জেনিটাল ওয়ার্টস

জেনিটাল ওয়ার্টস

জেনিটাল ওয়ার্টসকে সাধারণ বাংলায় বলে যৌনাঙ্গের আঁচিল। নারী-পুরুষ সবারই এটা হতে পারে।

উপসর্গ

যৌনাঙ্গে আঁচিল হলে নিচের উপসর্গগুলো পরিলক্ষিত হয়ঃ

­ আপনার যৌনাঙ্গ এলাকায় ছোট মাংসের মতো রঙের অথবা ধূসর রঙের স্ফীতি।

­ অনেক আঁচিল পরস্পরের এত কাছাকাছি থাকে যে, তা ফুলকপির মতো দেখায়।

­ যৌনাঙ্গ এলাকা চুলকায় ও অস্বস্তি লাগে।

­ যৌন সঙ্গমের সময় রক্তপাত হয়।

অনেক সময় জেনিটাল ওয়ার্টস বা যৌনাঙ্গের আঁচিলের কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। আবার অনেক সময় আঁচিলগুলো এত ছোট ও চেপ্টা থাকে যে, সেগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ খুব খারাপ হতে পারে।

কারণ

ত্বকের অন্যান্য জায়গার আঁচিলের মতো যৌনাঙ্গের আঁচিলগুলো একটি ভাইরাস দ্বারা ঘটে। ভাইরাসটির নাম এইচপিভি। এটা ত্বকের সবচেয়ে ওপরের স্তরে সংক্রমণ ঘটায়। এক শ’র বেশি ধরনের এইচপিভি রয়েছে, তবে মাত্র অল্প কিছু ধরন এ যৌনাঙ্গের আঁচিল ঘটায়। এসব ভাইরাস মারাত্মক সংক্রামক। সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে এগুলো ছড়ায়। যৌনাঙ্গে আঁচিল রয়েছে এমন কোনো নারী বা পুরুষের সাথে মিলিত হলে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোকের যৌনাঙ্গে আঁচিল দেখা দেয়, সাধারণত মিলনের তিন মাসের মধ্যে এটা দেখা দেয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েক বছর পরে উপসর্গ দেখা দেয়।

ঝঁুকিপূর্ণ বিষয়

কোনো নারী যদি একাধিক পুরুষের সাথে অরক্ষিত যৌনমিলন করেন কিংবা কোনো পুরুষ যদি একাধিক নারীর সাথে অরক্ষিত যৌনমিলন করেন, তাহলে এইচপিভিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছেঃ

­ নারী বা পুরুষের কোনো একজনের যদি যৌন সংক্রামক রোগ থাকে।

­ আপনি যদি এমন কারো সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হন, যার আগের যৌন ইতিহাস আপনার জানা নেই।

­ যৌবনে অনেকের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

­ যদি আপনার যৌনাঙ্গ এলাকায় ছোট ছোট গোটা বা আঁচিল হয়।

­ যদি আপনার যৌনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর যৌনাঙ্গে আঁচিল লক্ষ করেন বা রোগ ধরা পড়ে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

যেহেতু জেনিটাল ওয়ার্টস বা যৌনাঙ্গের আঁচিল নির্ণয় করা কিছুটা কঠিন ব্যাপার, তাই আপনার ডাক্তার আপনার যৌনাঙ্গের আঁচিলে অ্যাসিটিক অ্যাসিড দ্রবণ প্রয়োগ করতে পারেন, তখন আঁচিল সাদা হয়ে যায়। এরপর সেটাকে তিনি বিশেষ মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখতে পারেন। এ পরীক্ষার নাম কলপোস্কেপ।

মহিলাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত তলপেটের পরীক্ষা ও প্যাপটেস্ট করা জরুরি। এতে জেনিটাল ওয়ার্টসের কারণে সৃষ্ট যোনি ও জরায়ুমুখের পরিবর্তন কিংবা জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রাথমিক চিহ্নগুলো নির্ণয় করতে সহজ হয়, যা এইচপিভি সংক্রমণের সম্ভাব্য জটিলতা।

প্রথম প্যাপটেস্ট করাবেন যৌনমিলনের তিন বছরের মধ্যে অথবা আপনার বয়স ২১ বছর হলে। যদি আপনার বয়স ৬০ বছরের বেশি হয়, তাহলে প্যাপটেস্টের পরিমাণ কমাতে পারেন। আপনি চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। তিনি নির্ধারণ করে দেবেন আপনার জন্য সঠিক কী কী পরীক্ষা প্রয়োজন। যদি আপনার জেনিটাল ওয়ার্টস হয়, তাহলে আপনাকে প্রতি তিন থেকে ছয় মাস অন্তর প্যাপটেস্ট করাতে হবে। এটা নির্ভর করে আপনার অবস্থার তীব্রতার ওপর।

জটিলতা

মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের সাথে এইচপিভি সংক্রমণের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিছু বিশেষ ধরনের এইচপিভি যোনি ওষ্ঠের ও পায়ুপথের ক্যান্সার ঘটায়। পুরুষের ক্ষেত্রে পায়ুপথের ও লিঙ্গের ক্যান্সার ঘটায়। এইচপিভি বা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সব সময় ক্যান্সার সৃষ্টি করে না, তবে এখন পর্যন্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা খুবই বিপজ্জনক। তাই আক্রান্ত মহিলাদের নিয়মিত প্যাপটেস্ট করাতে হবে।

জেনিটাল ওয়ার্টস গর্ভাবস্থাকালে সমস্যা ঘটাতে পারে। আঁচিলগুলো বড় হতে পারে, যার জন্য প্রস্রাব করতে সমস্যা হতে পারে। যোনির দেয়ালের আঁচিলগুলো বাচ্চা প্রসবের সময় যোনির টিসুøর সঙ্কোচনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

যেসব মহিলার জেনিটাল ওয়ার্টস রয়েছে তাদের সন্তানের গলায় ওয়ার্টের সংক্রমণ হতে পারে। শিশুর শ্বাসনালীর প্রতিবন্ধকতা রোধ করতে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে­ যদিও এটা বিরল ঘটনা।

চিকিৎসাব্যবস্থা

যৌনাঙ্গের আঁচিল দূর করার জন্য ওষুধ বা শল্য চিকিৎসা দুই ধরনের ব্যবস্থারই প্রয়োজন হতে পারে। এ ভাইরাস কখনো সম্পূর্ণ নির্মূল হয় না, চিকিৎসার পরও আবার জেনিটাল ওয়ার্ট হতে পারে।

Leave a comment