অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা এবং হোমিওপ্যাথি

 

অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এ ধরনের হাঁপানি শ্বাসপথের শ্লেষ্মা ঝিল্লির অতি সংবেদনশীলতার জন্য হতে পারে। শ্লেষ্মা ঝিল্লির উত্তেজনা ঘটতে পারে নানাভাবে নানা দিক থেকে, যেমন­ পরাগরেণু, নানাজাতের ছত্রাক ও ছাতা পড়া জিনিস ঘরের ভেতরের ধূলিকণা, কয়েক প্রকার খাবার, পোকামাকড়ের হুলের বিষ বা তাদের শরীরের কোনো অংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেও হাঁপানির আক্রমণ হতে দেখা যায়। অ্যালার্জির কারণে হাঁপানির আক্রমণ সাধারণত শৈশবকালে ঘটে। এ ধরনের হাঁপানি স্থায়ী হতে পারে এবং তা বংশানুক্রমে চলতে থাকে। তবে কৈশোরের দিকে তা উপশমও করা যায়। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে নাসিকাপ্রদাহ (সর্দি) এবং অ্যাকজিমা হতে দেখা যায় পরিবারের। অন্য সদস্যদের মধ্যেও তা দেখা যায়।

যেসব জিনিসের অ্যালার্জিতে হাঁপানি হতে পারে­

ক. পরাগরেণু

ফুলের বা ঘাসের পরাগরেণু। পরাগরেণু থেকে হাঁপানি হতে পারে এ তথ্য স্বীকৃতি পেয়েছে ১৯২০ সালে। তবে সব জাতের পরাগরেণুতে অ্যালার্জি বা হাঁপানি দেখা যায় না। তাই রেণুতে অ্যালার্জি সৃষ্টি করার উপাদান থাকা চাই। তা ছাড়া রেণু খুব হালকা হওয়া চাই, যা বাতাস সহজে বহন করতে পারে এবং পরিমাণে যথেষ্ট থাকা দরকার। কারণ বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়ার পর যদি যথেষ্ট মাত্রায় রেণু শ্বাসপথে না যায়, তাহলে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হবে না। বিভিন্ন হাঁপানি রোগীর বিশেষ বিশেষ রেণু দ্বারা হাঁপানি হয়ে থাকে। যে পরাগরেণু একজনের হাঁপানি সৃষ্টি করে, তা অন্যের কোনো ক্ষতি নাও করতে পারে। রেণুর উৎস নানা সূত্র থেকে যেমন­ গাছ, গুল্মঘাস, ফুল ইত্যাদি। ফুলের রেণুতে যাদের অ্যালার্জি থাকে, তারা সাধারণত বিশেষ কোনো ঋতুতে অ্যাজমাতে আক্রান্ত হয়। কারণ এক এক ফুল এক এক ঋতুতে পরাগরেণু ছড়ায়।

খ. খাদ্য

খাদ্য থেকে যে অ্যালার্জি ও হাঁপানি হয়, এ তথ্য বহুকাল আগ থেকেই জানা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটাসও খাদ্য থেকে অ্যালার্জির কথা বলে গেছেন। কী কী খাদ্য থেকে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হতে পারে তার তালিকা হবে অতি দীর্ঘ। যেমন­ ডিম, চিংড়ি মাছ ও গরুর গোশত থেকে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হতে পারে, এ তথ্য বহুল প্রচারিত। এ ছাড়া আরো যেসব খাদ্যে অ্যালার্জি হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে­ ইলিশ মাছ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, কলা, পুঁইশাক, ডাল, গমের তৈরি খাদ্য, চাল, কমলালেবু, আপেল, আঙুর, তরমুজ, শসা, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, সজিনা ডাঁটা, মুলা, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা, ওলকপি, চকোলেট, গুড়, মধু, দুধ ও দুধ থেকে তৈরি খাবার ইত্যাদি।

এখানে মনে রাখা দরকার যে, সব খাদ্য থেকে সবার অ্যালার্জি নাও হতে পারে। ব্যক্তি ভিন্নতায় বিভিন্ন খাদ্যে বিভিন্নজনের অ্যালার্জি হতে পারে। একই ধরনের খাবারে যে সবারই অ্যালার্জি হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য বা রঙিন করার জন্য যেসব রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার করা হয় তার দ্বারা অনেকেরই অ্যালার্জি হতে পারে। বর্তমানে দেশে অ্যালার্জি শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে, যার দ্বারা ইচ্ছা করলে সবাই অ্যালার্জিকারক খাদ্য শনাক্ত করে নিতে পারেন। তবে কেবল খাদ্যের জন্য অ্যালার্জিজনিত হাঁপানি রোগীর সংখ্যা খুবই কম।

গ. ধূলিকণা

বাড়ির ধূলিকণা নাকে ঢুকলে হাঁপানি হতে পারে। ঘরবাড়ির ধুলোতে বিশেষ করে কার্পেট, তোষক, লেপ, কম্বল, বালিশ, পাপোষ ইত্যাদিতে এক প্রকার ‘মাইট’ (গময়প) জাতীয় জীবাণু থাকে। এরা ঘরের ধূলিকণাতে মিশে থাকে। কোনো প্রকার শ্বাসপথে এই মাইট মিশ্রিত ধূলিকণার প্রবেশ ঘটলে শরীরে অ্যালার্জিজাতীয় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তার ফলে হাঁচি, নাক দিয়ে প্রচুর পানি পড়া বা হাঁপানি রোগ হতে পারে।

ঘ. পতঙ্গজনিত অ্যালার্জি

কোনো পোকা বা পতঙ্গ কামড়ালে আমরা ব্যথা পাই এবং সেই কামড়ানোর জায়গা ফুলে ওঠে। প্রায় সব প্রকার পতঙ্গের হুলে বিষ থাকে, তা কোনো ক্ষেত্রে বেশি আবার কোথাও বা কম। এ ধরনের বিষ মানুষের শরীরে অ্যালার্জিজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ প্রকার অ্যালার্জেনের দ্বারা ক্ষেত্রবিশেষে হাঁপানি হতে পারে। যেসব পতঙ্গ থেকে মানুষের হাঁপানি হতে পারে তাদের সংখ্যা ও শ্রেণী তালিকা খুবই দীর্ঘ। সাধারণত ঘরের আরশোলা, মাঠের ফড়িং, প্রজাপতি, মথ, পঙ্গপাল এমনকি মশা পর্যন্ত এ তালিকায় আসতে পারে।

ঙ. ছত্রাকজনিত অ্যালার্জি

বর্ষার সময় অব্যবহৃত জুতো, ভিজে ছাতা, এমনকি ভিজে পোশাক ঠিকমতো না শুকিয়ে ফেলে রাখলে এক ধরনের হালকা ধূসর সবুজ দাগ হয়। এটাকে ছত্রাক বলে। এ ছত্রাক দ্বারা কোনো কোনো ব্যক্তি হাঁপানি আক্রান্ত হতে পারেন। ছত্রাকের জন্ম বিভিন্ন খাবারেও হতে পারে, যেমন­ পাউরুটি, বাসি রুটি, কেক, আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদি। এ ছাড়া ঘরের ভেতরের আসবাবপত্র, কার্পেট, ঘরের কোণে জমা করা ময়লা কাপড় ইত্যাদিতে ভালোভাবেই ছত্রাক জন্মায়। বাড়ির বাইরে বাগানে বা ছাদের টবে গাছের জন্য যে জৈবসার ব্যবহৃত হয় তাতে প্রায় সব ক্ষেত্রেই নানা জাতের ছত্রাক পাওয়া যায়। গ্রামে গোয়ালঘরের পাশে অহরহ ছত্রাক জন্মায়। অনেক সময় বাগানের গাছে বা ফুলে ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে। সেই ফুল ফুলদানিতে রাখলে মানুষের দেহে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

চ. আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জি

আবহাওয়া পরিবর্তনকালে অনেকের হাঁপানির আক্রমণ হতে দেখা যায়। কারো কারো ঠাণ্ডা বাতাস লাগলে হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, আবার কখনো কখনো হাঁপানি দেখা দেয়। ঠাণ্ডা পানি পান করলে, ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে কারো কারো হাঁপানির আক্রমণ হয়ে থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠাণ্ডা-গরমের তারতম্যের কারণেও কারো কারো হাঁপানির আক্রমণ প্রকট হতে পারে। শিশুদের মধ্যে শীতকালেই হাঁপানি হতে বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে শীতের শুরুতে, শীতের শেষে এবং অতিরিক্ত গরমে অ্যাজমার প্রকোপ বেশি হতে দেখা যায়।

ছ. ওষুধজনিত অ্যালার্জি

কোনো কোনো রোগের চিকিৎসায় অ্যালোপ্যাথিক কিছু ওষুধ শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। যেমন­ অ্যাড্রিনার্জিক, যা স্নায়ু শ্বাসনালীকে প্রসারিত করে। বিটাব্লকার বিশেষত এপ্রানল জাতীয় ওষুধ অ্যাড্রিনার্জিক স্নায়ুর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে এ জাতীয় ওষুধ খেলে অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধেও শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে। বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন­ টেট্রাসাইক্লিন) ও কেমোথেরাপিউটিক ওষুধ ব্যবহারে অ্যালার্জি ঘটিত প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়। ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

অ্যাজমা চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক ওষুধ

[রবিন মারফি এন ডি রচিত হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল রেপার্টরি অনুসারে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডের ওষুধ।

১. একোনাইট ন্যাপ ২. এগারিকাস ৩. অ্যামরা গ্রিসিয়া ৪. এন্টিম টার্ট ৫. অ্যারেলিয়া রেসিমোছা ৬. আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম ৭. আর্সেনিক অ্যালবাম ৮. আর্সেনিক আয়োড ৯. ব্লাটা ওরিয়েন্টারিস ১০. ব্রায়োনিয়া ১১. ক্যালকেরিয়া কার্ব ১২. কার্সিনোসিন ১৩. চায়না ১৪. কিউপ্রাম মেট ১৫. ডিজিটালিস ১৬. ড্রোসেরা ১৭. ডালকামারা ১৮. জেলসেমিয়াম ১৯. গ্রাফাইটিস ২০. হিপার সালফ ২১. ইগনেশিয়া ২২. ইপিকাক ২৩. কেলি আর্স ২৪. কেলি বাই ২৫. কেলি ব্রম ২৬. কেলি কার্ব ২৭. কেলি নাইট ২৮. কেলি সালফ ২৯. ল্যাকেসিস ৩০. লরোসেরেসাস ৩১. লবেলিয়া ৩২. মেডোরিনাম ৩৩. ন্যাজা ৩৪. ন্যাট্রাম মিউর ৩৫. ন্যাট্রাম সালফ ৩৬. নাইট্রিক অ্যাসিড ৩৭. নাক্স ভোম ৩৮. অপিয়াম ৩৯. ফসফরাস ৪০. সরিনাম ৪১. পালসেটিরা ৪২. রুটা ৪৩. স্যাম্বুকাস ৪৪. সিপিয়া ৪৫. সাইলিসিয়া ৪৬. স্পঞ্জিয়া ৪৭. স্ট্র্যামোনিয়াম ৪৮. সালফার ৪৯. থুজা ৫০. ভিসকাম ৫১. জিনজিবার

3 Responses to “অ্যালার্জিজনিত অ্যাজমা এবং হোমিওপ্যাথি”

  1. sabuj Says:

    হোমিওপ্যাথি বিষ্যক লেখাটি পড়ে ভাল লাগল। এরকম আরো বেশি বেশি করে লেখা উচত। হোমিও অনুরাগীদের facebook এ হোমিওপ্যাথি পেইজটিকে লাইক দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এড্রেস https://www.facebook.com/hpathybd

  2. sabuj Says:

    আমি এই রোগের treatment nite cai
    ami nige rugi
    could u plz help me?


Leave a reply to মামুন মল্লিক Cancel reply