আল কুরআন শাশ্বত

আল কুরআন শাশ্বত

আল কুরআন মহান আল্লাহতায়ালা কর্তৃক অবতীর্ণ সর্বশেষ আসমানি কিতাব, যা শেষ নবী মুহাম্মদ সাঃ-এর ওপর সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নাজিল হয়েছিল। সারা বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠী আল কুরআনকে ইসলামী শরিয়তের মূল উৎস হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে এবং মেনে চলার চেষ্টা করে থাকে। আল কুরআন মুসলিম উম্মাহর অপরিবর্তনীয় সংবিধান। এই মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মাধ্যমেই আল্লাহতায়ালা দ্বীন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে রূপদান করেন। এরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন হচ্ছে ইসলাম’ (সূরা আল ইমরান-১৯)। আরো এরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম, আর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম’ (সূরা মায়িদাহ-৩)। মহান আল্লাহতায়ালা শেষ নবী সাঃ-এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে সর্বযুগোপযোগী করে প্রচার করেছেন। যত দিন পৃথিবী থাকবে তত দিন ইসলামের মৌলিক রীতিনীতির কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন প্রয়োজন হবে না। এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করো না কেন তার মীমাংসা আল্লাহর নিকটে রয়েছে’ (সূরা শূরা-১০)। আল কুরআন অপরিবর্তনীয়। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘আপনার প্রতিপালকের বাক্য পূর্ণ সত্য ও সুষম। তাঁর বাক্যের কোনো পরিবর্তনকারী নেই’ (সূরা আনআম-১১৫)। এ আয়াতটিতে আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করেছেন, আল কুরআনের বাক্য শাশ্বত এবং সুষম। এটা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। এমনকি আল্লাহতায়ালা রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘এটা বিশ্ব পালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ। সে যদি আমার নামে কোনো কথা রচনা করত তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা’ (সূরা আল হাক্কাহ ৪৩-৪৬)।

আল কুরআনের আয়াতগুলো যে শুধু শাশ্বত তাই নয়, এটা সুষম এবং এতে কোনো গরমিল নেই। এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা কুরআন আসার পর তা অস্বীকার করে তাদের মধ্যে চিন্তাভাবনার অভাব রয়েছে। এটা অবশ্যই এক সম্মানিত গ্রন্থ। এতে মিথ্যার কোনো প্রভাব নেই সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছনের দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময় প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ (সূরা হা মীম সিজদা ৪০-৪১)।

যদি কেউ আল্লাহতায়ালার শাশ্বত বাণী পরিবর্তন করার ধৃষ্টতা দেখায় তবে তার সম্বন্ধে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহর নিয়ামত পৌঁছে যাওয়ার পর যদি কেউ সে নিয়ামত পরিবর্তিত করে দেয় তবে আল্লাহর আজাব বড় কঠিন’ (সূরা বাকারা-২১১)।

আল কুরআন আংশিকভাবে পরিবর্তন করার কোনো এখতিয়ার আল্লাহতায়ালা কাউকে দেননি। এমনকি রাসূলুল্লাহ সাঃ-কে আয়াত পরিবর্তন করার কোনো এখতিয়ার দেয়া হয়নি।

এরশাদ হয়েছে, ‘বলো একে তো নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তন করা আমার কাজ নয়। আমি কেবল ইহারই অনুসরণ করি যা ওহিযোগে আমার নিকট আসে। আমি যদি স্বীয় পরওয়ারদিগারের নাফরমানি করি তবে কঠিন আজাবের ভয় করি’ (সূরা ইউনুস-১৫)।

একমাত্র কাফের, জালেম এবং ফাসেক ব্যক্তিরাই কুরআনের মধ্যে অসঙ্গতি খুঁজে বের করার মতো ধৃষ্টতা দেখাতে পারে।

আল্লাহতায়ালা আল কুরআনে এরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই কাফের’ (সূরা মায়িদাহ-৪৪)। আরো এরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই জালেম’ (সূরা মায়িদাহ-৪৫)। আরো আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফায়সালা করে না তারাই ফাসেক’ (সূরা মায়িদাহ-৪৭)। আল কুরআনেই আল্লাহতায়ালা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, যারা কুরআন অনুযায়ী হুকুম করে না তারাই কাফের, জালেম ও ফাসেক। কাজেই কুরআনের বাণী পরিবর্তন করার প্রশ্নই ওঠে না।

Leave a comment