ইসলাম হচ্ছে বিজয়ী আদর্শ। তাই আজো মানুষ তা গ্রহণ করছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা গ্রহণ করবে। ইসলাম এক দিকে যেমন মানুষের অন্তরকে বিজয়ী করে, অন্য দিকে এর সীমানা দেশ-মহাদেশ পেরিয়ে বিশ্বকে জয় করেছে। এ জয় কোনো শক্তির জয় নয়। এ জয় কোনো কওম, কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর জয় নয়। এ জয় মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারি, খুন, প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস থেকে মুক্ত করে মানুষকে বিশ্বাস এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসার জয়, যা আজো অটুট রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা থাকবে। তাই আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন ‘তারা চায় মুখের ফুৎকারে আল্লাহর দীনকে (জীবনব্যবস্থা) মুছে ফেলতে, আর আল্লাহর সিদ্ধান্ত তিনি তার দীনকে (জীবনব্যবস্থা) পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রসারিত করবেন এতে কাফেরদের যত কষ্টই হোক না কেন’ (সূরাঃ ছফ)। পনের শ’ বছর আগে এ বিজয়ী আদর্শ নাজিল হয়েছিল মানবতার শ্রেষ্ঠ দূত রাহমাতুল্লিল আলামিনের ওপর। যার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’
আমরা যদি রাসূলে পাক সাঃ-এর জীবনচরিত লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাবো তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কাজ, প্রতিটি কথা আমাদের জীবনের জন্য শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, অত্যাবশ্যকীয়ও। জীবনের এমন কোনো কাজ নেই যা মানুষের জন্য অনুকরণীয় নয়। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘হে নবী! আমি আপনাকে মানুষের জন্য সতর্ককারী, সুসংবাদদাতা এবং উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ তাই আমরা এতিম শিশুদের প্রতি তাঁর প্রবল ভালোবাসা ও আদর দেখি। তিনি একদা এক শিশুকে রাস্তায় ক্রন্দনরত দেখে তাকে আদর করে বললেন, তুমি কাঁদছ কেন, তোমার আব্বা-আম্মু নেই? যখন তিনি জানলেন যে, তার পিতা নেই। তখন তিনি তাকে নিজ গৃহে নিয়ে আপন সন্তানের মতো লালন করে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। সমাজের দুর্বল অসহায় মানুষকে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের জন্য তাদের সাহায্য করার পাশাপাশি পরিশ্রম করে আত্মনির্ভর হওয়ার পথ বাতলিয়ে দেন।
ইসলাম-পূর্ব সমাজে না ছিল কোনো নিয়মশৃঙ্খলা, না ছিল কোনো আইনকানুন। ফলে সমাজব্যবস্থা ছিল একধরনের অপরাধপ্রবণ। তিনি সে অপরাধী সমাজে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান মোতাবেক চলার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সে সমাজের লোকেরা চুরি, ডাকাতি, খুন, হত্যা, লুণ্ঠন, মেয়ে সন্তান জ্যান্ত কবর দেয়া থেকে শুরু করে হেন কাজ নেই যা তারা করেনি। মাত্র ২৩ বছর নবুয়তের জিন্দিগিতে তিনি এ ধরনের নিকৃষ্ট ও অন্যায় কাজ থেকে মুক্ত করে তোলেন গোটা আরব জাহানকে। এটাই হলো বিজয়ী আদর্শ।
শুধু কেবল আরব সমাজই নয়, তৎকালে পৃথিবীর সর্বত্রই রাসূল করিম সাঃ তাঁর বাণী এবং আল্লাহর কালাম পৌঁছানোর জন্য সাহাবিদের ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। রাসূল করিম সাঃ নিজে রোমান বাদশাহ ও পারস্যের বাদশাহর কাছে পত্র প্রেরণের মাধ্যমে দীন তথা বিজয়ী জীবনাদর্শ গ্রহণ এবং মানবতার মুক্তির জন্য আহ্বান জানান।
সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এ আদর্শের আলো। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে অসহায় নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষ। তিনি তাদের মুক্তির জন্য সব শিরক তথা প্রভুত্বকে পরিহার করে এক আল্লাহর প্রতি আনুগত্য গ্রহণ করার আহ্বান জানান। কারণ এতে রয়েছে আত্মার মুক্তি। মানুষ দলে দলে এ আদর্শ গ্রহণ করে এক দিকে যেমন আত্মিক শান্তি লাভ করে, অপর দিকে আল্লাহর বিধান পালন করার ফলে পরকালে কঠিন দিনে রহমত লাভে ধন্য হবে। এটাকে বিজয়ী আদর্শ এ জন্য বলছি।
আজকের পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের শক্তির বলে সারা পৃথিবী জয়ের বাসনা দেখছে। এ জন্য যত রকম ষড়যন্ত্র, কৌশল ও শক্তি প্রয়োগ করছে। লুণ্ঠন করছে বিজিত জাতির সম্পদ, মানসম্মান। হত্যা করছে তাদের যে জাতি সাথে আপস না করে প্রতিবাদ করছে। প্রয়োগ করছে মানবতা বিধ্বংসী মারণাস্ত্র, অ্যাটম বোমা, নিউক্লিয়ার বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, স্টোমাহোক ক্ষেপণাস্ত্র। ধ্বংস হচ্ছে প্রাণিকুল, গাছপালা, তরুলতা। এত অত্যাচার, এত নির্মমতার পরও যারা এ আদর্শকে জীবনে ধারণ করেছে তারা মৃতুøকে অকাতরে গ্রহণ করছে; কিন্তু আদর্শ তারা কখনো পরিত্যাগ করেনি। তাই পবিত্র কুরআনে এ আদর্শের অনুসারীদের বলা হয়েছে, ‘মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক শহীদের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে তাদের কৃত ওয়াদা পূরণ করেছে, কিছু লোক তাদের ওয়াদা পালনের অপেক্ষায় আছে, তারা তাদের লক্ষ্য থেকে এক বিন্দু চুøতও হয় না। প্রকৃতপক্ষে এটাই সাফল্য।’ এটাই সত্যিকার সাফল্য এ জন্য যে, শত চেষ্টা, শত শক্তি এবং শত ষড়যন্ত্র এবং কৌশল অবলম্বন করেও আজকের পৃথিবীবাসীকে তাদের ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এখন পর্যন্ত কোনো আদর্শ স্থায়ীভাবে গ্রহণ করাতে ব্যর্থ হয়েছে। অপছন্দনীয় কোনো আদর্শকে জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় বটে, কিন্তু সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথে তারা সেটা সমূলে উৎপাটন করে দেয়। তার বাস্তব প্রমাণ বসনিয়া-হার্জেগভিনিয়া, চেচনিয়া, আফগানিস্তান, মিসরসহ পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশ।
Advertisements
মন্তব্য করুন