তিনটি ধর্ম একটি সত্যের উপর একমত তা হল আল্লাহ রাব্বুলআলামীন পুরুষ ও নারীকে সৃষ্টি করেছেন আর তিনিই সমস্ত পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা।ধর্মগুলোর মধ্যে যতসব বৈপরিত্য হয়েছে সবই প্রথম মানুষ আদম ও হাওয়া (আঃ) এর সৃষ্টিরপর। ইহুদী ও খৃষ্টানদের বিশ্বাস হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা আদম ও হাওয়া (আঃ) কে নিষিদ্ধগাছের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু, সাপ হাওয়া (আঃ) কে নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ায়প্ররোচনা দিয়েছে আর হাওয়া (আঃ) আদম (আঃ) কে তা খেতে প্ররোচনাদিয়েছেন।(নাউজুবিল্লাহ)আল্লাহতায়ালা যখন আদম (আঃ) কে অপরাধের জন্য দোষারোপকরেছেন তখন আদম (আঃ) তার সব দোষ হাওয়া (আঃ) কে দিয়ে বলেছেন: “অতঃপর আদম (আঃ) বললেনঃওই মহিলা আমাকে দিয়েছে তাই আমি তা খেয়েছি।” (জেনেসিসঃ৩/১২)
স্রষ্টা মহিলাদের সম্বন্ধে বললেন: “আমি তোমাদেরকে অনেক কষ্টের সন্মুখীন করব। সন্তান প্রসবের সময় ব্যথা পাবে;আর তোমারসমস্ত মনোনিবেশ হবে তোমার স্বামীর দিকে। যে তোমার উপর কর্তৃত্ব করবে। আর তিনি আদম (আঃ) কে বললেনঃ তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনে আমার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিষিদ্ধগাছের ফল খেয়েছ যার সম্বন্ধে আমি বলেছি পৃথিবীর এ অভিশপ্ত গাছ থেকে ভক্ষন করো না।এর কারণে দুঃখ-কষ্ট তোমার জীবনের দিনগুলিকে খেয়ে ফেলবে। (জেনেসিসঃ৩/১৬-১৭)
অপর দিকেসৃষ্টির শুরুর ঘটনাবলী নিয়েকুরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে আলোচিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন:
وَيَا آدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ (19) فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِنْ سَوْآتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ (20) وَقَاسَمَهُمَا إِنِّي لَكُمَا لَمِنَ النَّاصِحِينَ (21) فَدَلَّاهُمَا بِغُرُورٍ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَا أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَنْ تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ وَأَقُلْ لَكُمَا إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُبِينٌ (22) قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ (23) অর্থাৎ, হেআদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে প্রবেশ কর। অতঃপর সেখান থেকে যা ইচ্ছা খাও, তবে ঐ বৃক্ষের পাশে যেয়ো না। তাহলে তোমরা গোনাহগার হয়ে যাবে। অতঃপর শয়তান উভয়কেপ্ররোচিত করল যাতে তাদের গোপন অংগসমুহ প্রকাশিত হয়। সে বলল: তোমরা উভয়ে ফেরেশতাকিংবা চিরকাল জান্নাতে বসবাস কারী হয়ে যাবে এ জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে এ গাছেরনিকটবর্তী হতে নিষেধ করেছেন। সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বলল: অবশ্যই আমি তোমাদেরহিতাকাংখী। অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে সম্মত করে ফেলল। অনন্তর, যখন তারা ওই গাছথেকে আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান সমূহখুলে গেল এবং তারা বেহেশতের পাতাদিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান ঢাকতে শুরু করলেন। তাদের পালনকর্তা তাদেরকে ডেকে বললেনঃআমি কি তোমাদেরকে ওই গাছের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করি নি? আর আমি কি তোমাদেরকে বলেদেই নি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?
তারা উভয়ে বলল:হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের উপর যুলুম করেছি।যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ না করেন তাহলে, আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্তহয়ে যাব। (সুরা আ‘রাফঃ ১৯-২৩)
উপরোক্ত দু‘টি ঘটনার দিকে যদি আমরা দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তাহলেআমরা অনেক মৌলিক পার্থক্য দেখতে পাব। কুরআন শরীফ বাইবেলের বিপরীত যেখানে দোষারোপকরা হয়েছে আদম ও হাওয়া(আঃ)উভয়কেই। কুরআন শরীফের কোথাও বলা হয় নি যে, হাওয়া (আঃ) আদম (আঃ) কে গাছ থেকে খেতে প্রতারিত করেছেন বা তিনি আদম (আঃ) এর আগেই তা খেয়েছেন।
সুতরাং, কুরআন অনুযায়ী হাওয়া (আঃ) আদম (আঃ) কে প্রতারণা কিংবা বিপথে পরিচালিত করেন নি। আর গর্ভধারণের যন্ত্রণা মায়েদেরউপর আল্লাহ তায়ালার শাস্তি নয়। কুরআন শরীফে উল্লেখিত বর্ণণানুযায়ী আল্লাহ তায়ালাকারো অপরাধের কারণে অন্যকে শাস্তি দেন না। অতএব, আদম ও হাওয়া (আঃ) উভয়েই সমান অপরাধকরে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন আর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমাকরে দিয়েছেন।
Leave a comment