গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে নারী পুরুষ আমরা সবাই ঘরে বাইরে অসম্ভব ব্যস্ত জীবন কাটাই। এত ব্যস্ততার মাঝেও আমরা সবাই চাই নিজেকে ‘প্রেজেন্টেবল’ করে উপস্থাপন করতে। তাই আমাদের সৌন্দর্য্য বোধ বা সৌন্দর্য্য সচেতনতাও কম নয়। আর এর জন্য আমরা অনেকেই অনেকটা সময় ব্যয় করি এই নিয়ে মাথা ঘামিয়ে, কোন পোষাকটা ভালো বা কোন সাজটা ভালো। আবার অনেকেই নিজের জন্য সময় বের করতে না পেরে আফসোস করি। ক্রমাগতভাবে ‘সেন্ডেন্টারী লাইফস্টাইল’ বা ‘হালকা শ্রমের জীবনযাত্রা’ এর জন্য আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে মেদ জমে দেহের সৌন্দর্য হানী ঘটায়। আবার ঘরে বাইরে অসম্ভব চাপের জন্য বা অতিরিক্ত স্ট্রেসের জন্য আমাদের চেহারা শ্রী নষ্ট হয়ে যায়। ফলস্বরূপ অকাল বার্ধক্য দেখা দেয়। এসব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দরকার সচেতনতা। তাহলে এত ব্যস্ততার মাঝেও আমরা নিজেকে সুন্দর ঝরঝরে এবং ফিট প্রমাণিত করতে পারবো।
মানুষের সৌন্দর্য্যের মূলমন্ত্র হল সুন্দর দেহসৌষ্ঠব। আর এর জন্য দরকার ওজন নিয়ন্ত্রণ। অনেকেই মনে করেন সুন্দর দেহসৌষ্ঠের শুধু মেয়েদের হয় ছেলেদের দরকার নেই। কিন্তু আসলে মেদহীন ঝরঝরে শরীরে একদিকে আপনি যেমন সুস্থ থাকবেন তেমনি যে কোন পোষাকে যে কোনো পরিবেশেই মানিয়ে যাবে। আর এই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আমাদের সবার আগে উচিত দৈনিক খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দেয়া। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এমন খাবার নির্বাচন করুন যাতে আপনার পরিপূর্ণ পুষ্টিচাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাবারে বৈচিত্রতা আনে। এক্ষেত্রে কম ক্যালরী সম্পন্ন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন। যেমন- ফল-মূল, শাক সবজি। এগুলো থেকে কম ক্যালরীর সাথে সাথে প্রচুর ভিটামিনস ও মিনারেলস পাওয়া যায়। যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও ভিটামিনস ও মিনারেলস স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে, ফলে অকাল বার্ধক্য রোধ করে। এছাড়া সতেজ শাক সবজি ও ফল থেকে এন্টিঅক্সিডেন্টও সরবরাহ করে যা আপনাকে ফিট রাখতে সহায়তা করে। প্রচুর পানি পান করুন যা আপনাকে দিন শেষে পরিশ্রমের পরও সতেজ রাখতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে দরকার পর্যাপ্ত ঘুম। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে যে, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক অন্ততপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুম দরকার। পর্যাপ্ত ঘুম হলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে আপনি পরের দিনের জন্য প্রস্তুত হবেন।
সুস্থ সুন্দর থাকার জন্য সময় পাই না এই বলে দুশ্চিন্তা না করে একটু সচেতন হতে হবে। যেমন- আমরা অনেকেই ঠিকমত খাদ্যগ্রহণ না করে উপর থেকে সুন্দর হওয়ার চেষ্টা করি। আর তাই সুস্থ-সুন্দর থাকতে হলে হাতে একটি কলা পেলে তা মুখে না মেখে খেয়ে ফেলুন, এই ভেবে যে, কলাতে প্রচুর আয়রণ আছে যা আপনাকে ভিতর থেকে সুন্দর হতে সাহায্য করবে।
সূরা আল ইমরান। কুরআনের ৩ নম্বর সূরা, যা মদিনায় অবতীর্ণ। এই সূরাটি বড় সূরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত। এতে ২০০টি আয়াত আছে।
নামকরণঃ এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে সূরা আল ইমরান হিসেবে। যেহেতু এ সূরার মাঝে হজরত ইমরান আঃ ও তাঁর বংশধরদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে, তাই সেদিকে লক্ষ করে এই নামকরণ করা হয়েছে। এ সূরায় মানবজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথমত, আকিদাগত দিক নিয়ে এবং আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও তার প্রমাণাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ এ সূরা পাঠ করে মূল আকিদা ও আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে পারবে এবং নিজেও এর ওপর অটল থাকতে পারবে, তা ছাড়া কুরআন যে সত্য তা প্রমাণ করা ও ইহুদিদের সন্দেহকেও দূর করা হয়েছে।
আকিদা বা বিশ্বাস যেহেতু মানব জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হলোঃ
আকিদা শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস যার অপর নাম ঈমান। আর যার মাঝে ঈমান নামক মহামূল্যবান সম্পদ বিদ্যমান, তাকে বলা হয় মুমিন।
আকিদা হলো শিকড় বা মূল। আমাদের আমল তথা ইবাদত-বন্দেগি কবুল হওয়া-না-হওয়া এই আকিদার ওপর নির্ভরশীল, কারণ যার আকিদা বিশ্বাসে কোনো ত্রুটি আছে, সে মুমিন নয়। আর মুমিন মুসলমান ছাড়া আল্লাহ তায়ালা অন্য কারো ইবাদত কবুল করেন না।
এ জন্য প্রথমে আমাদের আকিদা তথা ঈমানকে স্বচ্ছ করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ঈমানহীন সারা জীবনের কোনো আমলই কাজে আসবে না। আর স্বচ্ছ আকিদা তথা পূর্ণ ঈমান থাকা অবস্থায় সামান্য আমলও নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।
দ্বিতীয়ত, এ সূরার আলোচনায় শরিয়তের বিষয়াবলি বিশেষ করে যেসব মাসায়িল বা বিধিবিধান জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ-এর সাথে সম্পৃক্ত, সেগুলো স্থান পেয়েছে এবং ঈসা আঃ ও মারইয়াম আঃ সম্পর্কে ইহুদি-নাসারারা যেসব সন্দেহ পোষণ করে, সেগুলোকেও স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে তার সমাধান দেয়া হয়েছে। মোট কথাঃ এ সূরা আলোচ্য বিষয়ের বৈশিষ্ট্যের কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান এবং অন্যান্য সূরা থেকে ব্যতিক্রম। তাই এ সূরা বেশি বেশি পাঠ করা ও তার বিষয়াবলির মধ্য থেকে যা আবশ্যক তা নিজের মাঝে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
সূরা আল ইমরানের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আবু উমামা রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন, তোমরা সূরা বাকারা ও সূরা আল ইমরান পাঠ করো। কেননা তা কিয়ামের দিন কুরআন পাঠকারীর জন্য সুপারিশকারী হবে এবং এই উভয় সূরা কিয়ামতের দিন দু’টি মেঘমালা বা দু’টি ছায়া অথবা দু’টি সারিবদ্ধ পাখির ঝাঁকরূপে আগমন করবে এবং পাঠকারীর পক্ষে বিতর্ক করবে। হজরত নাওয়াস ইবনে সামআন রাঃ হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি সূরা বাকারা ও সূরা আল ইমরান সম্পর্কে রাসূল সাঃ-কে বলতে শুনেছি; তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন কুরআন ও কুরআনের ওই সব আহালকে নিয়ে আসা হবে, যারা তার ওপর আমল করবে। আর তাদেরকে অগ্রসর করাবে। সূরা বাকারা ও সূরা আল ইমরান। অর্থাৎ এ সূরা পাঠকারীর মর্যাদা প্রদান করা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করার জন্য তাদেরকে সামনের দিকে অগ্রসর করানো হবে।
মূলত সূরা আল ইমরান একটি জ্ঞানগর্ভ সূরা, যার মাঝে ঈমান আমল জিহাদসহ বহুবিধ মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এই সূরা অত্যন্ত বরকতময় ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
তা ছাড়া এ সূরার মাঝে কয়েকটি আয়াত আছে, যেগুলোর ফজিলত হাদিস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। যেমন ইমাম বাগভি রহঃ নিজস্ব সনদে একটি হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন আল্লাহ তায়ালা আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাজের পর সূরা ফাহিতা, আয়াতুল কুরসি এবং সূরা আল ইমরানের ১৮, ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াত পাঠ করবে, আমি তার ঠিকানা জান্নাত করে দেবো। আমার সকাশে স্থান দেবো। দৈনিক সত্তরবার তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেবো, তার সত্তরটি প্রয়োজন মেটাব। শত্রুর কবল থেকে আশ্রয় দেবো এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তাকে জয়ী করব।