেরা করতেন। তিনি কখনো দাম্ভিকতার সাথে পথ চলতেন না। রাসুল সাঃ কিছুটা দ্রুত হাঁটতেন।
বড় মনীষীগণ ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীদের মতো ধীরে চলাকে অহঙ্কার ও কৃত্রিমতার আলামত হওয়ার কারণ মনে করে এভাবে চলাকে মাকরুহ সাব্যস্ত করেছেন। একবার হজরত উমর ফারুক রাঃ এক তরুণকে খুব ধীরে চলতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি অসুস্থ? সে বললঃ না। তিনি তার প্রতি চাবুক উঠালেন এবং শক্তিসহকারে চলার নির্দেশ দিলেন (ইবনে কাসির)।
তৃতীয় গুণঃ মুমিন ব্যক্তি সদা আল্লাহর ভয়ে নিজেকে সব ধরনের অন্যায় থেকে বিরত রাখে। এ অবস্থায়ও যদি কোনো মূর্খ মানুষ তার সাথে ঝগড়া করে তবে সে তার সাথে অশুভ আচরণ করে না, বরং নিজে চুপ থাকে এবং তার জন্য দোয়া করে। তবে সত্যের পক্ষে এবং জুলুমের বিপক্ষে অবশ্যই কঠোর ও প্রতিবাদী।
চতুর্থ গুণঃ মুমিন রাত্রি যাপন করে তাদের পালনকর্তার সামনে সেজদা করা অবস্থায় ও দণ্ডায়মান অবস্থায়। রাতের সময়টা মূলত আরামের জন্য। কিন্তু মুমিনেরা সেই আরামকে ত্যাগ করে স্বীয় প্রভুর ইবাদতে মশগুল থাকে।
রাসূল সাঃ বলেছেন, তোমরা নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়ো। কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল। এই নামাজ তোমাদের আল্লাহর নৈকট্যদানকারী, মন্দ কাজের কাফফারা এবং গুনাহ থেকে নিবৃত্তকারী (মাযহারী)।
পঞ্চম গুণঃ মুমিনেরা সদা ইবাদত করার পরও আল্লাহকে ভয় করে, আখেরাতের চিন্তা করে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চায় নিজের প্রভুর কাছে।
ষষ্ঠ গুণঃ আল্লাহর প্রিয় বান্দারা ব্যয় করার সময় অপব্যয় করে না এবং কৃপণতাও করে না, বরং উভয়ের মধ্যবর্তী সমতা বজায় রাখে। কেননা অনর্থক ব্যয় করা সম্পূর্ণ হারাম ও শয়তানের কাজ।
সপ্তম গুণঃ উপরে বর্ণিত গুণাবলি থেকে মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মূলনীতি এসে গেছে। এখন গোনাহ ও অবাধ্যতার প্রধান প্রধান মূলনীতি বর্ণিত হচ্ছে। তন্মধ্যে প্রথম মূলনীতি বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ মুমিনেরা ইবাদতে আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে না। আর এটা স্পষ্ট যে শিরক হলো সর্ববৃহৎ গোনাহ।
অষ্টম গুণঃ মুমিনেরা কখনো কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না, ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয় না।
সর্বশেষে বলতে হয়, মুমিন তারাই যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাঃ-এর দেখানো পথে সাহাবায়ে কেরামের আদর্শে পুরো জীবন পরিচালনা করেছেন। মুমিন কখনো দুনিয়ার মোহনীয় রঙের মায়াজালে আবদ্ধ হয় না, বরং দুনিয়ার সব লোভ-লালসা ত্যাগ করে এক আল্লাহ ও ইসলামের জন্য হয় নিবেদিতপ্রাণ। উভয় জাহানে মুক্তি পেতে হলে শামিল হতে হবে খোদাপ্রেমিক সেই বান্দাদের কাতারে।
Advertisements
মন্তব্য করুন