হিজাব শালীনতার প্রতীক

আরবি ‘হিজাব’ শব্দের অর্থ পর্দা, গোপনীয়তা, স্বাতন্ত্র্য প্রভৃতি। পবিত্র কুরআনে শব্দটি সাতবার ব্যবহৃত হয়েছে। হিজাব নির্দিষ্ট কোনো পোশাক নয়; বরং এটি নৈতিক পবিত্রতা রক্ষার জন্য একটি সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার নাম। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের জন্য হিজাব ফরজ করে আল্লাহ বলেন, আর মুমিন নারীদেরও বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজেদের যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে এবং স্বীয় সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, শুধু ওই সৌন্দর্য ব্যতীত যা সত্যিই প্রকাশিত হয়ে পড়ে। (সূরা নূরঃ ৩১)।

হিজাবের মাধ্যমে ইসলাম নারীকে আত্মশক্তি ও আত্মমর্যাদায় উজ্জীবিত করে শালীনতা ও সম্ভ্রমের মুকুট পরিয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই পর্দা, সম্ভ্রম নারীর মর্যাদা ও শালীনতার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত। নারীর এই শালীনতাকে অনেক গল্প-কবিতায় মহিমান্বিত করা হয়েছে। কিন্তু ভোগবাদী ও সেকুলার সংস্কৃতির আগ্রাসনে এই ধারণাটা যেন বদলে যাচ্ছে। মুসলিম নারীদের হিজাবকে অনেকে পশ্চাৎপদতা ও প্রগতির অন্তরায় বলে প্রপাগান্ডা করছেন। এই প্রপাগান্ডা এতটাই বিস্তার লাভ করেছে যে, হিজাব পরার অধিকারকে রাষ্ট্রীয় আইন করে ছিনিয়ে নেয়ার দাবি তোলা হচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে এ নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হিজাব নিয়ে বিতর্ক ও বিপত্তি শুরু হয়। ফলে এ সব দেশে বসবাসকারী মুসলিম নারীরা নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে শুরু করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা কর্মক্ষেত্রে হিজাব পরা চলবে কি চলবে না, এ নিয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, ডেনমার্ক ও ব্রিটেন। সেখানকার অনেক মুসলিম নারী আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। কেউ সুবিচার পেয়েছেন, কেউ পাননি। এ বছরের শুরুর দিকে পিরোজপুরের তিনজন হিজাব পরা মেয়েকে প্রশাসন কর্তৃক সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এভাবে আলোচিত-অনালোচিত অনেক ঘটনা রয়েছে।

হিজাব নিয়ে এত বিতর্ক ও বিরোধিতা কেন? মূলত ইসলামের প্রতি অতিপ্রগতিবাদীদের অন্ধ বিদ্বেষ কিংবা হিজাবের অন্তর্নিহিত কল্যাণ ও সৌন্দর্য সম্পর্কে অজ্ঞতাই এর আসল কারণ। হিজাবের মাধ্যমে ইসলাম নারীসমাজকে একটি কার্যকর রক্ষাকবজ উপহার দিয়েছে। হিজাব একজন নারীকে ভোগবাদী সংস্কৃতির সস্তা পণ্য হওয়া থেকে রক্ষা করে সভ্যতা ও মানবতার মহান কারিগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। হিজাব নারীকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখে। হিজাব গ্রহণ করেও একজন নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, রাস্তাঘাট সর্বত্র তার সর্বোচ্চ মেধা ও যোগ্যতার প্রয়োগ করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে হিজাব তার জন্য বাধা নয়, বরং বাড়তি সহায়কের ভূমিকা পালন করে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান তার বড় দৃষ্টান্ত। ইরানি মেয়েরা প্রমাণ করেছেন, হিজাব পশ্চাৎপদতার প্রতীক নয়, বরং শালীনতা ও আধুনিকতার সমার্থক। সেখানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক নিরাপত্তা বাহিনীসহ সব ক্ষেত্রে হিজাব পরা নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বিশ্বব্যাপী হিজাব পরা নারীদের মেধা ও যোগ্যতার সামনে হিজাববিরোধী অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। অন্য দিকে এ কথাও পরিষ্কার হচ্ছে, হিজাব মগজ নয়, শুধু মাথা ঢাকে। অতিপ্রগতিবাদীদের সমস্যা হলো তারা উগ্রতা ও বেহায়াপনাকে আধুনিকা ভাবতে শুরু করেছেন। ভোগবাদী সংস্কৃতির আলোর ঝলকানি তাদের চোখকে অন্ধ করে রেখেছে। নারীকে বস্তুগত ভোগের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা এই সংস্কৃতি অনুসারীদের গতি, প্রকৃতি ও দুর্গতি ইতোমধ্যেই অন্ধকার আগামী নির্দেশ করতে শুরু করেছে। ইভটিজিং, ধর্ষণ ও বেহায়াপনা তাদের সংস্কৃতিরই ফল।

সুতরাং মানবতার প্রকৃত কল্যাণ, নারীসমাজের অধিকার ও মুক্তি ইসলামের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। সারা বিশ্বে মুসলিম তরুণী ও নারীদের মাঝে হিজাব ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম অধুøষিত বাংলাদেশে হিজাব বাধ্যতামূলক নয়। মুসলিম মেয়েরা এখানে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই হিজাব পরছেন।

2 Responses to “হিজাব শালীনতার প্রতীক”

  1. স্বদেশ বাংলা Says:

    ওয়ালাইকুম আসসালাম,
    ধন্যবাদ ইমরান ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য। ইন্সআল্লাহ ধীরে ধীরে এই ধরনের সব বিয়ষ পোষ্ট করা হবে। দোয়া করবেন, আমীন।

  2. মোঃ ইমরান কাজী Says:

    আসসালামু আলাইকুম ।
    হিজাব এর বিষয়টা জানতে পেরে খুব ভাল লাগল।
    আমি এ ধরনের আরো কিছু জানতে চাই। আশাকরি পাঠাবেন


Leave a comment